এসএসসি পরীক্ষার ভুয়া রুটিন ফেসবুকে

আগের সংবাদ

‘খণ্ডিত জাপা’-আ.লীগ জোট না করার অনুরোধ রওশনের : গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, অবৈধভাবে নেতৃত্ব দখল করেছে কাদের

পরের সংবাদ

অপ্রস্তুত পরিবেশে নতুন শিক্ষাক্রম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পুরো শিক্ষাক্রমে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব ও বিজ্ঞান শিক্ষার সংকোচন স্পষ্ট দৃশ্যমান, শিক্ষাক্রমে বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য এ শিক্ষা নীতি। কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষার সংকোচন করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী কীভাবে সম্ভব? যেখানে বিজ্ঞানবিহীন আগামী কল্পনা করা যায় না, সেখানে বিজ্ঞান শিক্ষা সংকোচিত করা অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই না। বিজ্ঞানের প্রয়োজনকে মানুষ যুগে যুগে ব্যবহার করেছে, বিজ্ঞানের দীর্ঘ অনুশীলনের ফলে আমরা আজ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি এবং একমাত্র বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই পৃথিবীর সব ন্যায়, নীতি, সঠিক, ভুলকে বিচার কিংবা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকোচিত না করে বিজ্ঞান অনুশীলনকে আরো বিস্তার করা প্রয়োজন। অন্যদিকে পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিয়ে আবার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে পর পর তিনটি পাবলিক পরীক্ষা। একদিকে আপনি পরীক্ষা পদ্ধতিকে বাদ দিচ্ছেন, অন্যদিকে টানা পর পর তিনটি বোর্ড পরীক্ষা নিচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কি বৃদ্ধি পাবে না? শিক্ষার্থীদের এতগুলো চাপ মোকাবিলা করার কোনো ব্যবস্থা কি রাখা হয়েছে? শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় শিক্ষার্থীরা এমন পরীক্ষা পদ্ধতির সম্মুখীন হলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অসহায় হয়ে যাবে। আর এ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোচিং বাণিজ্য, গাইড বাণিজ্য ও পরীক্ষার ফি নিয়ে অভিভাবকরা অর্থনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবেন। যা দেখে শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়বে। অর্থনৈতিক আক্রান্তের কথা এ জন্য বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নয়। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আলোচনা সেটা হলো এ শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে? প্রস্তুত করা তো দূরে থাক যেটুকু কাঠামোগতভাবে থাকার নিয়ম রয়েছে, সেটা না থাকার অভিযোগ বারবার পত্রিকার শিরোনাম হয়। মফস্বলের বেশির ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভয়াবহ, শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম সংকট। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের ৬০ শতাংশ নম্বর দেয়া বা মূল্যায়নের সুযোগ দিয়েছে। যা শিক্ষকরা অপব্যবহার করবেন বলে ধারণা করছেন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এমনিতেই শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট, কোচিং না করলে শিক্ষকরা নম্বর দেন না, ভালোভাবে ক্লাসে মূল্যায়ন করেন না। সেখানে শিক্ষকদের কাছে ৬০ শতাংশ নম্বর দেয়া বা মূল্যায়নের সুযোগকে আরো ভালোভাবে কাজে লাগাবেন শিক্ষকরা। অর্থাৎ যারা শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট, কোচিং পড়বে তাদের ৬০ শতাংশ মূল্যায়নের সম্পূর্ণটা দেয়া হবে। আর যারা প্রাইভেট, কোচিং করবে না তাদের এ নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকরা কৃপণতা করবেন। শিক্ষকদের এ অপব্যবহার বা কৃপণতার কথা এ জন্য বলা হচ্ছে কারণ সম্প্রতি আমরা দেখেছি শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে শাহবাগে অনশন ও আন্দোলন করেন, সেই আন্দোলনে শিক্ষকদের অসচ্ছলতা, সংকটের কথা উঠে আসে। যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকেও অনেক কম। তাহলে এ বাস্তবতায় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন কীভাবে করবেন? অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল এসব শিক্ষক তো চাইবেন অধিক উপার্জনের তাগিদে আলাদা প্রাইভেট, কোচিং করতে। এ প্রেক্ষাপটে বলা যায় মূল্যায়ন পদ্ধতির জন্য এখনো শিক্ষকদেরই প্রস্তুত করা হয়নি। সে অবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতির বাস্তবায়ন শিক্ষকদের মধ্যে এর অপব্যবহারের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেবে। সুতরাং সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে শিক্ষাক্রম নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতামত, পরমর্শ নিয়ে, শিক্ষাক্রম নিয়ে আরো ব্যাপক আলোচনা, গবেষণা এবং জনজরিপ করে, শিক্ষাক্রমে সংযোজন, বিয়োজন করে বিজ্ঞানভিত্তিক একই কাঠামো অর্থাৎ এক ধারার শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

মারুফ হাসান ভূঞা : লেখক ও শিক্ষার্থী, ফেনী।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়