ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু কমেছে

আগের সংবাদ

নতুন উত্তাপ ‘১০ ডিসেম্বর’ > মানববন্ধন করবে বিএনপি, ঘরোয়া কর্মসূচি আ.লীগের > অনুমতি ছাড়া করলে ব্যবস্থা : ডিএমপি

পরের সংবাদ

দেশের স্থিতিশীলতার নেই বিকল্প

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের পক্ষের দল বা গোষ্ঠীগুলোর কথাবার্তার ধরন এক পক্ষান্তরে যারা নির্বাচনে যাচ্ছে না বা বর্জন করছে তাদের কথার ধরন আলাদা। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল একরকম, তফসিল ঘোষণার পর সেটি পরিবর্তন হয়েছে। পুরনো মামলায় সাজা ও নতুন নতুন মামলায় কারাবন্দি বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে পার্টি অফিসে আনাগোনা থেমে গেছে। অফিসে লেগেছে তালা। গ্রেপ্তার এড়াতে যেসব নেতাকর্মী বাইরে আছেন তারাও প্রকাশ্যে আসতে ভয় পাচ্ছেন। দলের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন নিরাপদ স্থান থেকে অনলাইনে। নির্বাচনী তফসিল বাতিল, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন নতুনভাবে গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তি- এসব দাবিতে চলছে হরতাল-অবরোধ। প্রতি সপ্তাহের চার দিন অবরোধ এক দিন বিরতি সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি বাদে। আগুন সন্ত্রাসের খবর মেলে প্রায় প্রতিদিনই। বিএনপি-জামায়াতের রেলপথ রাজপথ নৌপথ অবরোধের কর্মসূচিতে নৌপথ স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে দূরপাল্লার বাসগুলো চলছে খুব কম সংখ্যায়। বলা চলে লাগাতার অবরোধে জনজীবন খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তবে যৎসামান্য প্রভাব তো থাকবেই। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অর্থনীতির চাকা ও গতি হারাতে পারে। শোনা যাচ্ছে সরকারের ওপর কীভাবে আরো চাপ সৃষ্টি করা যায় সে জন্য আরো কট্টর কর্মসূচির কথা ভাবছে বিরোধীপক্ষ। বিএনপি-জামায়াতকে কোনো অবস্থাতেই রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না শাসক দল। তবে এই জোটের ছোট ছোট কয়েকটি দলকে রাজপথে দেখা যায় বেশ সরব। হালে আলোচনায় এসেছে কল্যাণ পার্টির জেনারেল ইবরাহিমের নেতৃত্বে কতিপয় দলের জোট ত্যাগ। ইতোপূর্বে বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম তৃণমূল বিএনপি নামে নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং তারা ঘোষণা দিয়েছেন সংসদে বিরোধী দলের আসনে তারাই বসছেন।
রাজপথে সরব রয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা নিরলস চালিয়ে যাচ্ছে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। এরই মধ্যে প্রায়ই শেষ করেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন। দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের এক-চতুর্থাংশ বাদ পড়েছেন মনোনয়ন লাভে। ৭১ জন নতুন মনোনয়ন পেয়েছেন। বল এখন অনেকটাই শাসক দলের কোর্টে। অত্যন্ত হার্ডলাইনে রয়েছে তারা। উন্নয়ন সহযোগী ও বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে।
একটি বিষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে অন্যতম শক্তিশালী দল বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কমিশন নির্বাচন সিডিউল পরিবর্তন করতে এক পায়ে খাড়া। অপরদিকে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আছি বা নেই এমনটা করতে করতেই শেষে নির্বাচনে এলো। তবে দলের পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ দলের ফরম নেননি। অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তা লক্ষ করার মতো। রুটিন ওয়ার্কের বাইরে যাচ্ছে না সরকার। এরই মধ্যে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা পদত্যাগ করেছেন। সরকারের বদলি স্থগিত রয়েছে। এখন এসব কমিশনারের এখতিয়ারভুক্ত।
নির্বাচনকেও আন্দোলনের একটি পন্থা ধরে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে এমন আশা অনেকের। এতে কর্মীদের সক্রিয় রাখা যাবে। কারাবন্দি নেতারাও মাঠে নামার সুযোগ পাবেন। একটি সংসদ বা নির্বাচনের সময় শেষ হয়ে যায়; কিন্তু আন্দোলনের কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকে না। সংসদে থেকে অলআউট আন্দোলন করা সম্ভব।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। রাজনীতিতে সব কথাই শেষ কথা নয়, আবার সব কথাই একমাত্র কথা নয়। সময় পরিস্থিতির কারণে কর্মসূচির এদিক সেদিক হতে পারে, অতীতে এমনটাই দেখা গেছে। দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকার না ডাকলেও সংলাপের নানা ধরনের পথ বা উপায় রয়েছে। শুধু যে সামনাসামনি বসে লাভ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ধরা যাক খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি। সরকার তার সাজা স্থগিত করে জামিনের ব্যবস্থা করেছেন বলা যায় এটিও এক ধরনের কারামুক্তি। তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়নি সরকার। এটা যেমন সত্যি আরো একটি সত্যি এখানে লুকায়িত আছে, সেটি হচ্ছে কোনো না কোনোভাবে সরকারের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। এটি বেগম জিয়ার পরিবারের সঙ্গে সরকারের। এ ছাড়াও বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার চিকিৎসা করার অনুমতিও সরকার দিয়েছে, এ ব্যাপারেও কথা বলেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এসব উদাহরণ সামনে রেখে বিএনপি সরকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংলাপ বা আলোচনা করতে পারে। দেশের মানুষ এবং আমাদের উন্নয়নের সহযোগী বিদেশি বন্ধুরা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চায় দেশে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
আমাদের দেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ির কোনো দেশ নয়, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে উন্নয়নের কাতারে যাবে এই বাংলাদেশ। যার জন্য সবার আগে প্রয়োজন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেটি আসলেই আমাদের দেশবাসীর জন্য অত্যন্ত মঙ্গলজনক হবে। শান্তিপ্রিয় মানুষ চায় ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ। এখানে বছরের পর বছর অস্থিতিশীলতা দাঙ্গা-হাঙ্গামা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। উন্নয়নের জন্য অর্থনীতির চাকাকে আরো গতিশীল করার জন্য দরকার স্থিতিশীলতা। এই মুহূর্তে যার কোনো বিকল্প নেই। এই দেশ জনগণের। তাই জনগণের উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে সব মহলকে। জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের একমাত্র মালিক। যার স্বীকৃতি মেলে আমাদের রক্তমাখা সংবিধানেও।

আবু তাহের মুহাম্মদ : কবি ও সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়