ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু কমেছে

আগের সংবাদ

নতুন উত্তাপ ‘১০ ডিসেম্বর’ > মানববন্ধন করবে বিএনপি, ঘরোয়া কর্মসূচি আ.লীগের > অনুমতি ছাড়া করলে ব্যবস্থা : ডিএমপি

পরের সংবাদ

একটি পাসপোর্টের আত্মকথা-২

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আপনাদের যেমন বলেছিলাম (৪ সেপ্টেম্বর, দৈনিক ভোরের কাগজ), ঠিক তেমন গত ১ জুলাই আমার মৃত্যু হয় অর্থাৎ আমি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাই। কিন্তু গত ৭ সেপ্টেম্বর আমি ই-পাসপোর্ট রূপে পুনর্জন্ম লাভ করি। এবার কিন্তু আমার জন্ম তথা নতুন রূপে আসার পথটা সহজ ছিল না। আমার বাহকের অসচেতনতার কারণেই, আমার জন্ম তথা নতুনরূপে আসাটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।
আপনাদের মনে আছে কিনা, আমি জানি না। আপনাদের বলেছিলাম, আমার বাহকের নাম শাফায়াত করিম (কল্পিত নাম)। আমার বাহকের জন্মতারিখ, তার বাবা-মাসহ তার স্ত্রী সবার নাম আমার পৃষ্ঠায় লেখা আছে। কিন্তু আমার বাহক যখন এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন, তখন তিনি জন্মসনদ দিয়ে আবেদন করেছিলেন। তখনকার সময়ে জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র যে কোনো একটা ডকুমেন্ট থাকলেই এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যেত।
কিন্তু এখন তো আমি পৃথিবীর সর্বাধুনিক রূপে আপনাদের কাছে এসেছি। তাই সরকার আমার পাতায় দেয়া তথ্যের সঠিকতা নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। আর সচেতন হবেনই না কেন? আমি যখন বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করি, তখন আমার বাহকের মাতৃভূমি আর বাহক যে দেশে প্রবেশ করেন এই দুই দেশের মধ্যে আমিই সেতুবন্ধন করি। আমার সঠিকতা নতুন সেই দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
তাই এখন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের কোনো ব্যক্তির ই-পাসপোর্ট পেতে হলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র কতিপয় ব্যতিক্রম ব্যতীত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমার বাহক যখন আগের আমি তথা-এমআরপি পরিবর্তন করে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন, তখন জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম ছিল শাফায়াত করিম চৌধুরী। অথচ তিনি এমআরপি করেছিলেন জন্মনিবন্ধন দিয়ে, যেখানে তার নাম ছিল শাফায়াত করিম। আসলে আমাদের অসচেতনতার কারণে নিজ নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম কিংবা জন্মতারিখে সরকারের বিভিন্ন নথিতে বিভিন্ন বানানে কিংবা বিভিন্ন তারিখে জন্মতারিখ দেয়া আমাদের দেশের একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশের এই সময়ে আমরাসহ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্মতারিখসহ আমাদের দেয়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সব তথ্য একই রকম হওয়া উচিত। আমার বাহকের নামের তথ্যের গরমিল যখন ধরা পড়ে তখনই তিনি তার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তার দেয়া তথ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে যান। আমার বাহক দেখতে পান মাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেটে তার নাম মো. শাফায়াত করিম চৌধুরী। আসলে এ ধরনের ভুল বেশিরভাগ সময়ই ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয় না, বরং বাহক বা তাদের পরিবারের অসচেতনতার কারণেই এমন সমস্যা দেখা যায়। জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং মাধ্যমিক সার্টিফিকেটে আমার বাহকের নামের ঝঁভভরী, চৎবভরী ভিন্ন হলেও তিনি নিজে জানেন তার প্রকৃত নাম হচ্ছে মো. শাফায়াত করিম চৌধুরী। তাই তিনি ঠিক করলেন এই নামেই তার ই-পাসপোর্ট হবে। এর জন্য প্রথমে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম সংশোধন করার জন্য মনস্থির করলেন। তখন আমার বাহক জানতে পারলেন জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদেয় কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে তার সাপেক্ষে অনলাইন জন্মনিবন্ধনের কপি এবং মাধ্যমিক সার্টিফিকেটের কপির তথ্য একই হতে হবে। তাই আমার বাহক মাধ্যমিক সার্টিফিকেটের নাম অনুযায়ী জন্মনিবন্ধনে তার দেয়া নাম সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন। স্মার্ট বাংলাদেশের এই সময়ে জন্মসনদে কোনো ভুল থাকলে তা ঘরে বসেই পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা যায়। পরিবর্তন বা সংশোধনের জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শাখার ইউজওঝ সফটওয়্যার রয়েছে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব সহজেই জন্মসনদে দেয়া তথ্যের সংশোধন করার জন্য আবেদন করা যায়। জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য সরকারি ফি ১০০ টাকা আর জন্মতারিখ ব্যতীত শুধু নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য সরকারি ফি ৫০ টাকা। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ থেকে জন্মতারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কেননা মানুষের জন্মতারিখ পরিবর্তন হওয়ার কথা নয়। তথাপি ভুলভাবে জন্মসনদে তথ্য ইনপুট দিলে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে জন্মসনদে দেয়া জন্মতারিখ পরিবর্তন করা যায়। আমার বাহক খুব সহজেই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শাখার ইউজওঝ সফটওয়্যার ব্যবহার করে তার জন্মসনদের নাম সংশোধন করেছেন। এখন আমার বাহকের মাধ্যমিক সার্টিফিকেট এবং জন্মসনদে তার নাম হচ্ছে মো. শাফায়াত করিম চৌধুরী।
আগেই বলেছি জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদেয় কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে তার সাপেক্ষে অনলাইন জন্মনিবন্ধনের কপি এবং মাধ্যমিক সার্টিফিকেটের কপির তথ্য একই হতে হবে। যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নেই, তাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধনের কপি দিলেও হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য যেসব বৈধ প্রমাণাদি লাগবে সেগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮-তে পাওয়া যাবে। যা দেখে আমার বাহক অতি সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্রের দেয়া তথ্য সংশোধন করেছেন। এর ফলে আমার বাহকের নাম এখন মাধ্যমিক সার্টিফিকেট, জন্মসনদ আর জাতীয় পরিচয়পত্রে একই রকম হয়েছে।
যেহেতু আগে আমি এমআরপি ছিলাম আর এমআরপি পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যের গরমিল (নাম, পিতা-মাতার নাম, বয়স) রয়েছে তারা নতুন করে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে, জাতীয় পরিচয়পত্রে দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি তার নতুন ই-পাসপোর্ট পাবেন। তাই আমার বাহক সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে খুব সহজেই মো. শাফায়াত করিম চৌধুরী নামে নতুন তথা ই-পাসপোর্ট রূপে আমাকে পেয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বাহকরা একটু সচেতন হলেই আমাদের তথ্য খুব সহজে পরিবর্তন করে নতুন পাসপোর্ট পেতে পারেন। আর এর ফলে সব সরকারি অফিসে আমাদের সব তথ্যাদি একই থাকবে বিধায় ভবিষ্যৎ জীবনে আমাদের বাহকরা অনেক ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে এ কথা নিঃসংকোচে বলা যায়।

আবু নোমান মো. জাকির হোসেন : উপ-পরিচালক, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও
ভিসা অফিস, বরিশাল।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়