বিজিএমইএ নির্বাচন মার্চে

আগের সংবাদ

জাপার আসনে নৌকা প্রত্যাহার! ৩০ থেকে ৩৫ আসন প্রত্যাশা জাতীয় পার্টির > চলছে দেনদরবার

পরের সংবাদ

কী বার্তা পেল জাতীয় পার্টি : গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠক, আসন সমঝোতার আলোচনা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নানা আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যেই ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার পর জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে বৈঠক করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গণভবনে যান জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে তিন নেতা। এ দলে আরো ছিলেন পার্টির কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে কোন কোন আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ- সে বিষয়ে আলোচনা করতেই গণভবনে যান তারা। এছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক বিষয়সহ আগামী নির্বাচন কীভাবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয় এ বৈঠকে।
জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮০টির মতো আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় ৫০টি আসনে। এর মধ্যে এরকম একটি তালিকাও দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে দিয়েছে। তারা আশা করছেন, ৫০টি আসনে হয়তো সমঝোতা হবে না। সেক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৩৫টি আসনে ছাড় চায় তারা। এসব আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ২০টি আসনে ছাড় দেয়ার আভাস দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ বলছে, যারা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, শুধুমাত্র সেসব আসনেই ছাড় দেয়া হতে পারে। এ নিয়ে এখন শুরু হয়েছে চূড়ান্ত আলোচনা।
জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা গতকাল ভোরের কাগজকে জানান, আসন সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা আছে। এখন আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে হয়তো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আরো বড় পরিসরে এ আলোচনা হবে। জাতীয় পার্টি আশা করে আলোচনার মাধ্যমে আসন নিয়ে একটা সুন্দর সমঝোতা হবে।
এদিকে সোমবার ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে সরকারের অনানুষ্ঠানিক দর কষাকষি চলছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের জানান, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের

আলোচনা হচ্ছে। তাদের আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।
ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে যে কোনো সময় আনুষ্ঠানিক আলোচনার অপেক্ষায় তারা। জানতে চাইলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ গতকাল বিকেলে ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা বিষয়ে আলোচনার কথা আছে। তবে সেটা কখন, তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক যেহেতু আলোচনার বিষয়ে কথা বলেছেন, তাহলে নিশ্চয়ই সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে রকম সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমাদের পার্টি থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তার এমন বক্তব্যের পর রাতে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে যান।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এ বিষয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে রাতে গণভবনে যান আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ তিনজন। সেখানে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়া আমাদের আসন সমঝোতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আশা রাখি সমঝোতাও হবে। পরবর্তী সময় আমাদের দলীয় ফোরামে হয়তো আরো আলোচনা হবে। এরপরই বিস্তারিত জানা যাবে।
এর আগে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে মনে হয়েছিল- এবার নির্বাচনে আসন সমঝোতার পথে হাঁটছে না দল দুটি। নিজস্ব সক্ষমতা দেখাতে চায় তারা। আওয়ামী লীগও চায় জাতীয় পার্টি নিজেই শক্তিশালী হোক। জাতীয় পার্টি কয়েকটি বাদে প্রায় তিনশ আসনেই তাদের প্রার্থী দিয়েছে। তবে আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রকাশ্যে তাদের নেতারা স্বীকার না করলেও বাস্তবতা হচ্ছে- সমঝোতা ছাড়া জাতীয় পার্টি কাক্সিক্ষত আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা কম। সেই হিসেবও কষেছেন তারা। তাই সরকারের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে ভেতরে ভেতরে আলোচনা চলছিল বলে জানা গেছে। সরকারি দলও মনে করছিল, আসন সমঝোতা না হলে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে রাখা সম্ভব হবে না। গত রবিবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় পার্টির বিষয়ে বলেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টি কোনো তালিকা পাঠায়নি। সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির নিজেদের প্রমাণ করার মোক্ষম সময় এটা।
এবার নির্বাচনে ২টি বাদে তিনশ আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিও ২৮০টির মতো আসনে এবার দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। তারা সবাই নিজ নিজ এলাকায় মনোনয়ন ফরমও দাখিল করেছে। জাতীয় পার্টির বর্তমান কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকাশ্যে নেতারা যাই বলুক না কেন, জাপার শীর্ষ নেতাদের বিজয়ী হতে হলে আওয়ামী লীগের সমর্থন লাগবেই। এতে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। জাতীয় সংসদেও টানা তৃতীয় বারের মতো প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে দলটি। যদিও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রকাশ্যে বলছেন, আমরা কারো সঙ্গেই কোনো আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা করছি না। জোট নিয়েও ভাবছি না। আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ চাই। ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করবে। সেই সুযোগ দল হিসেবে এখন আমাদের আছে।
তবে জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসনে যদি নৌকারও প্রার্থী থাকে, তাহলে সেটা উভয় দলের জন্যই বিব্রতকর হবে। কাজেই আলোচনার মাধ্যমে জাপার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসনগুলো থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করছেন তারা। এর মধ্যে সেরকম ইঙ্গিতও স্ব স্ব পার্টির হাইকমান্ড থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ২৮০টির মতো আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিলেও সর্বনি¤œ ৫০টি আসনে তারা আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় চাচ্ছে। ৫০টি না হলেও ৩০ থেকে ৩৫টি আসন প্রত্যাশা তাদের। এসব আসনে আওয়ামী লীগ তাদের দলের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেবে, এমনটিই প্রত্যাশা তাদের। তবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে ২০টি আসন ছাড়ের আভাস দিয়েছে বলে দলটির নেতারা বলছেন। সমঝোতা হলে এই ২০টি আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী সরিয়ে নিতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়