পীরেরবাগে ভাঙারির দোকানে বিস্ফোরণে দগ্ধ এক

আগের সংবাদ

কী বার্তা পেল জাতীয় পার্টি : গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠক, আসন সমঝোতার আলোচনা

পরের সংবাদ

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন : কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও লক্ষ্যপূরণে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে সরকার ২০১০ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেই সময়ে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে তা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্যেও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ না হওয়ায় নতুন করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। বার বার সময়সীমা বাড়িয়েও সরকারের শিশুশ্রম মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞায় ৫ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত শিশু ধরা হয়। এর মধ্যে ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুরা সপ্তাহে ১ ঘণ্টা, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশু সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টা এবং ১৪ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করালে তাকে শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের তথ্যমতে, দেশে এখন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৬ হাজার। তাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এদের ১০ লাখ ৬৮ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত। ২০১৩ সালের বিবিএস জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় শিশু শ্রমিক ছিল ১৬ লাখ ৯৮ হাজার। আর ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার। বিবিএসের জরিপে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশুদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের ধরলে দেশে এখন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার। দেশে এখন ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চাইল্ড লেবার ইউনিট যে ৪৩টি খাতকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেই তালিকায় রয়েছে-ডকইয়ার্ডের কারখানা, অ্যালমুনিয়ামজাত কারখানা, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ওয়েল্ডিং, ভলকানাইজিং, মেটাল কারখানার কাজ। আর সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে গৃহকর্ম, শুঁটকি, পথশিশু, ইট-

পাথর বহন, টেইলারিং বা দরজির কাজ এবং বর্জ্য সংগ্রহ ও তা পোড়ানো। মন্ত্রণালয়ের দাবি চামড়া শিল্পে শিশুশ্রম বন্ধ হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে ফিরিয়ে এনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে শিশুশ্রমিকদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে ২০০১ সাল থেকে এই প্রকল্প শুরু হয়। এরই মধ্যে শেষ হযেছে প্রকল্পের ৩য় পর্যায়ের কাজ। চলতি ডিসেম্বর মাসে ৪র্থ পর্যায়ের কাজও শেষ হচ্ছে। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে আসছে সরকারের মেগা প্রকল্প।
প্রকল্পের ৪ পর্যায়ে সরকার ২ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে এখন পর্যন্ত কতজন শিশু আগের কাজে ফিরে যায়নি সেই হিসাব নেই তাদের কাছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

এহসানে এলাহী জানান, প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ রয়েছে। তবে এসব কার্যক্রমের আওতায় এসেও শিশুরা পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে ফিরেছে কিনা- তার সঠিক তথ্য নেই। এর জন্য আলাদা একটি প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রায় শিশুশ্রমিকদের নিয়োগ ও ব্যবহার, শোষণ, পাচার এবং সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের অবসান ঘটানো এবং সব ধরনের শিশুশ্রমের অবসান ঘটানোর।
শিশুশ্রম নিরসন কাজে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি করপোরেশন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত। ২০২২ সালে সরকার আইএলও কনভেনশন ১৩৮ সনদে (ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত) স্বাক্ষর করে। কনভেনশনের নীতিমালা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে। তবে কিছু বিশেষ অবস্থায় তা ১৬ হতে পারে। তবে কাজের ধরন সম্পর্কে জানিয়ে এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করে এক্ষেত্রেও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে শিশুদের নিয়োগ দেয়া যাবে।
সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর পরিচালক ও শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসন শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বৈশ্বিক একটি অঙ্গীকার। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও এসডিজির অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময়সীমা হচ্ছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু বাংলাদেশে গত ১০ বছরের ব্যবধানে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। বাস্তবসম্মত দিক বিবেচনায় যদি বলি, বৈশ্বিকভাবেই হয়তো এখানে পুনর্বিবেচনার একটি সুযোগ আছে। এসডিজির ২০৩০ সালকেই যদি আমরা ধরে নেই তাহলে সেই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব।
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতারা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে শিশুদের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে ২০১৮ সালে নীতিমালা হলেও আজ পর্যন্ত কোনো আইন করা সম্ভব হয়নি। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে শিশুশ্রম বন্ধও করতে পারেনি। এখন ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের ঘোষণা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এই শিশুদের পরিবার তাদের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। তাই আর্থিক নিরাপত্তা না পেলে শিশুরা কখনোই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে বেরোতে পারবে না। সরকারের একার পক্ষে কখনোই ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত এবং সম্মিলিত উদ্যোগ। আর সরকারকে বিশদভাবে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যেন শিশুরা কোনোভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত না হতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়