চট্টগ্রাম অফিস : মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে ৮টি আসনে ১৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়। যার বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মনোনয়নপত্রে জমা দেয়া এক শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল এবং ভুয়া ভোটার দেখানোয় বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে তাদের মনোনয়ন বাতিল হয়। এ দিন দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে চট্টগ্রামের মোট ৮টি আসনের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে মনোনয়ন যাচাই করা হয়। এছাড়া বিভাগীয় কমিশন কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) এবং চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনের মনোনয়ন যাচাই করা হয়।
প্রসঙ্গত, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচনী আসনের মোট ভোটারের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। বাতিল হওয়া বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর জমা দেয়া ভোটারের স্বাক্ষর ত্রæটিপূর্ণ হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
সকালে প্রথম দফা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনের জাকের পার্টির প্রার্থী নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী আমিন রসূলের মনোনয়নও বাতিল করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। সবার মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজমের মনোনয়ন বাতিল হয় ভোটার সমর্থকের তথ্য সঠিকভাবে না দেয়ার অভিযোগে।
অন্যদিকে, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মোহম্মদ ইমরান,

দিদারুল আলম এবং বিএনএফ এর প্রার্থী আখতার হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের দুই প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ভোটার-সমর্থকদের ভুল তথ্য দেয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী আসনে ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী চউক এর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর ছালামের মনোনয়ন বাতিল হয়। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাদুল আলম বাচ্চু, বিজয় কুমার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মহিবুর রহমান বুলবুলের মনোনয়নও বাতিল হয়। সব প্রার্থীরই ১ শতাংশ ভোটার সমর্থকের তালিকায় গরমিল খুঁজে পায় নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রাম-৮ আসনের আরেক প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন বাদলের মনোনয়ন ঋণ খেলাপি হওয়ায় বাদ পড়ে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকে মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে মূলত ভোটারের তথ্যে সঠিকভাবে না দেয়ার কারণে। ভোটার সমর্থকের তালিকায় গরমিল ছিল। বাতিল হলেও প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষ যদি তাদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রামে ১৬ আসনে মোট ১৫১ জন মনোনয়ন জমা দেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।