ঢাবি উপাচার্য : বিদেশিরা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায়

আগের সংবাদ

সিগন্যালের অপেক্ষায় তারা : ৮০ থেকে ১০০ আসনে জোট-মিত্রদের ‘ছাড়’ > ১৭ ডিসেম্বরের আগেই সমঝোতা

পরের সংবাদ

সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ‘স্বতন্ত্র’রা : ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে, অন্যদের সরে যেতে হবে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে সবরকম চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সরকারে স্বস্তি থাকলেও বিএনপি ভোটের বাইরে থাকায় কিছুটা চাপও রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ক্ষমতাসীনদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। নির্বাচন যাতে প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হয় সেজন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে অনেক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘ঝুঁকি’ ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। মনোনীত প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে বিভক্তি দেখা দিয়েছে দলে- যা সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলেও মনে করছেন জেলা নেতারা। এ অবস্থায় কেন্দ্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছেন মাঠের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন; আর কারা পারবেন না- এ নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন অনেকে। রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে ৩০০টি আসনে মোট ২ হাজার ৭১৩টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৩২টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯৬৬ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৭৪৭ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেছেন, দল করে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢালাওভাবে ভোটে দাঁড়ালেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের যারা নেতা তারা ‘সাপোর্টিং স্বতন্ত্র ক্যান্ডিডেট’ হতে পারবে, স্বতন্ত্র মানে নৌকার প্রার্থী হারানোর মতো প্রার্থী হতে পারবে না। দলের পদে থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারবে না। তিনটা তিন জিনিস। এমন যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত সিদ্ধান্তÍ আসছে বলেও জানান সাবেক এই সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দল করে স্বতন্ত্র নামে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী ১৬-১৭ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে দল। আওয়ামী লীগ করে যারা নৌকার প্রার্থী পরাজিত করার কৌশল হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল জানান, নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনে ৩২টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৯৬৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৭৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তা হলো- আওয়ামী লীগ ২৯৮টি (পাঁচটি আসনে দুটি করে মনোনয়ন জমা দেয় দলটি), জাতীয় পার্টি ২৮৬টি (১৮টি আসনে দুটি করে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছে দলটি), তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, জাসদ ৯১টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, জাকের পার্টি ২১৮টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩৪টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭টি, গণফ্রন্ট ২৫টি, গণফোরাম ৯টি ও জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ ১টি। এছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১৪২টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ২টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১৩টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৪৭টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২০টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ৬টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি ৬টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১৪টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১৩টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৮টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ বিএমএল ৫টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ ৫৫টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম ৪৯টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭৪৭ জন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচনের মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভোটের মাঠ রয়েছে। আবার অনেক আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীও দুর্বল। এ অবস্থায় অন্য যেসব রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে সেসব প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে একেবারেই অখ্যাত। পাশের বাড়ির লোক চিনেন না এমন লোকও এবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েছেন। জাতীয় পার্টির সব প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা একরকম নয়। তারা এমন অনেক প্রার্থী দিয়েছেন যাদের ভোটের হিসাব হাজারেরও কম। সব মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াতবিহীন এই নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার টানতে বেগ পেতে হতে পারে। এ অবস্থায় সরকার গঠন করতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঠিক রেখে আওয়ামী লীগ চায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠ চষে বেড়াক ফ্রি স্টাইলে। যাতে তারা ভোটার টানতে পারেন। তবে অনেক আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এলাকায় দলাদলি শুরু হয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও অনেক আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট ব্যক্তি যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী না হন সেজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অনেকে তা মেনেছেন আবার কেউ কেউ অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ‘ডামি প্রার্থী’ বলতে আসলে কাদেরকে বুঝিয়েছে তা কারো কাছেই স্পষ্ট নয়। সেজন্য ‘দলের স্বতন্ত্র’ প্রার্থী বেড়েছে। আবার অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে যে সাড়া পাচ্ছেন তাতে তাদের বসে যাওয়ার সম্ভবনা কম। সেক্ষেত্রে নৌকার প্রার্থীদের ঝুঁকি কমছে না বরং বাড়ছে।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তারা তা বাছাই করবেন ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি রবিবার।
প্রসঙ্গত, এর আগে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশ বসেছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়