মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে পরিচয় বদল, ৩০ বছর পর গ্রেপ্তার : কেরানীগঞ্জে বাবা-ছেলে হত্যা

আগের সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নিয়ে নমনীয় আ.লীগ : ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি বাড়ানো প্রধান টার্গেট > সরকার চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

পরের সংবাদ

সিগন্যালের অপেক্ষায় তারা : ৮০ থেকে ১০০ আসনে জোট-মিত্রদের ‘ছাড়’ > ১৭ ডিসেম্বরের আগেই সমঝোতা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দলের শরিক, নির্বাচনে আসা নিবন্ধিত একাধিক রাজনৈতিক দল এবং বিএনপি থেকে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন কিংবা দলীয় প্রতীক পাবেন কিনা- তার চূড়ান্ত ফায়সালা এখনো হয়নি। এ বিষয়ে ‘সিগন্যাল’র অপেক্ষায় আছেন ৮০ থেকে ১শটি আসনের প্রার্থীরা। বিশেষ করে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিনেও তারা পাননি কোনো নির্দেশনা। প্রার্থীদের কেউ কেউ চিন্তিত-হতাশ হলেও আশা ছাড়ছেন না তাদের অনেকেই। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বরের আগেই আসনের বিষয়টি সমাধান করা হবে। জোট সঙ্গী ও মিত্রদের আশা, এর মধ্যেই সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্রমতে, আসন সমঝোতা নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চান না হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে অনেক হিসাব-নিকাশ আছে। তিনটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। প্রথমত. নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক করা, দ্বিতীয়ত. দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করা, তৃতীয়ত. জোট শরিক ও মিত্রদের সন্তুষ্ট রাখা- এসব বিষয় মাথায় রেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগপ্রধান।
এদিকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্ন আসবে কেন? সমঝোতা নয়, দলটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায়। তাহলেই জাতীয় পার্টি বড় বিজয় পাবে বলে আশা দলটির। এমনকি সরকারও গঠন করার সুযোগের কথা বলছেন দলটির নেতারা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতার প্রসঙ্গ আসবে কেন? আমরা কারো সঙ্গে কোনো সমঝোতা করে নির্বাচনে যাচ্ছি না। নিজেদের ওপর আস্থা রেখেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। প্রায় সব আসনেই আমরা জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিয়েছি। আমরা একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চাই। যদি মানুষ ভোট দিতে পারে, তাহলে বিশাল জনসমর্থন নিয়ে আমরাই সরকার গঠন করব। এখানে সমঝোতার কিছু নেই। তাছাড়া এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কারো কোনো কথা হয়নি।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ ধরনের কথা বলা হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন। বিএনপি অংশ নিলেও জাতীয় পার্টিকে কোথাও জিততে হলে সেই আসনে প্রয়োজন হবে আওয়ামী লীগের সমর্থন কিংবা আসন ছাড়। অতীতের কয়েকটি নির্বাচনের চিত্র তাই বলে। নবম, দশম ও একাদশ

জাতীয় নির্বাচনে দেখা গেছে, যেসব আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছিল, সেসব আসনে আওয়ামী লীগ নৌকার কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের ভোট পেয়েছিল জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলটি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী দলের জায়গা নিতে পারে জাতীয় পার্টি। সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের এ জোট মিত্রকে এবারো বিরোধী দলের আসনেই দেখা যাবে। বেশ কয়েকটি আসনে তাদের প্রার্থীরা যেন বিজয়ী হয়ে আসতে পারে, সেজন্য একটা সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জাতীয় পার্টি সূত্রেও পাওয়া গেছে এমন আভাস। দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ছাড়া জাতীয় পার্টির বিজয় খুব একটা সহজ হবে না।
আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া নির্বাচনে বিজয় হওয়া অনেকটা চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। বিগত তিনটি নির্বাচনে এই জোটের কয়েকটি দল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন। এসব দলের নিজস্ব প্রতীক থাকলেও নির্বাচনে সেই প্রতীক তারা ব্যাবহার করেন না। এবারো এসব শরিক নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবেন বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। মনোনয়ন ফরম দাখিলও করেছেন তারা। যদিও আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছ থেকে এখনো তারা কোনো সিগন্যাল পাননি। অপেক্ষা করছেন ১৭ ডিসেম্বরের। সেদিন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। জোটের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর মতে, বিগত নির্বাচনগুলোর মতো এবারো তারা জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। সেই সিদ্ধান্তই বহাল আছে। তবে আসন সমঝোতার বিষয়টি জোটনেত্রী শেখ হাসিনা সমাধান করবেন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে জোটের বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।
একই অবস্থায় আছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরাও। বিগত নির্বাচনগুলোতে জোট শরিকদের আসনে দলের কোনো প্রার্র্থী না দিলেও এবারই দুটি বাদে সব আসনেই দলীয় প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোট, মিত্র, স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে দলীয় সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হয় কিনা, সেই চিন্তায় আছেন তারা। কেননা দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর মধ্যে জোট সঙ্গীদের বিষয়ে আসন সমঝোতার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বলেছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যে আমরা অবজার্ভ করব, মনিটর করব, অ্যাডজাস্ট করব, অ্যাকোমোডেট করব। যেখানে যেটা প্রয়োজন, সেটা আমরা করব। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টাও এরকম এবং ডামি ক্যান্ডিডেটের ব্যাপারেও বিষয়টা এরকম। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
দলের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যে অনেকটা দোটানায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। কেননা দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জোট শরিকদের আসনে। এসব আসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার ঢাকা-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমকে। জাপার কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে। রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবার প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-১৭ ও রংপুর-৩ আসনে। এই আসন দুটিতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলকে। জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে আব্দুল কাহার আকন্দকে। জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ এ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের নির্বাচনে আসনে (ফেনী-১) আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার আসন রাজশাহী-২ এ নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজীবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর আসন চট্টগ্রাম-২ এ এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে খাদিজাতুল আনোয়ারকে।
এছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়া তৃণমুল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দলটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীক। আরেকটি রাজনৈতিক দল বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাফর। যিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তিনি ফরিদপুর-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। বিএনপির আলোচিত নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছেন নাসিরুল ইসলাম খানকে। এছাড়া জাতীয় পার্টির চাওয়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি আসন।
জানা গেছে আসন সমঝোতা হলে এসব আসনে আওয়ামী লীগ যাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তাদের শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হতে পারে। দলের বৃহৎ স্বার্থে তাদের সেটা মেনে নিতেও হতে পারে বলে এর মধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে তাদের তা জানানোও হয়েছে। যদিও এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্যই করছেন না নৌকার প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এ বিষয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রায় সব আসনেই নৌকার প্রার্থী দিয়েছে। জোটসহ অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি হবে, ১৭ ডিসেম্বরের আগেই স্পষ্ট হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়