রুহুল কবির রিজভী : দলছুটদের দিয়ে নতুন দল বানাচ্ছে সরকার

আগের সংবাদ

তারুণ্য অভিজ্ঞতা স্বচ্ছতা : ২৯৮ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

নতুন রক্ত সঞ্চালনে গুরুত্ব : তিনশ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত, আজ ঘোষণা > আসছেন শতাধিক নতুন মুখ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য আজ ৩০০ আসনে প্রার্থীদের হাতে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ তুলে দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে মনোনয়ন ঘিরে চমক তৈরি হয়েছে। আরো চমকের আশা করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। নতুন-পুরনোর মিশেলেই এবারের মনোনয়ন। একদিকে নতুন নেতৃত্ব তৈরি, অন্যদিকে পুরনো নেতৃত্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে এগিয়ে নেবে আওয়ামী লীগ। দলে নতুন রক্ত সঞ্চালনের গতিকে প্রবাহিত করার জন্যই দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা এবার একাধিক নিজস্ব জরিপের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা যেমন মূল্যায়িত হবেন; তেমনি প্রাধান্য পাবে তরুণ নেতৃত্ব, যাদের চোখে খেলা করছে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন, সেসব তরুণ নেতৃত্বকে তুলে আনা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি স্মার্ট বাংলাদেশের কাণ্ডারী হতে কারা এবারের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন- তাদের নাম ঘোষণা হবে আজ। ফলে সবার নজর এখন গণভবনে। সন্ধ্যা ছয়টায় গণভবনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর রাত ৮টায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর আগে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়ে পুরো ৩০০ আসনের প্রার্থীই চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখন শুধু নাম ঘোষণার পালা।
এদিকে এবারের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ছাড়াও সাবেক আমলা, ক্রিকেটার, ফুটবলার, অভিনেত্রী, সাংবাদিকরাও রয়েছেন। তবে দলের সূত্র অনুযায়ী, মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রার্থীদেরই প্রাধান্য থাকবে। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে নৌকায় নতুন মুখ যুক্ত হয়েছিলেন ৪৯ জন। বাদ পড়াদের তালিকায় ছিলেন ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাননি মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ ৫৬ জন। দ্বাদশ নির্বাচনে বাদ পড়াদের তালিকায় রয়েছেন শতাধিক। এক্ষেত্রে সাবেক সংসদ সদস্য নয় বরং নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছেন। দ্বাদশ সংসদে তারকাদের সংখ্যাও বাড়বে। তরুণ নেতৃত্বের প্রতি গুরুত্বের পাশাপাশি দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা গুরুত্ব পাবেন। বার্ধক্য ছাড়াও

বিতর্কিত, দলের আদর্শ পরিপন্থি কাজ, দলীয় সুনাম বিনষ্টকারীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। সুসময়ের কোকিলরা যাতে আর নৌকার ভরাডুবি না করতে পারে, সেজন্য মনোনয়নের আগেই শর্তজুড়ে দিয়েছিল দলটি। ফলে এদিক থেকে কঠোর ও অনমনীয় অবস্থানে রয়েছেন দলীয়প্রধান। এদিকে যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা রাখার জন্য বিশেষ বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর বিভিন্ন আসনে কোন্দল, মান-অভিমান, দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যেই বিভাগীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দুই জন সাংগঠনিক সম্পাদক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এবার বিদ্রোহীদের প্রতি কিছুটা নমনীয় আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির নির্বাচনে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণ ও জমজমাট করবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিভিন্ন ছোট ছোট জোটের প্রার্থীরা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই নৌকার দলছুট প্রার্থী। ফলে হার-জিতে কোনো প্রভাব পড়বে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। এছাড়া নির্বাচনের পর শর্ত সাপেক্ষে বিদ্রোহীদের ঘরে ফেরার রেওয়াজ বেশ পুরনো কৌশল।
নতুন-পুরাতন মিলিয়েই মনোনয়ন দিচ্ছি : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের মাথায় রয়েছে, কাকে দিলে আমাদের দল নির্বাচনে জনগণের কাছে অধিকতর যোগ্য হবে, তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। যেসব সংসদীয় আসনে পুরনো নেতারা ‘গ্রহণযোগ্যতা’ হারিয়েছে, সেসব আসনে প্রার্থী দিতে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। ইলেক্টেবল ক্যান্ডিডেট যারা, সেটাই হচ্ছে বিচারের মানদণ্ড। এদিকে আজ গণভবনে সন্ধ্যা ৬টায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মনোনয়নপত্রের রিসিভড কপি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন ফরমের ফটোকপিসহ যথাসময়ে মতবিনিময়ে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ভোরের কাগজকে বলেন, এবার মনোনয়ন চূড়ান্তের ক্ষেত্রে পুরাতনদের সঙ্গে নতুনদেরও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এটা সবসময়ই হয়ে থাকে। এবারো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের স্পষ্ট করেই বলেছেন, তরুণদের মধ্যে যাদের জনপ্রিয়তা আছে, যারা যোগ্য, বিজয়ী হয়ে আসতে পারবে- তাদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মনোনয়ন চূড়ান্তের আগে আমাদের দলীয়প্রধান একাধিক জরিপ করেছেন। জরিপে যাদের অবস্থান ভালো, ঠিত তাদেরই বেছে নিয়েছেন। এদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাই সবচেয়ে বেশি। কারণ যারা ছাত্র রাজনীতি করেন, তাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণের একটা সংযোগ থাকে। ছাত্র নেতাদের অনেকেই নানা জনকল্যাণ ও সমাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। জরিপে সে বিষয়গুলোও উঠে আসে। এজন্যই তরুণ বিশেষ করে সাবেক ছাত্র নেতাদের মনোনয়নে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়