২০১৩ সালের নাশকতা : ২ মামলায় বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর দণ্ড

আগের সংবাদ

কত আসন ছাড়বে আ.লীগ : সর্বোচ্চ ৮০টি আসনে ছাড় > ৩০ আসন পাবে ১৪ দল > চূড়ান্ত সমঝোতা শেষমুহূর্তে

পরের সংবাদ

এ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় কী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে নতুন এক আজব আসক্তির নাম মোবাইল আসক্তি। এই আসক্তি মাদকাসক্তির চেয়েও অনেক ভয়াবহ। একজন শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হলেও আজ এই ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোন। কিছুদিন আগেও তরুণ-তরুণীরা বিকাল বেলা শরীরচর্চা করত, বিভিন্ন খেলাধুলা করত, একে-অপরের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠত। কিন্তু আজ সবাই এই শৃঙ্খলার বাইরে। কেউ কারো সঙ্গে মিশে না, কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না; সবার দৃষ্টি মোবাইলের স্ক্রিনে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও দেখা যায় যখন সবাই ফ্রি থাকেন তখন সবাই সবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত।
এখন এই আসক্তিতে সবাই এমনভাবে আসক্ত যে, প্রভাতে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম কাজ মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করা। এটা না করা পর্যন্ত যেন মানসিক অশান্তিতে থাকে সবাই। সারাদিন তো ফোন কাছে থাকছেই। যদি ১০ মিনিট মোবাইল থেকে দূরে থাকে কেউ তখন তার মনে হচ্ছে কত বছর যেন সে মোবাইলের কাছে যায় না। করোনার মধ্যে অনলাইন ক্লাস হওয়ায় এই আসক্তির মাত্রা সবচেয়ে বেশি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু- এসব থাকার সঙ্গে আরো কয়েকটি বিষয় অ্যাড হয়েছে যেগুলো হচ্ছে ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্লাস অব ক্লানসহ বিভিন্ন অনলাইন গেম। এসব বিষয় এই আসক্তিকে গাঢ় করছে দিন দিন। আর যুবকরা এই আসক্তিতে মেতে ওঠে ধ্বংস করছে নিজের জীবন।
আমার নিজের চোখে দেখা বেশ কয়েকজন যুবক, যারা করোনার প্রাদুর্ভাবের আগেও অনেক ভালো ছাত্র ছিল। কিন্তু করোনার ছুটিতে অনলাইন আসক্তি তাদের এমনভাবে পেয়ে বসেছিল যে, তারা এখন কেউ অটোচালক, কেউ বাসের হেল্পার আবার কেউ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। পড়াশোনার ব্যবস্থা এখন এমন হয়ে গেছে যে ছয় ঘণ্টা মোবাইল চলার পরে মনে হলো পড়তে বসব। ছয় ঘণ্টা পরে পড়তে বসে শব্দের অর্থ জানার জন্য আবার মোবাইলের দরকার হচ্ছে।
বর্তমানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে অধিকাংশ তরুণ চশমা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে চোখের বিভিন্ন সমস্যার কারণে। এই মাত্র এক থেকে দুই যুগ আগে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ/বৃদ্ধাদেরও চশমার দরকার ছিল না। এখন ১৫/১৮ বছর থেকেই ব্যবহার করতে হচ্ছে চশমা। কেননা মোবাইলের রঙিন ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিনিয়ত চোখে গিয়ে চোখ নষ্ট করে ফেলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা যেমন- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ব্যথায় তরুণ-তরুণীরা ভুগছে। এই মোবাইল আসক্তির ভয়াবহ থাবায় এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে বেশি। যেমন, কয়েক বছর আগে প্রত্যেক ভালো ভালো শিক্ষার্থীর কাছে থাকত বাংলা এবং ইংরেজি অভিধান। কেনো শব্দ সম্পর্কে অজানা হলে তারা সেই অভিধানের বইয়ে খুঁজে খুঁজে বের করে পড়ত। কিন্তু আজ কোনো সমস্যা হলেই গুগল করছে আর গুগল তাদের রেডিমেড উত্তর বলে দিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে শেখার প্রবণতা হারিয়ে যাচ্ছে, ফলে এই রেডিমেড শেখা উত্তর দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। এ ছাড়া জাতিকে মেধাশূন্য করার আরো একটি নতুন পদ্ধতির আবির্ভাব হয়েছে সেটা হলো ‘চ্যাট জিটিপি’। এই সাইটে যে কোনো জিনিস সম্পর্কে লিখতে বলা হলে লিখে দিচ্ছে। স্যারেরা ক্লাসে অ্যাসাইনমেন্ট শেখার জন্য নিজে নিজে তৈরি করার জন্য দিলেও শিক্ষার্থীরা আজ চ্যাট জিটিপি ব্যবহার করে এসব অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান করে জমা দিচ্ছে। এই ভয়াবহ পদ্ধতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ না করলে অচিরেই জাতি জ্ঞান শূন্যতায় ভুগবে।
এই আসক্তি রোধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে পরিবার। কিন্তু আজ পরিবারের সদস্যরাও এই আসক্তিতে আসক্ত। সে জন্য তারা তাদের ছেলেমেয়েদের এসব বিষয়ে কড়া শাসন করতে পারে না। কারণ সেই চিন্তাধারা মোবাইল আসক্তি পরিবারের সদস্যদেরও নষ্ট করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই আমাদের পরিবারের সব অভিভাবককে আগে সচেতন হতে হবে, এরপর সন্তানদের সচেতন করতে হবে। নতুবা যদি এভাবে লাগামহীন চলতে থাকে তাহলে এই আসক্তির কামড়ের বিষের প্রতিক্রিয়া অভিভাবক, পরিবার ও সন্তান এমনকি পুরো জাতি সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে জাতি হবে মূর্খ, বর্বর, জাহিলিয়াতের যুগে নেমে আসবে। তাই আমাদের সবার উচিত এ বিষয়ে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পরিবার, সমাজ, কিংবা দেশের সবাইকে সচেতন করা।

মো. আব্দুল ওহাব : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়