ডিবিতে অভিনেত্রী তিশার অভিযোগ : লুবাবার অভিযোগকারী আটক

আগের সংবাদ

সমঝোতা হলে পুনঃতফসিল : সুযোগ আছে সংবিধানে > আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের > সিদ্ধান্ত নিতে হবে ১০ দিনের মধ্যেই

পরের সংবাদ

ইসরায়েলি আগ্রাসনে সরকার লেবার পার্টি এবং জনগণ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব মানবতার চোখ এখন গাজার দিকে। বিশ্ব মোড়লদের শ্যোন দৃষ্টিও গাজার দিকে। গাজায় এখন মানবতা ভূলুণ্ঠিত। এখানে ইসরায়েলি সেনারা মানুষ মারছে। হত্যা করছে শিশু আর নারীদের। নিরপরাধ মানুষ প্রতিদিন মরছে। মরছে প্রতিমুহূর্তে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় বোমা হামলা করছে নেতানিয়াহুর সেনারা। তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে জনপদ, গুঁড়িয়ে দিচ্ছে হাসপাতাল। রক্তের গোসল করাচ্ছে তারা শিশুদের, গুলিবিদ্ধ শিশুদের নেয়া হচ্ছে হাসপাতালে, সেই হাসপাতালও তারা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। কী নির্মম পাশবিকতায় ছেয়ে গেছে সারা গাজা। মসজিদে জ¦লছে আগুনের কুণ্ডলি। হামাসের সেনা খোঁজে খোঁজে এরা এখন স্থলপথে যুদ্ধে নেমেছে। মারছে নিরপরাধ মানুষ। এক মাসের মধ্যে এরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মাঝে অধিকাংশই শিশু।
সারা পৃথিবীর মানুষ ফুঁসে উঠেছে। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন সেখানে সন্ত্রাস দেখছে, দেখছে হামাসের বীভৎসতায় প্রাণ গেছে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলির। আর সেজন্যই নিরপরাধ হাজার হাজার শিশু হত্যায় আমেরিকা দিয়ে যাচ্ছে হত্যার নির্দেশনা। বাইডেনকে অনুসরণ করেই এগোচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোও। গাজা এখন মৃত্যুর উপত্যকা, সেখানে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, চিকিৎসার সামগ্রী নেই, চিকিৎসাকেন্দ্র বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। যেন রক্তপিপাসার পাশবিক উন্মাদনায় মেতে উঠেছে ইসরায়েল এবং পশ্চিমারা।
ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নিয়ে এবং হাজার হাজার মানুষ হত্যার প্রতিবাদের ব্রিটেনে হয়েছে লাখ লাখ মানুষের মিছিল। প্রতিদিন সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করেই মানুষ ফিলিস্তিনের পতাকা উঁচিয়ে ধরছে। সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ মিছিলকারীদের বিরুদ্ধে যায়নি, বরং এ নিয়ে পুলিশের সমালোচনা করলে এর রেশ ধরেই অভিবাসী বংশোদ্ভূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ব্রিটেন ইসরায়েলের পক্ষেই আছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, ‘অভিবাসীবান্ধব’ লেবার পার্টিও অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলের পক্ষে এবং বিরোধীদলীয় লেবার নেতা দৃঢ়ভাবেই বলছেন হামাস নিধনে ইসরায়েলের যুদ্ধ করার অধিকার রাখে। ব্রিটিশ সরকারের মতোই তিনিও বলছেন না যে, গাজায় সাধারণ মানুষের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার প্রয়োজন আছে। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একমাত্র ব্রিটিশ এমপি আফসানা বেগম ছাড়া রোশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিকী, রুপা হক লেবার দলের নেতার সুরেই কথা বলছেন এমনকি সংসদেও। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়, লেবার দলের দুজন শ্যাডো মন্ত্রী (পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত) ইতোমধ্যে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে অর্থাৎ তাদের দলের বাইরে গিয়ে তাদের ছায়া মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। দলের নেতার এই মানবতাবিরোধী পদক্ষেপের জন্য এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বার্নলি কাউন্সিলের লিডার কাউন্সিলার আশরাফিয়াব আনোয়ার পদত্যাগ করেছেন, তার সঙ্গে আরো ১০ জন কাউন্সিলার কাউন্সিলের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। কাউন্সিল লিডার আনোয়ার তার দলের লিডার স্টিয়ার স্টারমারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। দেশের ৬১৮ জন কাউন্সিলরের মাঝে এক জরিপ থেকে জানা গেছে মাত্র ৩৭ শতাংশ কাউন্সিলর লেবার পার্টির বর্তমান অবস্থানকে সমর্থন করে। গত ২৭ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর এ জরিপ চালায় ‘সাভান্তা’ নামের প্রতিষ্ঠান। এ সপ্তাহের শুরুতে অন্তত ৩৩০ জন লেবার কাউন্সিলর পার্টি প্রধানকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবির তোলার জন্য আবেদন করেছেন।
স্বাভাবিকভাবেই তাই লেবার পার্টিতে চলছে এক ঘরোয়া দ্ব›দ্ব। গাজা নিয়ে লেবার লিডার আচরণ করছেন ব্রিটিশ সরকারের মতোই। তার সুরও একই, এমনকি গণমাধ্যমে তাকে কিছুটা বিব্রত মনে হলেও তিনি যে ইসরায়েলের এক অন্ধ সমর্থক তা তিনি প্রমাণ করছেন বারবার।
আগামী বছরই সাধারণ নির্বাচন হবে ব্রিটেনে। লেবার পার্টি কিছুটা হলেও ফুরফুরে মেজাজে ছিল। কনজারভেটিভ পার্টি তথা সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার কারণে আগামীর সরকার লেবার পার্টি গঠন করতে পারে এ এক আভাস মিলছিল। কিন্তু গাজার যুদ্ধ আসায় লেবার নেতার মুখোশ খসে পড়ছে এবং লেবার পার্টির সরকার গঠন করার সেই ফুরফুরে ভাবটাও ফুটো হতে চলেছে। শুধু অভিবাসী সম্প্রদায় নয়, ব্রিটেনের মানবতাকামী লাখ লাখ মানুষ গাজার নারী-শিশুদের হত্যায় ফুঁসে উঠেছে, আর সঙ্গে সঙ্গে লেবার পার্টির প্রতিও যেন একটা বিতৃষ্ণা স্পষ্ট হয়ে উঠছে লেবার সমর্থক অসংখ্য মানুষের।
কেউ কেউ বলে থাকেন, ভোটের রাজনীতির কারণেই বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি-কাউন্সিলররা যুদ্ধ বন্ধের জন্য পার্টির বাইরে গিয়েও কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু এ কথাগুলো ধোপে ঠিকে না। কারণ ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দুজন রাজনীতিবিদ লন্ডন মেয়র সাদিক খান গ্রেটার ম্যানচেস্টার মেয়র এন্ডু বার্নাহাম এবং স্কটিশ লেবার লিডার আনাস সরওয়ার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাতে লেবার লিডার স্যার স্টারমারকে আহ্বান জানাচ্ছেন। ইসরায়েলি আগ্রাসনের শুরুতেই স্কটিশ ফাস্ট মিনিস্টার হামজা ইউসুফ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন, অথচ ভোটে জিতে আসার জন্য তাদের মূল ভিত কারোরই এশিয়াননির্ভর নয়। কিন্তু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিদের মাঝে আফসানা বেগম ছাড়া বাকি তিনজন শুধু দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে স্টারমারের বিপরীতে না গিয়ে তারা বিশ্বের মানবতাকামী মানুষের এমনকি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারদের আবেগের সঙ্গেও একাত্ম হতে পারছেন না।
গাজায় এখনো সন্ত্রাসের গন্ধ পায়নি তারা। তাই শান্তির জন্য নিচ্ছে না কোনো উদ্যোগ। হামাসকে ‘শায়েস্তা’ করতে ওবামা প্রশাসন একসময় শত শত মানুষের প্রাণ সংহারকেই শ্রেয় মনে করেছিল। একই সুরে আমেরিকার স্বার্থকেই সঙ্গে নিয়ে বাইডেনও তো তা-ই মনে করছেন এখন। ব্রিটেনের সরকারও সেই একই পথে, পথ একটাই যেন ইউরোপের। কিন্তু ব্রিটেনের শুধু মুসলমান নয়, নানা বর্ণ আর ধর্মের কয়েক লাখ মানুষ নামছে রাস্তায়, প্রতি সপ্তাহেই। ব্রিটেনের পার্লামেন্টেও এ নিয়ে চাপ আছে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই যেন ব্রিটেনের সরকার এ ব্যাপারে নীরব। জনগণের ট্যাক্সে চলে যে প্রতিষ্ঠান বিবিসি, সেই প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি সেনাদের পক্ষেই কথা বলছে, সে জন্যই ব্রিটেনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভকে পাত্তাই দেয়নি বিবিসি। আরবের মুসলমান নেতারাও যেন মার্কিন ব্রিটিশ আর ইউরোপের নেতাদের আঙুলের দিকে চেয়ে আছে। অথচ এমনকি ইসরায়েলেও সে দেশের মানবতাবাদী এবং বাম ঘরানার মানুষগুলো বিক্ষোভ করছে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে। আমার তো মনে হয়েছিল ইসরায়েলে মনুষ্যত্ব এবং মানবতা দুটিই কবে যে উবে গেছে। কিন্তু দেখা গেছে মানুষই শুধু মানবতার জয়গান গায় সেখানেও। সংখ্যায় অল্প হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য কথা বলে এরা আটকও হচ্ছে। এই মানুষগুলো ছাড়া আর সব ইসরায়েলিই যেন ইহুদি, তা তারা আবারো প্রমাণ করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত সারা পৃথিবীর কাছে।
শুধু তাই নয়, ভারত যেখানে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কেরালা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজানের নেতৃত্বে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বিশাল সমাবেশে ফিলিস্তিনি জনতার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান করা হয়েছে। এবং উগ্র জায়োনিস্ট ইসরায়েলি সরকারের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থনের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।
সত্তর বছরেরও অধিককাল থেকে ইসরায়েলের চলমান সন্ত্রাস একটা জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই নতুন নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব হচ্ছে সময়ে সময়ে, রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক কিংবা এমনকি ধর্মীয় প্রয়োজনে, অথচ ফিলিস্তিনকে মুক্ত করে দেয়া তো দূরের কথা, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে প্রতি নিয়ত। আর তাই তো পৃথিবীর দেশে দেশে আজ উচ্চারিত হোক একই দাবি- বাঁচাও শিশু, বাঁচাও নারী, বাঁচাও মানবতা, মুক্ত হোক ফিলিস্তিন।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়