বিরোধীদের এক করতে তৎপর বিএনপি

আগের সংবাদ

পরিবহন খাতের সর্বনাশ : অবরোধ-হরতালে ৩৭০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সব মিলিয়ে ক্ষতি সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা

পরের সংবাদ

নির্বাচন নিয়ে লু হাওয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি দলই এই তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে ১৫টি দল। বাকি ১২টি দল তফসিলের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেনি। (প্রথম আলো ১৭ নভেম্বর, ২৩)
এই উদ্ধৃতি ধরেই আলোচনায় আসা যাক।
আমরা কি জানি দেশে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪। না, জানি না বা জানতাম না। এর বাইরে অনিবন্ধিত ও পকেটসর্বস্ব রাজনৈতিক দল আছে, যাদের অস্তিত্ব জানা যায় নির্বাচন এলেই। ওই সব দল সম্পর্কে কেউ জানে না, চেনে না। এদের চেনা ও জানা যায় যখন একপেশে নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে থাকে। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অধিকাংশই সেই সব দল ও নেতাদের নাম জানেন বলে মনে হয় না। আর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যেসব দল গঠিত হয়েছে এবং হবে, বিরোধীরা তাদের বলছেন ‘কিংসপার্ট’। অর্থাৎ রাজার ইচ্ছায় গঠিত দল যাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্তিত্ব নেই। প্যাডসর্বস্ব ওই দলগুলো সৃষ্টি ও দল হিসেবে নিবন্ধিত হয় রাজারই ইচ্ছায় এবং ইঙ্গিতে। এদের কোনো কোনো দলকে আদর-সমাদর করে অতিদ্রুত নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। যেমন তৃণমূল বিএনপি। এ দলের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্তিত্ব ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বেঁচে থাকতে আমরা জেনেছি। এরপর হঠাৎই জানলাম এ দলের চেয়ারে আসীন হয়েছেন তার কন্যা। এই তৃণমূল বিএনপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা করেছে। ভবিষ্যতেও এই রকম পার্টিকে নিবন্ধন দেয়া হবে। নির্বাচনে যদি বিএনপি না আসে, তাহলে ওই সব অচেনা-অজানা রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে বিরোধীপক্ষ সাজিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করবে সরকার, তা আমরা বুঝতে পারছি, দেশের আমজনতাও তা জানে। এই জানাজানির ভেতর দিয়েই সময় গড়াবে এবং একটি সাংবিধানিক ধারা রক্ষার নির্বাচনও হবে। সেটা বিএনপি নির্বাচনে এলে হবে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য, আর না এলে হবে একপেশে দায়সারা গোছের নির্বাচন এবং দেশে-বিদেশে অগ্রহণযোগ্য হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আমরা যারা ‘ম্যানগো পিপলস’ আমজনতা, তারা এই নির্বাচন নিয়ে মোটেই ভাবিত নই। কারণ ওই নির্বাচনে আমাদের প্র্যাকটিক্যালি কোনো যোগ বা যুক্ত থাকার সুযোগ নেই। ভোটার জনগণ এখন আর ভোট দিতে না গেলেও পাড়ার ক্ষমতাসীন দলের ভাতিজারা মনের আনন্দে ভোট দিয়ে চাচাদের সম্মান রক্ষা করে।
ভোটার জনগণ এখন সরকারি দলের পকেটের মাল। যখন দরকার হবে তাদের ব্যবহার করা হবে। এটাই হচ্ছে প্রকৃত সত্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের। আমরা টাইরান্ট (কর্তৃত্ববাদী) শাসককেও গণতান্ত্রিক বলে বাহবা দিচ্ছি। কারণ আমরা ওই দলেরই সদস্য বা সুযোগসন্ধানী মানুষ। মানুষ না বলে আমরা তাদের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করতে হয়।
জনগণ নয়, ক্ষমতার জন্য ভোটই আসল। আমরা আমজনতা ৫০-৫২ বছর ধরেই দেখে আসছি রাজনীতিকদের কাছে ভোটারের মূল্য তেমন একটা নেই। তারা বরাবরই ক্ষমতার মসনদের দিকেই তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। এখন সেই ক্ষমতার মধু এতটাই মিষ্টি যে তা ‘রাজনৈতিক চিনিরোগে’ (পলিটিক্যাল ডায়াবেটিস) আক্রান্ত হয়েছে। ফলে রাজনীতিকে সুস্থ ও স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরানো যাচ্ছে না। মূলত এটাই আমাদের মূল সমস্যা, সংকটের জটটি এখানেই নিহিত।

দুই.
এই যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাহলে এর সমাধান কোথায় লুকিয়ে আছে? সংলাপে? সরকারি পক্ষ তো সংলাপে রাজি নয় এখন। তারা চায় বিএনপি নির্বাচনে আসুক। আর বিএনপির নির্বাচনে আসা মানেই হচ্ছে সরকারের লুটপাট ও অবৈধ কাজ, অন্যায় অপরাধগুলোকে বৈধতা দান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অবৈধভাবে ১৫৩ জনকে এমপি নির্বাচিত ঘোষণার বৈধতা পায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়ার মাধ্যমে। সেই নির্বাচনে ১৫০টিরও বেশি আসনে দিনের ভোট আগের রাতেই সম্পন্ন করে তারা বিজয়ী হয়। সেই অন্যায় ও অবৈধ নির্বাচনকে বৈধ করার জন্যই বিএনপিকে আবারো প্রয়োজন সরকারের। তাই তাদের আহ্বান জানাচ্ছে নির্বাচনে আসুন।
‘ন্যাড়া বারে বারে বেলতলায় যায় না’- সেটা ভুলে গেছে সরকারি দল। দুবার বেলতলায় গিয়ে বিএনপি বুঝেছে, যারা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেও লজ্জিত হয় না, যারা নির্বাচনকে নিজেদের দলীয় বিজয়কে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে উদগ্র আগ্রহী, তাদের পক্ষে গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসা সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক পথে ফেরার জন্য একটি রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্রের মিনিমাম নর্মসগুলোর প্রতিষ্ঠা শক্তিশালী করে তোলার কাজটি করতে হয়। সেটা আওয়ামী লীগ করছে না, করবে না। বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয় নেতাকর্মীদের, তা তাদের মধ্যে নেই। ভোটার মানুষের ভোট দেয়ার অধিকারকে নিশ্চিত করতে হয়, সে চিন্তাও তাদের চেতনায় নেই। জনগণের নিরাপত্তা ও ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্র সমতল করে তোলার দায়িত্ব মুখ্যত সরকারের, কিন্তু সেটা আওয়ামী লীগ করে না, করবে না। তাদের নির্ভরতা দিল্লির ওপর। ওবায়দুল কাদের যখন বলেন আমাদের দিল্লি আছে, আমরাও আছি। কেন বলেন? কারণ দিল্লি চায় বাংলাদেশে এই রকম একটি অবৈধ টাইরান্ট সরকার থাকলে তারা তাদের অধীনেই থাকবে। ভূরাজনীতির জটিল ও কুটিল রেনেসাঁয় আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে দিল্লি তার এই বাজারকে রক্ষা করতে চায়। সেই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির সমীকরণে ঢাকাকে অধীনস্থ রাখতে পারলে তার অনেক সুবিধা। গত ১৫ বছরে ভারত যা চেয়েছে, তাই পেয়েছে। হাসিনা বলেছেন, আমি বা আমরা যা দিয়েছি তা ভারত ভুলতে পারবে না কোনোদিন। অর্থাৎ তিনি যে দেশটির আসল শক্তি ও মনোবল ছিল, তাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে এক অধীনস্থ স্বাধীন দেশ নির্মাণ করেছেন। কিন্তু আমরা সেটা সহজে বুঝতে পারি না। কারণ আমাদের রাজনৈতিক চেতনায় এই বোধ প্রগাঢ় যে ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সাহায্যকারী দেশ। ওবায়দুল কাদের যখন বলেন তলে তলে সব ম্যানেজ হয়ে গেছে, তখন আমরা বুঝি তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারত পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, স্যাংশন ভারতের নেতৃত্বের আশাকে অনেকটাই থমকে দিয়েছে। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শঙ্করকে আলোচনায় বসতে হয়। যদিও সেই বৈঠকে ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে পটাতে পারেনি। এমনকি তাদের সঙ্গে দুই দেশের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রীদের সহযোগ সত্ত্বেও বে অব বেঙ্গল, ভারত মহাসাগর এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তার ব্যাপারে একমত হতে পারেনি।
বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ একরকম আর ভারতের আগ্রহ অন্য কারণে। দিল্লি যে ওয়াশিংটনের চাপের বাইরে এসে রাশিয়ার সঙ্গে একটি গাঁটছড়া বেঁধেছে, তা সহ্য করতে রাজি নয় যুক্তরাষ্ট্র। তারা আগে ভেবেছিল যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলায় নকিদারির ভূমিকায় থাকবে ভারত। ভারত উদীয়মান অর্থনীতির এক বড় দেশ হওয়ায়, তারা সব প্রভাবমুক্ত হয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে। পরিস্থিতি এ কারণেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। দিন দিন তা আরো জটিল ও নৃশংসও হয়ে উঠতে পারে। কী কারণে বে অব বেঙ্গলে রাশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ ভিড়েছে? সে কি কেবল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উছিলায় এখানকার রাজনীতিতে পুনরায় ঢোকার জন্য সামরিক ভয় দেখাতে? রাশিয়ার এই ভারতপ্রীতিকে আমাদের জনগণ ভালো চোখে দেখবে না, এটা মনে রাখা উচিত।
দেখেছি নির্বাচনে প্রতিবারই মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম শোকের মাতম আমরা লক্ষ্য করি না। গত অক্টোবরের ২৮ তারিখে বিএনপির মহাসমাবেশের ভেতরে কীভাবে সরকারি দলের হয়ে হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের মাধ্যমে। সেটা জাতি ও আন্তর্জাতিক সমাজ দেখেছে। যেসব সন্ত্রাসী একজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, সরকারি দলের দাবি তারা বিএনপির, আর বিএনপির দাবি তারা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী। সেই পুলিশ যে একজন মানুষ, সেই বোধও নেই সরকারি দলের, নেই বিরোধী দলের মধ্যে। অন্যদিকে একজন পুলিশের হত্যার জন্য সরকারি দলের প্রকাশ্য মাতম দেখে মনে হলো ডাল মে কুচ কালা হায়। এর আগে পুলিশ গুলিতে বিএনপির যে ১৭টি প্রাণ হরণ করেছে, সেই পুলিশি অপরাধের ব্যাপারে কোনো রাও-শব্দ করেনি সরকারি দল। মাতম তো দূরে থাক, তারা যেন নীরবে-নিভৃতে খুশিই হয়েছে। যেন হত্যাকারী পুলিশ বিএনপির ১৭টি কর্মীর প্রাণ হরণের অধিকারী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি সরকারি দল ও আওয়ামী লীগ। এমনকি শোকও প্রকাশ করেনি। সরকারি দলের চোখে বিএনপির ওই ১৭ কর্মী অপরাধী বা অপরাধ করেছিল মিটিং-মিছিল করে। তাই পুলিশ তাদের হত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এই মনোভাবই আমাদের নিষ্ঠুর আচরণ করতে দ্বিধা করে না। যে কোনো স্থাবর সম্পদের চেয়ে একটি মানুষের প্রাণ যে শত-সহস্রগুণ দামি, সেই বোধও হারিয়ে ফেলেছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। ফলে মানুষ হত্যা করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, মানুষকে ইতর হিসেবে বর্ণনা করে, সংসদে দাঁড়িয়ে ‘জানোয়ারদের সঙ্গে কিসের সংলাপ’ বলে বক্তব্য দেয়ার পর জনগণ এই সরকারের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস কি রাখতে পারে? যে রাজনীতিক লজ্জা পায় না, সেই তারাই আবার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ডাকে। আমরা হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। আমাদের বোধ নির্বুদ্ধিতায় জমে গেছে। আমরা সত্য সত্যই ইতরতর প্রাণীতে ফিরে গেছি। আমাদের যে মানবিক বোধের উন্মেষ ঘটেছিল, যার জন্য আমরা মানুষ হিসেবে চিহ্নিত ও চিত্রিত হয়েছিলাম, আজ তা হারিয়ে ফেলেছি।

তিন.
আমি জানি, আওয়ামী নেতারা মনে করিয়ে দেবেন যে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সপরিবারে, নিজ বাড়িতে, ১৯৭৫ সালে, ২১ আগস্টে যারা আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালিয়েছিল শেখ হাসিনার ওপর, তারাও যে মানুষের স্তর থেকে নেমে ইতরতর প্রাণী হয়েছে, সেটাও আমরা জানি। হত্যার রাজনীতি হত্যাকেই ডেকে আনে- এই সত্য কি আমরা ভুলে গেছি? এ দেশে হত্যার রাজনীতির সূচনা হয় পুলিশ ও মিলিশিয়া রক্ষী বাহিনীর হাতে। তারপর ছাত্রলীগের বিদ্রোহী নেতারা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা গণবাহিনী গঠন করে আওয়ামী নেতাদের হত্যার সূচনা করে। এমনকি তারা ঈদের জামাতেও ব্রাশ ফায়ার করে মানুষ হত্যা করে। তারপর স্বয়ং বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আজ কোথায় সিরাজ সিকদার? রিপোর্ট বেরোয় পত্রিকায় সিরাজ সিকদার পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালাতে গেলে পুলিশ তাকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে। এই হত্যার রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকেও রেহাই দেয়নি। তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতা, তারই ক্যাবিনেটের মন্ত্রী মোশতাক আহমদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেনাবাহিনীর কয়েকজন মেজরের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার শিকার হন তিনি। তারপর সেনাবাহিনীর হাতেই হত্যার শিকার হন সামরিক জেনারেল থেকে পাবলিক রাজনীতিক হওয়া রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তারই ধারাহিকতায় জেনারেল মঞ্জুরও সামরিক বাহিনীর হাতেই মৃত্যুর শিকার হন। সেই হত্যার ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি রাজনীতিকরা হুমকি দেন হত্যার, চেষ্টা করেন হত্যার। এই চরম হত্যার চিন্তাই আমাদের রাজনীতিকে গ্রাস করেছে। এই অন্ধকার নির্মম ও রক্তাক্ত পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা হবে না।

চার.
আমরা কি জীবননাশী এই রাজনীতির অবসান চাই? নাকি ক্ষমতার মসনদের পায়া ধরে থাকার চিন্তায় মশগুল থাকব? এর জবাব রাজনীতিকরা দেবেন আশা করি। রাজনৈতিক আদর্শের বিরোধ গণতন্ত্রের বহুমাত্রিক রূপেরই একটি স্রোতধারা। আর গণতান্ত্রিক রাজনীতির থামগুলো বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন। নির্বাহী বিভাগের খবরদারি ও চাপ থেকেই মূলত নির্বাচন কমিশন সুস্থ ও নিরপেক্ষ ভোটের প্রয়োগে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারেন না। যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কোনো রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিনই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে না, হতে পারে না। কিন্তু আজকে তিনিই সেটা মানেন না। এই অন্ধ রাজনৈতিক লোভের টানেল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সব রাজনীতিককে। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। মন থেকে বোধ থেকে শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হবে পরনির্ভরতা- দিল্লি আছে, আমরা আছি।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়