সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই বিএনপির : রেলপথমন্ত্রী

আগের সংবাদ

জোট নাকি মহাজোট? একক ও জোটগত ভোটের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের > জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়

পরের সংবাদ

আগামী নির্বাচনে কাকে বেছে নেবে মানুষ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তফসিল ঘোষণার পর থেকে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। তবে এই উত্তপ্ততার সঙ্গে আমজনতার অংশগ্রহণ নেই বলেই চলে। দেশের রাজনীতি এখন বিশ্ব পরাশক্তির রাজনীতির চালে আক্রান্ত। তাই ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় আসার যারা স্বপ্ন দেখেন তারা এখন বিশ্ব পরাশক্তির নেক নজর পাওয়ার জন্য ব্যস্ত। কেউ আমজনতার রায় পাওয়ার জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছেন না। তারপর যত কিছু হোক এই আমজনতা ছাড়া দেশ চলবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতি দুই শিবিরে বিভক্ত। এই দুটি শিবির আদর্শিক ধারাটা এমন পর্যায়ে এসেছে যে, একটি অপরটির ব্লু এনিমি। ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তির আদর্শে উজ্জীবিত একটি এক প্ল্যাটফর্ম (যদিও এই প্ল্যাটফর্মে কিছু মুক্তিযোদ্ধা আছেন), অন্যটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালনকারী। সুতরাং নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের পর কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে মূলত দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি, অন্যটিতে আওয়ামী লীগ। বিএনপির অংশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটাই ’৭১-এর পরাজিত শক্তির আদর্শ লালনকারী। যদিও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে হাইব্রিড নামক মৌলবাদী একটি চক্র ঢুকে পড়েছে, তবে তাদের মনে যাই থাক মানতে হচ্ছে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃতীয় ধারা আছে বামপন্থিদের। তবে ওটা জনবিচ্ছিন্ন একটি রাজনৈতিক ধারা। এরা নিজেরাই নিজেদের পদ-পদবি, দলের নেতৃত্ব আঁকড়ে ধরে থাকার চেষ্টায় লিপ্ত। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততামূলক কোনো কার্যক্রম এদের নেই। তাই মাঝে মাঝে এদের কর্মকাণ্ড বিএনপির পক্ষেই চলে যায়। ’৯০-পরবর্তী সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট দেশের সরকার পরিচালনা করেছে। কে ভালো কে মন্দ তা জনগণ দ্বারা বিচার হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কারণ বিদেশিদের স্নেহ হস্ত নাকি যার দিকে ঝুলে পড়বে সেই ক্ষমতায় থাকবে। বর্তমান আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেড়েছে আমলাতাত্ত্বিক দৌরাত্ম্য, পুলিশ দলীয়করণ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নানা ধরনের অপকর্ম, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা ধরনের দুর্নীতি। সরকারদলীয় কতিপয় এমপির স্বেচ্ছাচারিতায় দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থবিরতার মুখে। শুধু ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতার অবমূল্যায়নই নয়, দেশের সুস্থ চিন্তার মানুষগুলো সঠিক জায়গায় সঠিক স্থান পাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোতে স্থান করে নিয়েছে হাইব্রিডরা। নানা ধরনের অপরাধ করে এসে এই প্রতারকরা চক্রটি ঢুকে পড়ছে ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গসংগঠনে। এভাবেই দেশের সার্বিক সামাজিক চিত্রটা হয়ে পড়ছে অস্থিতিশীল। ব্যাংক ঋণে এই সরকারের আমলে যে ঋণ অপসংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছে তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত করে তুলেছে। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের প্রভাবে হঠাৎ হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য হয়ে উঠছে গগনচুম্বী। যেমন কাঁচামরিচের দাম ৪০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে হয়ে যাওয়াটা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলছে নিয়োগ, ঠিকাদারি বাণিজ্য, পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ প্রায় সব কার্যক্রম। প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ছোট পুঁজিওয়ালারা হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসা থেকে। এর ফলে বাড়ছে বেকারত্ব। এক শ্রেণির মানুষ রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে, আরেকটি শ্রেণি নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অপরদিকে বিএনপির শাসনামলে চিত্রটা এর ব্যতিক্রম নয়। বিএনপির শাসনামলে ’৭১-এর পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীরা দেশের মন্ত্রী হয়েছেন। যা ৩০ লাখ শহীদের রক্তকে অবমাননা করার শামিল। ’৭১-এর পর এমন সরকার ব্যবস্থা দেখতে হবে তা জাতি আশা করেনি। বাংলা ভাই নামক এক জঙ্গির উত্থান হয় বিএনপির আমলে, এই সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী সরকারের প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করত। বিএনপির সরকারের আমলে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালায়। নিহত হন দেশের বিচারকসহ নিরীহ মানুষ। বোমা হামলার বিষয়টি তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা জানত না, নাকি জেনেও না জানার ভান করেছিল। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট জনসংখ্যা অনুপাতে যে ধর্ম কম সংখ্যক মানুষ পালন করে তাদের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। বিজয়ীদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয় নারীরা। বিএনপি সরকারের আমলে টাকার পাচার হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেও টাকা পাচার হচ্ছে, কানাডার বেগমপাড়া এই সরকারের আমলে টাকা পাচারের খ্যাতি অর্জন করেছে। বিএনপির কথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান লন্ডনে বসবাস করছেন বর্তমান সময়ে। তিনি লন্ডনে কি পেশায় নিয়োজিত তা জানা যায় না। তবে লন্ডনের তার বসবাস করার অর্থের জোগান আসে কোথা থেকে, তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিচ্ছে না দলটি। বিএনপির শাসনামলে হাওয়া ভবনের দুর্নীতির খ্যাতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিএনপির শামনামলে ব্যাংক ঋণে দুর্নীতি বর্তমান সরকারের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে সেই সময়ও প্রভাবশালী মহল কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে, সে সময় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা আর ওই সময় অবলোপন করা হয় ১৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা- সব মিলিয়ে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। বিগত বছরগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে তখনকার সময়ে টাকার মূল্যমান বর্তমান সময়ের চেয়ে একটু বেশি থাকায় টাকার অঙ্কের ঋণের পরিমাণটা কম ছিল। প্রশাসনে দলীয় প্রভাব বিস্তার দুই আমলে ছিল। প্রশাসনকে ব্যবহার করে তৎকালীন সরকার ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো জঘন্যতম ঘটনা ঘটায়। যা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অনুশীলনের জন্য বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। এই সরকারের আমলেও যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে না তা বলা যাবে না। তবে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও তার পরবর্তী জজ মিঞাকে নিয়ে নাটকটি বড়ই বেদনাদায়ক। এই প্রসহনমূলক বিচারটি দেখে দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে। আইনের প্রতি কমেছে সাধারণ মানুষের আস্থা। বর্তমান সরকার ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। সাজাপ্রাপ্তদের একটি আদর্শিক ধারা রাজনীতি অঙ্গনে এখনো বহমান। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিটি সংঘটিত হচ্ছে দিন দিন। কোনো কারণে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় না থাকলে, এই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর পুঞ্জীভূত জিঘাংসার লালসার শিকার হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ। তখন দেখা যাবে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যারা অসাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি চর্চা করেন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী একদিকে, অপরদিকে আওয়ামী লীগ- এই দুই রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে তৃতীয় একটি বলয় সৃষ্টি হচ্ছে না যা ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করে, যার ফলে আওয়ামী লীগের অনেক অনিয়মকেও সমর্থন দিতে হয়, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিকদের। তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হোক অনেকেই চান। তবে তারা যে তৃতীয় শক্তিটির আশা করেন তা ওয়ান-ইলেভেনের মতো। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ পর্যন্ত যে ক’টি সামরিক সরকার এসেছে, এই সামরিক সরকারগুলোর ছত্রছায়ায় ’৭১-এর পরাজিত শক্তিরা পেয়েছে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে আলবদর, আলশামস, রাজাকার তথা ’৭১-এর পরাজিত শক্তির আদর্শিক ধারাটি একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এদের রুখতে হবে।
এদের রুখতে হলে, দেশের রাজনৈতিক প্রশাসনিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে মৌলবাদ চর্চাটা নিষিদ্ধ করতে হবে। ধর্মীয় মৌলবাদ চর্চাটা বর্তমানে খুবই নিখুঁতভাবে হচ্ছে। এই চর্চাটা রুখতে না পারলে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ কখনোই প্রতিষ্ঠা পাবে না।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে আগামী সাধারণ নির্বাচনে সাধারণ জনগণ কাকে সমর্থন করবে তা দেখার বিষয়।

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়