প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
দূর দেশে থেকে দেশের আসল চেহারা দেখতে পাওয়া যাবে, তবে তা ঝাপসা। মাটিতে থেকে তাকে স্পর্শ না করলে কি তার গন্ধ পাওয়া যায়? মাটির গন্ধ বলে দেয় দেশ কতটা ভালো থাকে। বাংলাদেশের যেসব প্রবাসী দেশের চিন্তার নামে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, তারা মূলত ভণ্ড। তাদের চোখে ঠুলি। কারণ আমি দেশে গিয়ে দেখলাম, বহু অঘটনের ভেতরেও মানুষ ভালো আছে।
দেশব্যাপী গণতন্ত্রের নামে যে গণ্ডগোল তার কোনো হিসাব মেলে না। মেলে না এ কারণে, বিএনপির মতো কথিত জনপ্রিয় দলের নেতারা কোথায়? তারা এত মৌসুমি বায়ুর মতো কেন? এই আছে এই নেই। রাজনীতির কথা থাক। বলছি, নানা উৎপাতে মানুষ উন্নয়নের প্রতি আগ্রহহীন হয়ে পড়ায় এত দুর্ভোগ। তাদের নজর কেড়ে নিয়েছে দুঃশাসন। এককেন্দ্রিক বাস্তবতায় মানুষ আপন-পর ভুলে গেছে। দুঃসময়ের বন্ধু নেতারা চোখের সামনে ফুলে-ফেঁপে কলাগাছ। সে গাছ ছায়া দেয় না। ফলও দেয় না। মানুষ তাই বিরক্ত। একদিকে উন্নয়নের জোয়ার। রাস্তাঘাট, উড়াল সেতু, মাটির তলায় পথ- সব দৃশ্যমান। অন্যদিকে বাজারে আগুন। সাধারণ মানুষ হিসাব মেলাতে পারে না। এই বাস্তবতা এখন সারা পৃথিবীতে, কিন্তু অন্য দেশের নেতা ও সরকার মুখ সামলে কথা বলে। তারা পরিবেশ সামাল দিতে ব্যস্ত। আমাদের উন্নয়ন কাণ্ডারি শেখ হাসিনা ও কতিপয় নেতা ব্যতীত বাকিরা মুখে জগৎ কাত করলেও বাস্তবে ফকফকা। তারপরও মানুষ নৈরাজ্য চায় না। এই যে আগুনসন্ত্রাস বা মারামারি এর দায় তাদের নিতেই হবে। তাদের জবাবদিহিতা বাড়ছে। কারণ দেশ ও দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা অন্যায়। এমন কিছু ঘটলেও তা নিজেরা সমাধান করাই কাজের কাজ। সেটা না করে বড় বড় মানুষের হাতে-পায়ে ধরার ভেতর শক্তি পাওয়া যায় না। বরং নিজেরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই কথা যারা বোঝে না, তারা কীভাবে দেশ চালাবেন?
অনেক দিন চট্টগ্রামে ছিলাম। গোড়ার দিকে সম্মাননা, সংবর্ধনা, অনুষ্ঠান, আলোচনা, টিভির আয়োজন ও আড্ডায় জমজমাট ছিল সময়।
একটু থিতু হয়ে ঢাকায় যাব, দু-দুটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠানের সবকিছু তৈরি। বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যাওয়া, ফিরিয়ে দেয়া সবকিছু ঠিক। পূজার শেষদিন প্রমাণিত হলো একটি ক্ষুদ্র মশা মানুষের চেয়ে শক্তিশালী। এমনই যে সবকিছু তছনছ করে দিতে যথেষ্ট, গৃহবন্দি করে রাখতে পারে দীর্ঘ সময়। তখন কী করে ফিরব, সেটাই হয়ে উঠল মুখ্য বিষয়। সে শক্তি সঞ্চয় করতে গিয়ে অজস্র প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করা হয়নি। তাদের মনস্তাপ ও কষ্টের জন্য দুঃখিত। এটাও তো সত্য, তাদের সঙ্গে দেখা হলে আমিও ঋদ্ধ হতাম। মন পুলকিত হতো। হয়নি।
এবারের চট্টগ্রাম আমায় এত ভরিয়ে দিয়েছে যে, কারো ঈর্ষাই তা স্পর্শ করতে পারেনি। যে ব্যর্থ হাহাকার ও হিংসার গল্প শুনেছি, তার সঙ্গে মানুষের বাহ্যিক চেহারা বা আচরণ মেলে না। তাতে কী আসে যায়? রাশেদ রউফের মতো অনুজ থাকলে, ওমর কায়সার, ইউসুফ মুহম্মদের মতো বন্ধু থাকলে, জিন্নাহ চৌধুরীর মতো সুহৃদ থাকলে, রাশেদ হাসানের মতো সঙ্গী থাকলে, বোধনের মতো ছায়াবৃক্ষ থাকলে, শুভানুধ্যায়ীরা থাকলে সবকিছু অবলীলায় হয়ে যায়। কবি আসাদ মান্নান নিজের অনুষ্ঠান স্থগিত রেখে গোলাপ নিয়ে এসেছিল। এর চেয়ে বড় পাওয়া নেই। এর নাম বন্ধুত্ব। এর নাম সাহচর্য। যে দিন চলে আসব সে দিন ছিল অবরোধের দিন। এর দুদিন আগে হরতাল ডেকেছিল বিএনপি, জামায়াত। স্কুলছাত্রী নাতনি তুল্য একজন তার মাকে প্রশ্ন করছিল, মা মা হরতাল কী?
এই প্রজন্ম হরতাল, অবরোধ জানত না। চিনত না। মহান রাজনীতি এবার তা চিনিয়ে ছাড়ছে। দেশে যাওয়ার আগে প্রবাসী সুশীল রোগে আমি সরকারের তীব্র সমালোচনা করতে ছাড়িনি। এখনো করি। তবে দেশে গিয়ে মনে হয়েছে কারা চাইছে গণতন্ত্র? কারা এরা? দেশ ও দশের সঙ্গে সম্পর্কহীন এরা গদি ছাড়া কিছুই বোঝে না।
সরকারের ব্যর্থতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারা, লুটপাট ও ক্ষমতার গর্বে দিশাহারা দলের ফাঁক বুঝতে পেরে এরা ঢুকতে পেরেছে। এরা কোনোভাবেই জনপ্রিয় কেউ নয়। বরং জনবিচ্ছিন্ন। কিন্তু এরা পুঁজি করেছে জনমনের ক্ষোভ।
বলাবাহুল্য, এসব সবাই জানেন। সরকারের এত উন্নয়ন কেন কাজে আসছে না, সেটাও সবাই বোঝেন। বলছিলাম ফেরার দিনের কথা। কয়েকটি সিএনজি ভাড়া করে একটিতে মালামাল, একটিতে আমরা, সামনে বাইকে গার্ড এভাবে এয়ারপোর্টে এসেছি। এর নাম আন্দোলন? এই ব্যবস্থার নাম উন্নয়ন? কোথাও মানুষের জন্য কেউ আছে এমনটি মনে হয়নি। ঘাপটি মেরে থাকা, আত্মগোপনে থাকা লোকজন হঠাৎ বাইরে এসে বোমা ফাটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেশ অচল করে দিচ্ছে, এটাও অবাক হওয়ার মতো বৈকি।
রাজনীতিবিমুখ মানুষ কোনোভাবেই ভালো থাকতে পারছে না। এই দেশে হঠাৎ এত গণতন্ত্রপ্রেম আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। ঘরে-বাইরে সমাজে একনায়কতন্ত্রের জয়জয়কার। ‘আমি আমি’ করা সমাজে গণতন্ত্র বলে মাতম ও জীবন অচল করে দেয়া বড়ই তাজ্জবের।
মানতে হবে, মানুষকে কথা বলতে না দেয়া, ভোট দিতে না দেয়া, চাপিয়ে দেয়া দলতন্ত্রের কারণেই উন্নয়ন মার খেয়ে গেছে। উত্তরণের উপায় যে আমেরিকা, ইন্ডিয়া না, সেটাও সবাই বোঝে। নেত্রীকে সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝতে দিলে উত্তরণ সহজ হবে। তাকে কাচের ঘরে নয়, মানুষের মনে রাখতে হবে। এখনো ভরসা তিনি। সবাই বোঝেন শেখ হাসিনা না থাকলে এই দেশ অচল এবং তিনি দেশকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছেন, তার হাল ধরা মূর্খ ও অতিশিক্ষিত চতুরদের দ্বারা অসম্ভব। আমাদের এসব লেখাকে অনেকে তেলবাজি মনে করেন। তা তারা করতেই পারেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো কোনো সুবিধা নিইনি। চাইও না। বরং দলের বিপর্যয় আর গণতন্ত্রহীনতায় মর্মাহত। এমন মনে করার কারণ আছে, এ দেশ আর আগের জায়গায় ফিরতে পারবে না। পারলেও ততদিনে দেরি হয়ে যাবে অনেক। এত সব বোঝার পরও সবাই মিলে কেন যে সত্য আর সঠিক পথে আসে না, কে জানে? কেবল স্তাবকতায় মুক্তি নেই। অন্ধ বিরোধিতায়ও মুক্তি নেই। যুক্তি আর বিশ্বাসের সেতুবন্ধনই পারে জাতিকে মুক্তি দিতে। এই জাতি বহু রক্তশ্রমে স্বাধীন। এ দেশের সব বিপদে মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে পথে। তাদের ভালোবাসা আর ত্যাগে মুক্তি মিলেছে বারবার। এটাই ইতিহাস। এর কোনো ব্যত্যয় নেই। এখনো এতকিছুর পর মানুষই আশ্রয়। উন্নয়ন যেমন মানুষের জন্য, তেমনি সব অর্জনের মূলেও মানুষ। মানুষকে পাশে রাখতেই হবে। যে কোনো দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ মানুষ। সে মানুষরা বঙ্গবন্ধুকন্যার ওপর এখনো আস্থাশীল। এই ভরসাই হয়তো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দেবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।