বাস মালিক সমিতি বিএনপির অবরোধ মানবে না

আগের সংবাদ

দিনক্ষণ ঘোষণার অপেক্ষা : নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে কালই, ভোট জানুয়ারির প্রথমার্ধে

পরের সংবাদ

প্রজন্মের জন্য বিষমুক্ত খাবার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতি বছর দেশে ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে, ২ লাখ লোক কিডনি রোগে, দেড় লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ দিন দিন আমরা টাকা দিয়ে বিষ কিনছি আর আমাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। সামান্য মুনাফার লোভে কিছু উৎপাদক কিংবা ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড আমাদের শুধু হতাশই করছে না, আমাদের সাধারণ জীবনযাপনকে ব্যাহত করছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা কিংবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই ভেজাল খাবারে কীভাবে সয়লাব আমাদের নিত্যপণ্যের জিনিসপত্রের বাজার! বিভিন্ন খাবারে বিশেষ করে শিশু খাদ্যে মেশানো হয় ক্ষতিকারক কাপড়ের রং, হলুদ-মরিচের গুঁড়ায় সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ইটের গুঁড়া! সম্প্রতি ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত কিছু ভেজাল প্রতিরোধ অভিযানে রাজধানীর নামিদামি কিছু রেস্টুরেন্টের খাবারের সঙ্গে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মেশানোর চিত্র ধরা পড়ে। নামিদামি এসব রেস্টুরেন্টের এমন অব্যবস্থাপনা আমাদের সচেতন মহলকে নাড়া দেয়! এসব নামকরা রেস্টুরেন্টের চিত্র যদি এমন হয় তবে অন্যান্য সাধারণ রেস্টুরেন্টের অবস্থা কেমন হতে পারে তা ভাবতে গেলে আমাদের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাবে! তাহলে এত টাকা খরচ করে মুখরোচক খাবারের নামে কী খাচ্ছি আমরা?
ভেজাল খাবার গ্রহণ করার জন্য আমাদের জীবনযাত্রায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে। যেহেতু খাদ্য আমাদের মৌলিক চাহিদা, আর এই খাবারে যখন ভেজাল মেশানো হয় তা আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে ক্ষতিকর প্রভাব রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষ ১২-১৫টি জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে! দীর্ঘমেয়াদে যা ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগ সৃষ্টি করে! ভেজাল পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহারে মৃত্যুর হার বাড়াচ্ছে। খাদ্যে ভেজালজনিত কয়েকটি রোগ, বিশেষ করে আমাশয়, পেটের পীড়া, গ্যাস্ট্রিক-আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি ও পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতিটি পরিবারে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা। ঘরে ঘরে এখন মরণব্যাধি ক্যান্সারের রোগী! ছোট ছোট শিশুরা ভুগছে নানাবিধ রোগে! এর পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে যুক্ত হওয়া ভেজাল আর বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য! যা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।
আইন আর তার বাস্তবায়ন পুরোপুরি হয়তো কখনো সম্ভব নয়। আর তাই মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ শাকসবজি, ফল থেকে শুরু করে চাল, তেলসহ অন্যান্য পণ্য যে পুরোপুরি ভেজালমুক্ত হয়ে যাবে সেটা চিন্তা করাও ভুল। সুতরাং ব্যক্তি সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি এক্ষেত্রে। বিশেষ করে শাকসবজি, ফল কিংবা মাছ-মাংসের চাহিদা নিজ থেকে কীভাবে উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে অর্গানিক কৃষি বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে সচেতন মহলে অর্গানিক কৃষি বেশ জনপ্রিয়। উৎপাদিত ফসলকে বিষমুক্ত রাখা আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাই হচ্ছে অর্গানিক কৃষির মূল ভাবনা। প্রত্যেকের উচিত নিজ বাড়ির আঙিনা কিংবা পতিত জমিতে যথা সম্ভব চাষ করা। এতে করে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে পাশাপাশি ভেজালমুক্ত খাবারও গ্রহণ করা যাবে। বাড়ির পাশে পুকুর খনন করে মাছ চাষ কিংবা হাঁস-মুরগির ছোট খামার করলে নিজের ও পরিবারের আমিষের চাহিদ পূরণ হবে, পাশাপাশি ভেজালমুক্ত খাবারের নিশ্চয়তাও পাওয়া যাবে। শহরে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদকৃষি। ছাদে বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়ে কিছুটা হলেও ফলের চাহিদা মেটানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে আইন অনেক কঠোর, তবে এর বাস্তবায়ন খুব কম। বিশেষ করে খাদ্যে ভেজাল কিংবা ওষুধে ভেজাল প্রতিরোধে আইন আছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই বটে। কেউ কেউ পেশি শক্তি ব্যবহার করে ভেজাল কারবারি চালিয়ে যাচ্ছে, যেন সব ওপেন-সিক্রেট হলেও দেখার কেউ নেই! কেউ কেউ তো প্রশাসনের সাজা ভোগ করে পুনরায় ভেজাল কারবারিতে যুক্ত হচ্ছে! তাই নিজেদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই!

কে এম মাসুম বিল্লাহ : লেখক ও ব্যাংকার।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়