ডেঙ্গু পরিস্থিতি : ছুটির দিনে রোগী ও মৃত্যু দুইই কম

আগের সংবাদ

কদর বেড়েছে বোমাবাজদের : ২০১৪-১৫ সালের স্টাইলে আগুন-বোমা, পুরনো সন্ত্রাসীরা সক্রিয়, মাঠে নতুন বোমাবাজ

পরের সংবাদ

স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় লটারি সিস্টেম কতটুকু যৌক্তিক?

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নভেম্বর মাস। সামনে জাতীয় নির্বাচন। যার ফলে চলতি মাসেই বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষ হবে বাচ্চাদের। জানুয়ারিতে সরকারি স্কুলে ভর্তির হিড়িক শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। বাবা-মায়ের প্রচণ্ড টেনশন বাচ্চাকে ভালো একটা স্কুলে দিতে হবে। এই টেনশনে মোটামুটি বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা যে শুরু হয়ে গেছে। কারো কোনো বিশ্রাম নেই। সবাই আরো বেশি টেনশনে যে, বাচ্চাকে ভালো একটা স্কুলে দিতে হবে এবং বাচ্চা আদৌ ভালো স্কুলে চান্স পাবে কিনা?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এখন সরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে যে নিয়মটা অর্থাৎ লটারি সিস্টেমের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। আগে যেখানে আমরা পরীক্ষা দিয়ে তারপরে স্কুলগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতাম। সেখানে এখন লটারি সিস্টেমে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। লটারি সিস্টেমটা কেন করা হয়? সেটা আমি সঠিক জানি না। তবে আমি এই লটারি সিস্টেমটা ব্যক্তিগতভাবে যৌক্তিক মনে করছি না। এই লটারি সিস্টেমটা তুলে ফেলা উচিত।
প্রয়োজনে স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। যদি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে স্কুলের আসন সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু লটারি সিস্টেম থাকা উচিত না। কারণ একটা শিক্ষার্থী হয়তোবা সে অনেক মেধাবী, অনেক ট্যালেন্টেড। যদি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হতো সে ফার্স্ট বা সেকেন্ড হতো। কিন্তু লটারি সিস্টেমের কারণে তার ভাগ্য সহায় হলো না। সে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হতে পারল না। এই ব্যাপারটা তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে ঠিক এমনটাই। এভাবে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী ভাগ্যচক্রে নিয়তির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সরকারি স্কুল বা ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন আরো দেখা যায়, বাবা-মায়ের চোখে-মুখে টেনশনের ছাপ আর বিষণ্নতা। তাদের হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি একটাই, আমার ছেলে বা মেয়েটা পড়াশোনায় অনেক ভালো। কিন্তু লটারিতে সে বা তার ভাগ্য সহায় হবে কিনা? সে তো তারা জানে না।
তাছাড়া এই লটারি সিস্টেমে অনেকটা অনিয়মও চোখে ধরা পড়ে। অনিয়ম বলতে এই ভর্তি সিস্টেমে অনেক ধরনের তদবির হয়ে থাকে, অনেক ধরনের স্বজনপ্রীতি হওয়ারও বিশেষ সুযোগ থাকে। এই অনৈতিক সুবিধাটুকু কিন্তু পর্দার আড়ালে খুবই সূ²ভাবে ঘটে থাকে। এভাবেই উপর মহলের একটা ফোন বা এক টুকরো সুপারিশপত্রের কাছে হাজারো মেধাবীর স্বপ্ন লুটপাট হয়ে আসছে। ভর্তি লটারি হবে, একটু যদি আমার ছেলে বা মেয়েটার কথা বলে রাখেন। এই বলে রাখার সিস্টেম বন্ধ করাটা অতীব জরুরি। এছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই লটারি সিস্টেমটা কিন্তু বাচ্চাদের মধ্যেও এক ধরনের নেতিবাচক মানসিকতার প্রভাব চেপে বসে। সে যদি চিন্তা করে, আমার চান্স পাওয়াটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে। তাহলে সে কতটুকু পড়াশোনা করবে? বা কতটুকু শ্রম দেয়া উচিত তার পড়াশোনার ক্ষেত্রে? এই জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয় যে, এই লটারি সিস্টেমটা তুলে ফেলা উচিত।
সরকারি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় লটারি সিস্টেমের বিকল্পে অন্য কোনো যৌক্তিক পদ্ধতি চালু করতে, আমাদের যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে অথবা যারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে তারা কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারে। লটারি সিস্টেমের পরিবর্তে যদি ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় এবং ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি নেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে কিন্তু মেধার যাচাইটা করার সুযোগ অনেক বেশি থাকে। তবেই প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের দুঃখ লাঘব হবে বলে মনে করি। যদি মনে করেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করানোটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। লটারি সিস্টেমটা যদি সহজ হয়, সে ক্ষেত্রে এটা নিয়ে আরো কিন্তু চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। তাহলে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে সেটা আরো সহজ পদ্ধতিতে নেয়া যায়? সরকারি স্কুল যেগুলো আছে, সেগুলোকে আরো বড় আকারে করা যেতে পারে। এছাড়া আরো কার্যকরী এবং যুগোপযোগী অনেক কিছুই করা যেতে পারে। কিন্তু সরকারি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এমন অযৌক্তিক, অবাঞ্ছিত এবং অপ্রাসঙ্গিক লটারি সিস্টেম বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। অতঃপর এই লটারি সিস্টেম বন্ধ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনা করা উচিত।

এস এম রাহমান জিকু : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়