আগামীকাল স্যাম্বো-কুরাশ প্রতিযোগিতার পর্দা উঠছে

আগের সংবাদ

মাহবুব : হার না মানা সম্প্রদায়ের মানুষ

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে শিল্পের নতুন দুয়ার খুলছে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সভ্যতার ক্রমবিকাশে নদীর ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সভ্যতা যেমন সিন্ধু, মেসোপটেমিয়া ও মিসরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নদীকে কেন্দ্র করেই। আবার অন্যদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে লন্ডন টেমস নদীর তীরে, নিউইয়র্ক হার্ডসন নদীর তীরে, দিল্লি যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। ঠিক তেমনি পাহাড় ঘেরা বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত হয়ে সৌন্দর্যের লীলাভূমির উৎস থেকে যেন তার অপরূপ সৌন্দর্যগুলো বিকিরণ ঘটিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। কথিত আছে একদা এক পাহাড়ি কন্যার কানফুল হারিয়ে গিয়েছিল এই নদীতে। তারই সূত্রে এই স্রোতস্বিনীর নাম কর্ণফুলী। লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে সুদীর্ঘ ৩২০ কিলোমিটার পথ বেয়ে এই নদী শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে বঙ্গোপসাগরে।
এই কর্ণফুলীর একাংশের একপাড়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর যেখানে রয়েছে বন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিভিন্ন কোম্পানির তেল শোধনাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা আর অপর পাড়ে আনোয়ারায় রয়েছে কাফকো, কেইপিজেডসহ কিছু শিল্পকারখানা। শুধু যোগাযোগব্যবস্থার অনুন্নয়নের কারণে এত বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের দুই রকম পরিচয় ছিল। গত ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননন্দিত জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক পদক্ষেপের আওতায় তার হাত ধরে সদ্য উদ্বোধনকৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যেন আবার দুই পাড়ের জনগণের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সারাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে দিল এবং যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম এই টানেল চট্টগ্রামে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক সৃষ্টিশীল পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক মহল।
বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্পের অন্যতম কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে আরো অনেক নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে হাজার হাজার যুবক যুবতীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বেকারত্ব নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মানও হবে উন্নত।
এর মাধ্যমে বন্দর সম্প্রসারণ, আনোয়ারায় আরো নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মাতারবাড়ী ও বাঁশখালী গন্ডামারা পাওয়ার প্লান্ট, মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর, টেকনাফ স্থলবন্দরকে যুক্ত করে বিশাল অর্থনৈতিক নেটওয়ার্কের দ্বার উন্মোচিত হয়ে গেল। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত গড়ে উঠবে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ার পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের সুষ্ঠু কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে ও সঙ্গে সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তে প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে পূর্ব প্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সহজ হবে। এতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধিসহ উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা তৈরি করবে এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। বদলে যাবে বীরপ্রসবিনী চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য এলাকাসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজার। স্বপ্নের এই টানেল বাস্তবে রূপান্তরের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউন। এখন থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজারমুখী গাড়িগুলো বন্দর নগরীর মূল শহরে প্রবেশ না করে সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারবে। ফলে চট্টগ্রাম মূল শহরে যানবাহনের চাপ কমে গিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থায় একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পরাভূত করার অপশক্তির সব অপকৌশল ইতোমধ্যেই নিষ্প্রভ হয়েছে। জাতির পিতার রক্তের উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। পরিশেষে সেই উন্নয়নের সহযাত্রী হিসেবে প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে শরিক হওয়ার মাধ্যমে এদেশ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় স্থান লাভ করুক আমি সবার কাছে এই প্রত্যাশাটুকু রাখছি।

সঞ্জয় চৌধুরী : শিক্ষক ও লেখক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়