আগামীকাল স্যাম্বো-কুরাশ প্রতিযোগিতার পর্দা উঠছে

আগের সংবাদ

মাহবুব : হার না মানা সম্প্রদায়ের মানুষ

পরের সংবাদ

উত্তরবঙ্গে মরা কার্তিক যেন আর না আসে!

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলাকে একসময় মানুষ চিনত মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবে। চিরাচরিত কাল থেকে আশ্বিন-কার্তিকে ওইসব অঞ্চলে কোনো ধরনের কাজ থাকত না। আবার বন্যাকবলিত এলাকা হওয়ায় আমন সেচের ওপর প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তেমন নির্ভরও করতে পারত না। ফলে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের আয়-রোজগার। মানুষসহ গবাদি পশুকেও না খেয়ে থাকতে হয় দিনের পর দিন। উত্তরাঞ্চলকে বলা হয় বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের খাদ্যের জোগান হয় উত্তরাঞ্চলের ভূমি থেকে। একটা সময় এ অঞ্চলের কৃষিনির্ভর ও ভূমিকেন্দ্রিক মানুষের শস্যের কিংবা কর্মের বিকল্পের বড় অভাব ছিল। কর্মের বিকল্পের অভাব এখনো বর্তমান, কিন্তু শস্যের বিকল্প ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন মৌসুমে উৎপাদনশীল শস্য আবিষ্কারের কারণে কৃষিনির্ভর মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।
বিশ্বজুড়ে চলছে বৈশ্বিক মন্দা। অর্থনীতির সমস্ত সূচকই বর্তমানে স্থবিরতাময়। তাই এখন শুধু কৃষির ওপর নির্ভর করা ছাড়া গ্রাম-বাংলার মানুষের বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পুনঃপুন বন্যার ভয়াল গ্রাস ও উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে আমন খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের অনেক আবাদি জমি পড়ে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ বছর ভরা আশ্বিন-কার্তিকেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার কারণে শীতকালীন সবজি চাষে মানুষ হোঁচট খাচ্ছে। এখন হেমন্ত মৌসুমে বাজারে আংশিক শীতের সবজি থাকার কথা থাকলেও তা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। একদিকে মানুষের যেমন আয়-রোজগার কমে গেছে, অন্যদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের দামও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারের পণ্য এখন নিম্নবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে। এর প্রভাব শুধু নিম্নবিত্ত পরিবারেই নয়, চরম প্রভাব পড়েছে ছাত্রাবাসগুলোতেও।
কার্তিক মাসে কাজের অভাবে কৃষিশ্রমিক কিংবা কৃষিজীবী মানুষ সম্পূর্ণ বেকার হয়ে বসে আছে। এভাবে তাদের ঘরে সঞ্চিত খাদ্য শেষ হয়ে এলে তারা মহাজন, জোতদার কিংবা সুদি ব্যবসায়ীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন নগদ অর্থের জন্য। আর একবার মহাজন, জোতদার বা সুদি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করলে দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক শ্রম বা ফসলের ভাগ দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ফলে এই কৃষিনির্ভর দরিদ্র মানুষ ক্রমাগত দুর্বিষহ অবস্থায় পতিত হবে। উত্তরাঞ্চলের এই নীরব দুর্ভিক্ষই হচ্ছে মঙ্গা। এখন ফসলের বেশ কিছু বিকল্প কিংবা বছরের বিভিন্ন সময়ে উৎপাদনশীল শস্য থাকার কারণে পুরো বছর তারা কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, মঙ্গা না থাকলেও উত্তরাঞ্চলের এসব কৃষিজীবী মানুষ দিনের পর দিন বা মাসের পর মাস উৎপাদনের পেছনে যে শ্রম দিচ্ছেন, সে তুলনায় তাদের অর্থনৈতিক জীবন কতটা সচ্ছল হয়েছে? অথবা মঙ্গা থেকে উত্তরণের পর কি তাদের জীবনে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে? উত্তর : না, হয়নি। বরং আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণ হয়নি কখনো। বর্ষায় উত্তরের জনপদ পানিতে ডুবে থাকে, বন্যা নিয়ে যায় সর্বস্ব, শীতের রাতে ঠাণ্ডায় কাঁতরায়। এসব কষ্ট এখন উত্তরের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। কার্তিক মাসে গ্রাম-বাংলার মানুষ যেমন খাদ্যকষ্টে ভোগে, তেমনি গবাদিপশুরও চরম খাদ্যসংকট দেখা দেয়। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এই কার্তিক মাসে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর আইএমএফের ভাষ্যের চরম প্রতিফলন ঘটতে চলছে। সেই সঙ্গে লক্ষণীয় যে, বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে খুবই গুরুত্ববহ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হয়েছিল। সেতু চালুর পর তাদের অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তনও এসেছে। তবে এর পুরো সুফল উত্তরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পাচ্ছে না। বিশেষ করে, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে ৮/১০ ঘণ্টা সময় অনায়াসে লাগে। তাহলে কুড়িগ্রামের মানুষ কীভাবে তাদের ফলিত শস্যাদি রাজধানীতে নিয়ে আসবে? উত্তরের মঙ্গা নিরসনে সড়ক যোগাযোগ বাড়াতে সরকারের কৌশল ছিল পল্লী সড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সড়ক ও সেতু বিভাগে উন্নয়নের পরও উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে কুড়িগ্রাম-ঢাকা অনেক দূর! তাই নিজেদের উৎপাদিত শস্যগুলো স্বল্পমূল্যে স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে তারা শস্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। কিন্তু তথাকথিত পাইকাররা এসব শস্য ঢাকায় নিয়ে এসে চড়া মূল্যে বিক্রি করে নিজেদের ফায়দা লুটছে। এসবের পরও উত্তরাঞ্চলের মানুষ দিনের পর দিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে চলছে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শস্যাদি উৎপাদন করছে। কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি। আমরা জোর গলায় এখন বলি, মঙ্গার দিন শেষ। কিন্তু বজ্রকণ্ঠে বলতে পারি না, তাদের দৈন্যতা ঘুচেছে! অন্যান্য স্ট্র্যাটেজি ও পলিসির মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে জাতীয় পর্যায়ের অভীষ্ট লক্ষ্যগুলো (যেমন- ২০৩০ সালের মধ্যে (ক). চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ (খ). উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন) অর্জিত হবে না। সূত্র : (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা) টেকসই দুর্যোগ মোকাবিলা অনেকটাই নির্ভর করছে আমরা কতটা জোর দিচ্ছি প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের ওপর। জলবায়ুজনিত দুর্যোগসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে। এখনই সময় সুপরিকল্পনা গ্রহণ করে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলে উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত জেলাগুলোয় আর মঙ্গার প্রকোপ থাকবে না। হবে আমনের বাম্পার ফলন, লাঘব হবে প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-কষ্ট! দেশের অর্থনীতিতে বইবে স্বস্তির সুবাতাস।

মো. রাকিবুল ইসলাম রনি : শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়