ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮ জনের, নতুন রোগী ১৭০৮

আগের সংবাদ

নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত : ক্ষণগণনা শুরু > রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ ৫ নভেম্বর > তফসিল ১৪ নভেম্বর, ভোট ৭ জানুয়ারি

পরের সংবাদ

নিঃসঙ্গতায় নয় নির্জনতায় ডুবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মানুষের জীবন কতই না রহস্যময়! জীবনের রহস্য উদঘাটন করা বড়ই কঠিন। রহস্যময়তা হচ্ছে মানুষের চরিত্রের প্রধান গুণ। রহস্যময়তার এই ঘেরাটোপ তাকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। তাইতো জীবন বৈচিত্র্যময়। এক জীবনে অনেক চাওয়া থাকবে, অনেক না পাওয়া থাকবে। এটাই হলো বাস্তবতা। কোনো কিছুর জন্য জীবন থেমে থাকবে না। নিরবচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটবেও না। জীবন জীবনের মতো চলবে। তারপরও জীবনের দুঃখ-বেদনা, পাওয়া, না পাওয়াগুলো একদিকে সরিয়ে রেখে এই যে আমরা বেঁচে আছি- এটাই তো অনেক। একবার ভাবুন তো, কী দামি এই জীবন, কী সুন্দর এই বেঁচে থাকা! তাইতো পারস্যের কবি শেখ সাদী বলেছেন, ‘জগতে জীবিত থাকার মতো বড় সত্য আর কিছুই নেই। বেঁচে থাকার মতো আনন্দদায়ক আর কিছুই হতে পারে না।’
আবার চিন্তা-চেতনা ও মননে প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র। কারো সঙ্গে কারো মিল নেই। সত্যি কথা বলতে কি, এ পৃথিবীতে কেউ কারো নয়। প্রতিটি মানুষ একা, ভীষণ একা। চারদিকে কতকিছু ছড়িয়ে আছে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান, বিত্ত-বৈভব, সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সবই আছে। এতকিছু থাকার পরও সে একা। যতই আমরা আপনজন পরিবেষ্টিত থাকি না কেন, এ সবই হচ্ছে এক মায়া, এক ধু-ধু মরীচিকা। এটা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি, না অনুভব করেছি? আসলে মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। একা আসতে হয় একা চলে যেতে হয়। জীবন যেন এক অনিশ্চিত ভ্রমণ।
আর এজন্যই অনেকে ক্রিকেট খেলার সঙ্গে জীবনের মিল খুঁজে পায়। ক্রিকেটও এক অনিশ্চয়তার খেলা। সেজন্যই হয়তো এত রোমাঞ্চকর হয়ে ধরা দেয়। পরের বলের গতিপথ সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারে না। কখন যে কী হবে বোঝা মুশকিল। দুর্দান্ত একটি বল, অসাধারণ একটি ক্যাচ, অপ্রত্যাশিতভাবে রান আউট, দারুণ একটি বাউন্ডারি কিংবা একটি ভুল সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারে খেলার গতিকে। তাইতো বলা হয় ক্রিকেট এক অনিশ্চয়তার খেলা। আর এজন্যই উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেছেন, ‘টুবি অর নট টুবি’। অর্থাৎ হতেও পারে না-ও হতে পারে। কী হতে পারে আর কী হতে পারে না, সেই অনিশ্চয়তাটাই তো ক্রিকেটের মাধুর্য।
আমি নিজেও অনিশ্চিত জীবনের এক নীল প্রহর গুনছি। জীবন হলো একটি উপহারের মতো, যা কখনোই কারো পরিকল্পনামাফিক চলে না। জীবন জীবনের নিয়মেই চলে। এত জাঁকজমক, হইচই আর কোলাহল ভালো লাগে না। এজন্যই হয়তো ক্রমান্বয়ে দিন দিন একাকী হয়ে পড়ছি, নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছি। আগেও তাই ছিলাম কিন্তু ইদানীং আরো বেশি নির্জনতায় পেয়ে বসেছে। তবে এটাও ঠিক যে নির্জনতায় ডুব দিয়ে থাকার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দ আছে, যেখানে মনের প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, যে ভাবনার কোনো শেষ নেই। কোথা থেকে এলাম, কোথায় যাব, কিইবা আমার অস্তিত্ব! সর্বোপরি মানুষ হয়ে জন্মেছি এটাই যেন এক আশ্চর্য ঘটনা। মানুষ হিসেবে যা করণীয় ছিল তার কিছুই করিনি। এসব খেদ আর বেদনা নিয়েই হয়তো একদিন বিদায় নিতে হবে। ভাবতেই কেমন লাগে!
নির্জনতা আমার ভালো লাগে। নির্জনতাকে আমি উপভোগ করি। প্রত্যেক মানুষ তার জীবনকে নিজের চোখ দিয়ে দেখে, মন দিয়ে অনুভব করে এবং হৃদয় দিয়ে অবলোকন করে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। নির্জনতার মাঝেই নিজেকে খুঁজে বেড়াই। এ যেন এক বিস্ময়কর অনুভূতি। নিজেকে আবিষ্কারের এক উত্তম সুযোগ। কৃষক যেমন মাঠে ফসল চাষ করে তেমনি মনের আঙিনায়ও অনুভূতিগুলোর চাষ করা যায়। তাইতো বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, নির্জনতায় আত্মার ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পায়। আর পাবলো পিকাসো বলেছেন, মহান নির্জনতা ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্ভব নয়।
সত্যি কথা বলতে কি আমি এখন আড়ালের মানুষ। আমার অনেক দুঃখ আছে, বেদনা আছে, কষ্ট আছে। এর কোনোটাই কারোটার মতো নয়। একান্তই নিজস্ব, ব্যক্তিগত। মনে করি এগুলো জীবনেরই একটা অংশ। এক জীবনে সব কিছুই থাকবে। ভালো থাকবে, মন্দ থাকবে, দুঃখ থাকবে, আনন্দ থাকবে। কিছু কথা, কিছু স্মৃতি, কিছু আনন্দ, কিছু কান্না, কিছু চোখের জল একান্তই নিজের থাকা উচিত, যা আমারও আছে। আর এগুলো নিয়েই বেঁচে আছি।
আসলে সময়গুলো বড্ড স্বার্থপর। চলে যাওয়ার পথে হৃদয়ে আঁচড় কেটে যায়। কেড়ে নেয় আবেগমথিত ভালোবাসাগুলোও। ভাবতেই অবাক লাগে, সময়ের ঝড়ো হাওয়ায় চোখের নিমিষে ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো কীভাবে উল্টে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটরা বড় হচ্ছে আর বড়রা ছোট হচ্ছে। দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর, বছর গড়িয়ে দশক। আমার চিন্তা-চেতনায়, জীবনযাপনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। চেহারা বদলে গেছে। চঞ্চলতা হারিয়ে গেছে। কারণে অকারণে হাসতেও ভুলে গেছি। চুলে পাক ধরেছে। মুখে বয়সের বলিরেখা পড়েছে। নিজের কথা লিখি অকপটে। লজ্জাবোধ করি না। নিজের ভাবনা ও কষ্টগুলো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করি এটাই আমার আনন্দ। আত্মার সঙ্গে আত্মার শক্তিশালী বন্ধনই হলো বন্ধু। আর এজন্যই মনের সব লুকানো কথা খোলামেলাভাবে তুলে ধরি। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কগুলো আসলেই স্বর্গীয়। এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে একদিন না একদিন সবাইকে বিদায় নিতে হবে। কেউ একজন চলে গেলে কারোরই কিছু যাবে আসবে না। কারণ সব মৃত্যু সবাইকে সমানভাবে কাঁদায় না বা ভাবায় না। সব মৃত্যুর ক্ষতিও সমান নয় পৃথিবীর কাছে। কিন্তু তারপরও এমন কিছু স্মৃতি থাকে, যা একান্ত সংগোপনে নাড়া দিয়ে যায়। নিবিড় বেদনায় মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। গভীর রাতে হৃদয়কে আন্দোলিত করে। এটাই শাশ্বত, এটাই জীবনের রহস্য।

ড. ইউসুফ খান : লেখক, গবেষক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়