৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি : গাইবান্ধায় জি এম কাদের

আগের সংবাদ

শারদীয় দুর্গোৎসব : শুভ চেতনা সঞ্চারিত হোক সবার মনে

পরের সংবাদ

দুই দলের মহারণের প্রস্তুতি : বিএনপির মহাসমাবেশ-মহাযাত্রা, রাজপথ দখলে রাখতে চায় আ.লীগ, সংঘাতের শঙ্কা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : গত ১০ ডিসেম্বরের ‘ট্রাম্প কার্ড’ ভেস্তে যাওয়ার পর খানিকটা মুষড়ে পড়ে বিএনপি। তবে পদযাত্রা, সমাবেশ নিয়ে রাজপথে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে দলটি। কিন্তু সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনে তাদের এসব কর্মসূচি আওয়ামী লীগ সরকারকে টলাতে পারেনি। বরং একের পর এক মেগাপ্রকল্প জনগণের জন্য উন্মোচন ঘিরে পাদপ্রদীপের থেকেছে ক্ষমতাসীনরাই। দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আধিপত্য ধরে রেখেছে রাজপথেও। নিয়ম অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে নভেম্বরের প্রথমার্ধেই। এরই মধ্যে এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ও সেইদিন থেকেই ‘মহাযাত্রা’র ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে ‘পরিস্থিতি মোকাবিলা’র জন্য প্রস্তুত রয়েছে তারাও। তফসিল ঘোষণার সময়টিকে টার্গেট করে মহারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী দুই রাজনৈতিক দল। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমঝোতাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
আগামী মাসে অর্থাৎ নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। যে কোনো মূল্যে তফসিল ঘোষণা ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকেই অবরোধ-ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়ে ঢাকায় বড় ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়- এমনই হুংকার দিচ্ছেন দলটির নেতারা। এর আগে ওই সমাবেশে অংশ নিতে সারাদেশ থেকেই নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ১০০ দিনের টার্গেট নিয়ে মাঠে রয়েছে সরকারি দল। বিএনপির এ ধরনের সম্ভাব্য কর্মসূচির বিষয়গুলো নিয়ে আগে থেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনরা। ইতোমধ্যেই পাড়ায়-মহল্লায় প্রস্তুতি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। আগামী বুধবার দলটির ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) প্রতিনিধি সভায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির উদ্দেশ্য আরেক ‘শাপলা চত্বর’ : বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্গাপূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে অনেকেই যখন গ্রামে যেতে ব্যস্ত, তখন বিএনপি নেতাদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে। পল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার হোটেলগুলোতে অনেকেই অবস্থান নিতে শুরু করছেন। তাদের উদ্দেশ্য, নয়াপল্টনের রাস্তা আটকে দেয়া। সূত্রগুলো বলছে, নিজেদের অবস্থান অনুযায়ী সরকারকে মোকাবিলার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতিই নিচ্ছে দলটি।

এদিকে এক মাসও সময় নেই, হাতে আছে আর কয়েকটা দিন, এর মধ্যেই সরকারের পতন ঘটাতে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আপস করলে বিএনপি বহু আগেই ক্ষমতায় যেতে পারত। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় না, বিএনপি চায় জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। কারণ রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেছে সরকার। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। জনগণকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক আন্দোলন হয়েছে; কিন্তু এবারের মত এত দল একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আর কখনো আন্দোলন করেনি। বাংলাদেশের মালিকানা ফিরে পেতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছে। বিএনপি রাস্তায় নেমেছে, রাস্তায় থাকবে। জীবন দিয়ে হলেও আন্দোলন সফল হবে। নেতাকর্মীরা জীবন দিতে প্রস্তুত।
প্রস্তুত আওয়ামী লীগ : বিএনপির হুমকিকে প্রকাশ্যে তেমন আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। তবে পাল্টা প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। নেতাদের মতে, বিএনপিকে বিশ্বাস নেই। যদি অতীতের মতো ধ্বংসলীলা চালায়, সেক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে থাকার বিকল্প নেই। ইতোমধ্যেই পাড়ায়-পাড়ায় কমিটি করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। নেতারা বলছেন, গত ১০ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়া দেশ চালাবে বলে দম্ভোক্তি করেছিল বিএনপি। ১০ ডিসেম্বরের মতো ২৮ অক্টোবরও তাদের একই পরিণতি হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির পরিণতি হবে ১০ ডিসেম্বরের মতো। ওইদিন (গত বছরের ১০ ডিসেম্বর) তারা গোলাপবাগ গরুর হাটে খাদে পড়ে গিয়েছিল। এবার কোথায় যাবে সেটা দেখার অপেক্ষা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ভোরের কাগজকে জানান, আমরা উন্নয়ন ও শান্তির কর্মসূচি নিয়ে জনগণের নিরাপত্তায় রাজপথে আছি। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমরা বাধা দেব না। তবে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা হলে উপযুক্ত জবা দেয় হবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের প্রতিনিধি সভা হবে আগামী বুধবার (২৫ অক্টোবর)। ওইদিন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। কিন্তু সন্ত্রাসী আচরণ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড় দেবে না। অন্যদিকে বিএনপি যা করবে, আমরা পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। দুই ঘণ্টার মধ্যে বিএনপির নৈরাজ্য মোকাবিলা করার সক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে।
এদিকে দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে কোনো নাশকতার আশঙ্কা করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই দিনে কর্মসূচি করেছে- এমনটা আমরা অনেকবারই দেখেছি। সেগুলোতে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা বিঘœ ঘটেনি। নতুন করে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুদলই টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আশা করি। আমাদের কথা স্পষ্ট, কোথাও কোনো দল বা ব্যক্তি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
সমঝোতা আভাস নেই : বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে রাজনৈতিক সমাঝোতার ওপরই গুরত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় এসে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর ওয়াশিংটনে ফিরে যে সুপারিশমালা প্রকাশ করেছে- তার প্রথমেই ছিল গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ইস্যুতে সংলাপের বিষয়টি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে অনেকে আশা করেছিলেন- হয়তো নির্বাচন নিয়ে একটি সংলাপের পরিবেশ তৈরি হতেও পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের প্রথম দায়িত্ব সুষ্ঠু ভোট। আর বিএনপির উচিত হবে বিদেশের ওপর ভরসা না করে একক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া। তাদের মতে, বিএনপি তাদের বর্তমান দাবিসহই নির্বাচনে যেতে পারে। জিতলে ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে বিএনপির এক দফা আন্দোলন বাস্তবায়িত হবে- এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি তারা। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। ২০১৩-১৪ সালে সন্ত্রাস-জ¦ালাও-পোড়াও করেছে। মানুষ বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, বিএনপির সামনে দুটি রাস্তা। এক. নির্বাচনে যাওয়া। বর্তমানে যে দাবিগুলো করছে, সেই দাবিগুলো নিয়েই নির্বাচনে যাওয়া। জনসমর্থন পেলে নির্বাচনে জিতে দাবির বাস্তবায়ন করা। দুই. নির্বাচন বর্জন করা। তবে কিছুতেই নির্বাচন বর্জনের নামে বাধা দেয়া নয়। তাহলে মার্কিন ভিসানীতি মাথার ওপর ঝুলছে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে বিএনপি নেতাদেরও ধরে রাখা যাবে না। অন্যদিকে সরকারের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠান। এতে অনিয়ম ঘটলে তা হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়