যুদ্ধাপরাধ মামলা : ৩ বছর আত্মগোপনে থাকা আসামি বিহারী আনোয়ার গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

দুই দলের মহারণের প্রস্তুতি : বিএনপির মহাসমাবেশ-মহাযাত্রা, রাজপথ দখলে রাখতে চায় আ.লীগ, সংঘাতের শঙ্কা

পরের সংবাদ

অসময়ে অতি বৃষ্টির পরিণতি কী?

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলো তা সাধারণত অন্য বছর হয় না। হঠাৎ এমন প্রবল বৃষ্টিতে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকার জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও বর্ষণের মাত্রা রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কিশোরগঞ্জের নিকলীতে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তা একদিনের বৃষ্টিপাত বিচারে ইতিহাসের নতুন রেকর্ড। ময়মনসিংহে ৫২ বছর পর এত বৃষ্টিপাত হলো। ঢাকার মানুষও টের পেয়েছে বৃষ্টির স্বরূপ। অঝোর বর্ষণে পথঘাট ডুবে ছিল দীর্ঘসময়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গিয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা এর নানা ব্যাখ্যা দিলেও এটি যে অসময়ে অতি বৃষ্টি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হঠাৎ এমন বৃষ্টিপাতের পরিণতিও ব্যাপক। দুঃখজনক যে সে আলোচনা তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না, অথচ গুরুত্ব পাওয়ার মতো ব্যাপার সেটি।
এমন সময় ঘটল এই অতি বৃষ্টিপাতের ঘটনা, যখন প্রধান খাদ্যশস্য আমন ধানের আবাদ পরিপক্ব অবস্থায়। আর মাত্র মাসখানেকের ভেতর ফলন ঘরে উঠতে শুরু করবে। আকস্মিক ভারি বর্ষণে অনেক জায়গার আমন তলিয়ে গিয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সহসা পানি না সরায় ধারণা করা যায়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কৃষক এর ফলে সর্বস্বান্ত হবে, আমনের জাতীয় উৎপাদন কমে যাবে, দেশ বিপাকে পড়তে পারে। এমনিতেই আমাদের অর্থনীতি ঘোরতর বিপদের সম্মুখীন। মূল্যস্ফীতি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশে উপনীত, যাকে ভয়াবহ বললে অত্যুক্তি হবে না। শাকসবজি থেকে শুরু করে প্রায় সব খাদ্যপণ্যের মূল্যই অত্যধিক মাত্রার। তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে পুষ্টির জোগান নিয়ে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ প্রভৃতি পুষ্টিকর খাদ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তুলনামূলকভাবে অনেকটা স্থিতিশীল চালের মূল্য। ইরি-বোরো ও আমনের গত কয়েকটি মৌসুমের ফলন আশানুরূপ হওয়ায় চাল নিয়ে অতটা হাহাকার নেই। কিন্তু এই চালের বাজারও অস্থির হয়ে উঠতে পারে সাম্প্রতিক ভারি বৃষ্টিপাতে ফসলহানির দরুন। এ বিষয়ে সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করা দরকার। সহায়তার প্রয়োজন হবে তাদের।
অসময়ের অতি বৃষ্টিতে শুধু আমন ধানের ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন শাকসবজি, রবিশস্য ও মৎস্য খামারের। শাকসবজি ও রবিশস্যের বুনন ও বেড়ে ওঠা সবেমাত্র শুরু হয়েছিল, এরকম সময়ে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ফলনের মারাত্মক ক্ষতি করবে। প্রবল বৃষ্টিতে অনেকের সবজি খেত ধুয়েমুছে গেছে, যার দরুন শীতের সবজি দুষ্প্রাপ্য থাকার সম্ভাবনাই বেশি- এখন যেমন আছে। রবিশস্যেরও দেখা দিতে পারে আক্রা। পুষ্ট হয়ে ওঠা পেঁয়াজ মাটির নিচেই পচে যেতে পারে। ক্ষতির রেশ এরকম নানা ক্ষেত্রেই দেখা দিতে পারে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য খামার। যেসব এলাকায় বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেশি ছিল সেসব এলাকায় খামারের পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় চাষের মাছ বেরিয়ে গিয়ে মাঠে-ময়দানে, নালা-খালে ধরা পড়েছে। তলিয়ে না গেলে খামারের মাছ আস্তে-ধীরে বাজারে এসে সরবরাহ ব্যবস্থাকে সচল রাখত বছরজুড়ে। তার পরিবর্তে এখনই ধরা পড়ে গেছে সব। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন, এ বছর মাছের আকাল চলছে। আশ্বিন-কার্তিক মাস মিঠাপানির মাছের মৌসুম। পানিতে ভাটার টান লাগায় মাছ ধরা পড়ে এ সময় বেশি। বাজার থাকে মাছে সয়লাব। এ বছর তার ব্যতিক্রম। আশ্বিন-কার্তিকেও নদী-নালা, খাল-বিল-হাওরের মাছের দেখা নেই বাজারে। ইলিশেরও আকাল। নির্দিষ্ট সময় ধরে সাগর-নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও ইলিশের জোগান বাড়েনি চলতি মৌসুমে। এর কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। ইলিশ বিশেষজ্ঞদের এ ব্যাপারে গবেষণা প্রয়োজন। অনুমান করি, জলবায়ু পরিবর্তন এর একটি কারণ। নিশ্চয়ই অন্য কারণও আছে। গবেষণা ঠিকঠাক মতো করলে এর কারণ বেরিয়ে আসার কথা। খতিয়ে দেখা দরকার বিধিনিষেধের (ইলিশ ধরার) সময়কাল ঠিক আছে কিনা।
জলবায়ুর পরিবর্তন ইলিশের ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলেছে ধারণা না থাকলেও মিঠাপানির মাছের ওপর যে প্রভাব ফেলেছে তা অনেকটা নিশ্চিত। এ বছর বৃষ্টিপাত দেরিতে শুরু হওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিলে পানি আসে দেরিতে। এই সুযোগে মা মাছ অনেকটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মাছ শিকারিদের হাতে পড়ে। যদি এসব নদী ও জলাশয় ভরাট না থাকত তাহলে নির্বংশ হওয়ার সুযোগ কম ঘটত। তাছাড়া যথাসময়ে পানি না আসায় মাছের প্রজননও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণেই বাজারে মিঠাপানির মাছের সরবরাহ কম এ বছর। ভরসা করতে হচ্ছে চাষ করা মাছের ওপর। হঠাৎ ভারি বৃষ্টিতে মাছের খামার তলিয়ে যাওয়ায় এবার সংকট বাড়তে পারে। বলাবাহুল্য যে এমন পরিস্থিতিতে অনেক খামার মালিক পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তাদের দিকে দৃষ্টিপাত জরুরি। এই ‘ভোরের কাগজ’-এ পূর্বপ্রকাশিত লেখায় বলেছি, এখনো বলি- প্রাকৃতিক উৎস, অর্থাৎ নদী-নালা, খাল-বিল-হাওর-জলাশয়ে মৎস্যের উৎপাদন বাড়ানো সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। মাছের খামারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা চাষাবাদের জমি আশঙ্কাজনকভাবে কমাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নদীখেকো, বালুখেকোদের রুখতে হবে। জলাশয়গুলোকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা ও সচল রাখা দরকার। তাতে মাছের উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি রক্ষিত হবে পরিবেশ।
এই যে ক্ষয়ক্ষতির কথা বললাম তার হিসাব-নিকাশ করে কৃষি অধিদপ্তর আগাম ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে কিনা জানি না। যদি না ভাবে তাহলে বিপদগ্রস্ত হতে পারে জাতি।

মজিবর রহমান : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়