জাবিতে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত

আগের সংবাদ

বাজারের পারদ চড়ছেই : নির্ধারিত দামের ধারেকাছেও নেই তিন পণ্য, আমদানির ডিম দেশে আসেনি এখনো

পরের সংবাদ

অস্থিরতার মূলে ডলার সংকট : ডলার মিলছে না ব্যাংক কিংবা খোলাবাজারে, দামে লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : দুরারোগ্যে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল হাসান। কয়েকটি ব্যাংকে গিয়েও প্রয়োজনীয় ডলার পাননি। বাধ্য হয়ে খোলাবাজারে যান। মতিঝিল, ফকিরাপুলসহ আশপাশে ঘুরেও ডলার কিনতে পারেননি তিনি। খুব দরকার হওয়ায় বেশি দর দিতে চাইলেও কোনো মানি এক্সচেঞ্জই ডলার দিতে রাজি হয়নি। এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে দেশের ডলার বাজারে।
দেড় বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে সংকটের মূলে রয়েছে মার্কিন ডলার। সংকট কাটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবস্থা স্বাভাবিক করতে ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদদের দ্বারস্থ হয়েছে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত ১৫ মাসের হিসাবে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি মাসে গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এর ফলে রিজার্ভের পতন অব্যাহত রয়েছে। মূলত ডলার সংকট ও বাড়তি দামের কারণে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসাবাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বড় ধরনের বিপদে ফেলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারের সঙ্গে এখনো ডলারের রেটের ব্যবধান রয়েছে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়াই ভালো হবে। অনেকের মতে, দেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হচ্ছে। এর কারণেও ডলার সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় এবং আমদানি পরিশোধের জন্য মার্কিন ডলারের হার পঞ্চাশ পয়সা বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাফেদা এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারের বিপরীতে প্রবাসীরা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। আগে পেতেন সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে প্রবাসীরা সরকারি খাতের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও পাবেন। রপ্তানিকারকরা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। এছাড়া আমদানির বিপরীতে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়। এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে সব খাতেই ডলারের দাম ৫০ পয়সা করে বাড়ানো হয়। এরপরও দিনকে দিন

ডলার সংকট তীব্র সংকট হচ্ছে। বিপরীতে কমছে টাকার মান। ফলে খোলাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকেছে ১২০ টাকায়। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের প্রতি ডলার কিনতে হচ্ছে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২০ টাকা দিয়ে। গত বৃহস্পতিবার কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হয়েছে ১১৯ থেকে ১২০ টাকা। যেখানে গত সপ্তাহে এক ডলার ছিল ১১৭-১১৮ টাকা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী খুচরা ডলারের দাম ১১৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
ডলারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক আগেই বাজারের সঙ্গে ডলারের দামের সমন্বয় করা দরকার ছিল। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা করছে। তবে বাজারমূল্যের সঙ্গে না আসা পর্যন্ত স্থির হবে না। দেশের অর্থনীতি দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে যাবে।
সূত্র জানায়, দেশে নগদ ডলার নিয়ে আসেন সাধারণত প্রবাসী ও বিদেশ থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা। নিয়মানুযায়ী তাদের কাছে যেসব ডলার থাকবে, ফেরার সময় বিমানবন্দরে কাস্টমসে ঘোষণা দিতে হবে। এর মধ্যে ১০ হাজার ডলারের বেশি থাকলে তা ফেরত দিতে হবে ব্যাংক বা মানি চেঞ্জারসে। পরে ব্যবহারের জন্য গ্রাহক নিজের কাছে ১০ হাজার ডলার রাখতে পারবেন। কিন্তু অনেকে দেশে ফেরার পর এর চেয়ে অনেক বেশি ডলার নিজের কাছে রেখে দিচ্ছেন। তারা সেটি বাজারেও বিক্রি করছেন না। আবার নিজেরা ব্যবহারও করছেন না। এতে নগদ ডলারের সংকট বাড়ছে। এছাড়া অনেকে ভবিষ্যতে বিশেষ প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে টাকা দিয়ে নগদ ডলার কিনে রাখছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের ডলার বিক্রেতা বলেন, সাধারণ ব্যক্তিরা ব্যাংকে ডলার বিক্রি করতে গেলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ কারণে তারা খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করেন। তবে ইদানীং ধনী ব্যক্তিরা ডলার সংরক্ষণ করেই রাখছেন বেশি। ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও বেশি দামে বাইরে ডলার বিক্রি করেন। এ কারণেও ব্যাংকে ডলারের সংকট থাকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, টাকা পাচারের কারণে ডলার সংকট হচ্ছে। দেশে ডলারের কিছু ঘাটতির পেছনে একদিকে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জিনিসপত্রের মূল্য বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে রয়েছে অর্থ পাচার। দেশের কিছু ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী অর্থ পাচার করে দুবাই, কানাডা, মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনেছেন ও সম্পদের মালিক হয়েছেন। টাকা পাচাররোধে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কিছু ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী অর্থ পাচার করে দিনে-দুপুরেই দেশটাকে ডাকাতি করছে। এদের রুখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এদের মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র এর সঙ্গে জড়িত।
কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি পর্যটকদের কম আসা এবং প্রবাসীদের দেশে আসা কমে যাওয়ায় ডলার সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া খোলাবাজার থেকে সবাই ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল শিকদার ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যাংক ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে ডলার সংকট বাড়ছে। তিনি বলেন, সরকার যে রেট নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেই রেটে আমরা ডলার কিনতেও পারি না। এ বিষয়ে বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি জানান, মানি চেঞ্জারগুলো ফাঁকা থাকলেও ট্রাভেল এজেন্সি ও ফুটপাতে ডলার বিক্রি হচ্ছে। কারণ, তাদের কারো কাছে হিসাব দিতে হয় না।
জানা যায়, মহামারি করোনার আগের বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কম ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের প্রবাহও বেশ ভালো ছিল। একই সময় রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের পৌঁছে। এসব নিয়ে বড় ধরনের আত্মতুষ্টিতে ভোগে সরকার। রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হয় ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ। এছাড়া রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। ২০২১ সালের শেষদিকে সার্বিক অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব এবং পরবর্তী সময় ডলারের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদাও বাড়ে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে রিজার্ভে। এর মধ্যে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হয়। সংকট কাটাতে কঠিন শর্তে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয় সরকার।
এদিকে দীর্ঘদিন ডলারের দর কৃত্রিমভাবে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে এটি বেড়ে ১১০ টাকায় ঠেকেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের দাম বাড়িয়েছে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা।
কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট, এর মূলে রয়েছে মার্কিন ডলার। একসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম ধরে রেখেছিল। পরে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। বেশি হারে দাম বেড়েছে। এটিই প্রমাণ করে- কৃত্রিমভাবে ধরে রেখে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কোনো সমাধান নয়। এর ফলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাজারের সঙ্গে এখনো ডলারের রেটের ব্যবধান রয়ে?ছে। যখন ডলারের দাম বৈধ চ্যানেলে কম থাকবে তখন হু?ন্ডি উৎসাহিত হবে। রেমিট্যান্স কমে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। রিজার্ভের ওপর চাপ সৃ?ষ্টি হ?বে।
তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণের যে শর্ত আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া। এখন য?দি কো?নোভা?বে আমরা ডলারের রেট ধ?রে রাখ?তে চাই, এটি ঠিক হ?বে না। আগেও ডলারের রেট ধরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ফল ভালো হয়নি। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়াই ভালো হবে।
এদিকে ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের জুলাই থেকে বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এর প্রভাবে গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ কমেছে, অন্যদিকে রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। কিন্তু তারপরও ডলার সংকট কাটেনি, উল্টো বেড়েছে বহুগুণে। ডলার সংকটে চাপের মুখে গোটা অর্থনীতি। বাড়ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। নিত্যপণ্যের বাড়তি ব্যয় মেটাতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এসব পরিস্থিতিতে ডলারের বাজার নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন বেসরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংকগুলোর এমডিদের জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আপাতত ডলার বাজারে নীতিগত পরিবর্তন আনা হবে না। তবে ডলারের দামে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, সেটা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করাই মূল লক্ষ্য। বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ডলারের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ডলারের বাজার স্থির রাখতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বাজারের সঙ্গে পরিস্থিতি সমন্বয় করতেই ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করায় বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে এসব ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানকে জরিমানাও করা হয়েছে।
এদিকে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৭৫ পয়সা দরে কেনা এবং সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রির সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি দামে তারা কেনাবেচা করতে পারবে না। কিন্তু নগদ ডলার এ দামে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মানি চেঞ্জারগুলো নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রিও করতে পারছে না। এতে মানি চেঞ্জারগুলোয়ও ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
অন্যদিকে, খোলাবাজারে কয়েকদিন ধরেই বেশি দর নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরবর্তী সময় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ ব্যাংক সাতটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে এবং ১০টি মানি চেঞ্জারকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। বেআইনিভাবে মাত্রাতিরিক্ত নগদ ডলার রাখায় আটটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হয়। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে। জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির জন্য ধারাবাহিক ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধারাবাহিকভাবে পতন হচ্ছে। তবু রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি থামছে না। আমদানি দায় মেটাতে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম তিন মাস আট দিনে রিজার্ভ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কমে হয়েছে ২১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার।
জানা যায়, গত অর্থবছরের ১২ মাসে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এতে ২৭ মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রিতে রিজার্ভের পতন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমকি ৮৬ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ২৭ মাসে রিজার্ভ কমেছে সাড়ে ১৯ বিলিয়ন ডলার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়