সৌদি ভিসা প্রসেসিং কেন্দ্র : ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে না পারায় বিক্ষোভ

আগের সংবাদ

অস্থিরতার মূলে ডলার সংকট : ডলার মিলছে না ব্যাংক কিংবা খোলাবাজারে, দামে লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পরের সংবাদ

অর্থনীতিতে সংস্কার এখন মূল চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অর্থনীতি এখন বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। এতে অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছে সবার মধ্যে। সাধারণ চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দিনমজুর থেকে শুরু করে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ সবাই এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন এখন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছেই। আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা চেষ্টার পরও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগ চাপের মুখে পড়েছে। দেশের আর্থিক খাতের ঝুঁকি বেড়েছে। ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ, খেলাপি ঋণ এবং ঋণ অবলোপনের প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ কমছে। এছাড়া রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের গতি কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও সেই অনুযায়ী প্রবাসী আয় আসছে না। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে একাধিক বিনিময় হার চালু হওয়ায় প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিনিময় হার এখনো বাজারভিত্তিক হয়নি, যা রিজার্ভ কমাচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণেও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এটিও অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত নির্বাচনের কারণে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা এ সময় একটু অস্বস্তিতে থাকেন। যে কোনো নীতি পরিবর্তনের শঙ্কায় থাকেন তারা। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়; সব দেশেই নির্বাচনের সময়ে এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থাকে এভাবেই দেখছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ দেশের অর্থনীতিতে এখন চার ধরনের সংকট রয়েছে ও তা উত্তরণের চ্যালেঞ্জও আছে। এগুলো হলো- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির চাপ, আর্থিক খাতের ঝুঁকি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা। ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার। গত দুই বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার করে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে, অন্য কোনো খরচ নয়। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচকই হলো বৈদেশিক মুদ্রার এই রিজার্ভ। কিন্তু এই রিজার্ভের পতনই ঠেকানো যাচ্ছে না।
বাংলাদেশকে দেয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল গত জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, গত সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। এজন্য লিখিতভাবে বাংলাদেশকে প্রকৃত রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি জানিয়ে দেয় আইএমএফ। এই হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য আইএমএফকে জানানো শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ রাখতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এটি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে এর ওপর। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস হলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশ হবে। এর মানে চলতি অর্থবছরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছে না বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণগুলো হলো দেশের বাজারের জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি; দুর্বল মুদ্রানীতি; টাকার অবমূল্যায়ন; সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ এবং কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ। জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগ চাপের মুখে পড়েছে। মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় খাবারের দাম বেশি বেড়েছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। তাদের কেনার সামর্থ্য কমেছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দেয়া উচিত। এছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেয়া উচিত।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে বিনিময় হার ধরাবাধার বাইরে রাখা, মুদ্রানীতি আধুনিক করা এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বহিঃখাতের সমস্যা সমাধানে বিনিময় হারে যেসব অসঙ্গতি আছে তা দূর করতে হবে। এজন্য বিনিময় হারের সীমা তুলে দেয়া উচিত; যা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের মধ্যে বিনিময় হারের পার্থক্য কমে আসতে সহায়তা করবে। মূলধন কম এমন ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকবে, যদি না বিশ্ববাজারে জ¦ালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য কমানো না হয়। অপ্রত্যাশিত বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে; যা খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে বিশ্বব্যাংক। আর্থিক খাতের ঝুঁকি আরো বেড়ে যেতে পারে, যদি খারাপ ঋণ বেড়ে যায় এবং ব্যাংক খাতের তারল্যের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়াতে সংস্কার করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব-সংঘাত ও অনিশ্চয়তা বেড়ে গেলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে; যা রপ্তানির ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়াকে উসকে দেবে। এর ফলে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে আবারো চাপ পড়বে। দেশে গত দুই মাসে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স আহরণ দুটিই নিম্নমুখী। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সংসার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কমেছে বেসরকারি বিনিয়োগও। অব্যাহত রয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন ও রিজার্ভ ক্ষয়। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে আসতে পারে। যদিও গত এপ্রিলে সংস্থাটি ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছিল। নির্বাচন সামনে রেখেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ কমাতে ব্যাংক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন খাতে দ্রুত ও জোরালো সংস্কার করা প্রয়োজন। যথাযথ ও দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো দুরূহ হতে পারে এবং এতে মূল্যস্ফীতিসহ সার্বিক সংকট দীর্ঘ হতে পারে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে দ্রুত নীতি পরিবর্তন জরুরি। এক্ষেত্রে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। আর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে ব্যাংক ঋণের ওপর থেকে ক্যাপ তুলে নিতে হবে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা কাটাতে কার্যকরী ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির প্রতি জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন তিনটি মূল চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মূল্যস্ফীতি। অন্যান্য খাতের পাশাপাশি আর্থিক খাতের দুর্বলতাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার, যেখানে কার্যকর মুদ্রানীতি ও বাজারভিত্তিক ডলারের মূল্য নির্ধারণ অন্যতম পদক্ষেপ হতে পারে। আর রাজস্ব বৃদ্ধিও সমস্যার উত্তরণে বড় ভূমিকা রাখবে। জ¦ালানির উচ্চমূল্য, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, পণ্যের সরবরাহ সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। একই সঙ্গে মজুরি না বাড়ায় মানুষের ভোগ ব্যয় কমছে, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ অন্য ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। বরং ব্যাংকের ঋণখেলাপি, পুনঃতফসিল ও ঋণ অবলোপন বাড়ছে; যা ব্যালান্স অব পেমেন্টে চাপ তৈরি করছে। রেমিট্যান্স কমায় রিভার্জও কমছে। সরকারের আমদানি নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপে কর আহরণও দুর্বল হয়েছে। এমনিতেই রাজস্ব আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে আসায় সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা বেড়েছে। এতে আয় না বাড়লেও সরকারের ঋণ বেড়েই চলেছে। আবার দারিদ্র্য কমলেও বাড়ছে বৈষম্য। এমতাবস্থায় কাঠামোগত সংস্কারে কিছু পদক্ষেপের কথা বলা যায়। ডলারের একই দর নির্ধারণ করা দরকার। আর রাজস্ব বাড়াতে ভ্যাট ও আয়কর আদায় বাড়ানো যেতে পারে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে নিত্যপণ্যের শুল্ক হ্রাসের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে, যেখানে ২-৫ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় হবে। সুতরাং নিম্ন আয়ের দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে এসে আরো বেশি ঋণ পেতে পারে বাংলাদেশ। এটা বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমাতেও সহায়তা করবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। স্বল্প সুদের ঋণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলসহ বিভিন্ন স্কিম থেকে আরো ঋণ নেয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ ভালো করেছে। গত কয়েক বছরে প্রায় ১১ মিলিয়ন (১ কোটি ১০ লাখ) মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠেছে। আরো ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) মানুষ চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাস আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংস্কার এখন মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। সব দেশেই নির্বাচনের আগে টেনশন থাকে। এ সময় বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি বোঝার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। বাংলাদেশও একই অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশে বিদ্যমান সমস্যার কারণে, নাকি বৈশ্বিক কারণে এমন প্রশ্নও রয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব সব দেশেই বিদ্যমান থাকে। কিন্তু সে পরিস্থিতির সঙ্গে দেশীয় পলিসি অ্যাডজাস্ট করে সমস্যার সমাধান করতে হয়। বাংলাদেশে কিছু সংস্কারকাজ হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এটা ভালো। সুদের হারের ক্যাপ ধীরে ধীরে তুলে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার হচ্ছে, কিন্তু আরো করতে হবে। আগামীর পরিবেশ অর্থাৎ নির্বাচনের পরিবেশ যদি ভালো থাকে, তাহলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। মানুষ যদি উন্নয়নের পক্ষে থাকে, তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে প্রয়োজনে নিচের ৫ শতাংশ লোকের জন্য যেসব কর্মসূচি আছে সেগুলো বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে ২০১৬-২২ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে দারিদ্র্য কমেছে। অন্যদিকে নগরায়ণ বেড়েছে। এর ফলে বৈষম্যও বেড়েছে। এখনো আমরা আশাবাদী। কয়েক বছরজুড়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশ জনমিতির সুবিধা পাচ্ছে। এখানে তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি। এছাড়া রপ্তানি বাজারেও বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বাড়ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে নীতি সমন্বয় করতে হবে।

রেজাউল করিম খোকন : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়