পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব : সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

আগের সংবাদ

পদ্মার বুকে স্বপ্নের পারাপার : প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিল ট্রেন > উদ্বোধন করে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা গেলেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজকাল সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে কমবেশি আগ্রহী হচ্ছেন। অভিভাবকরা লেগে রয়েছেন সন্তানের পেছনে। সন্তান পরীক্ষায় ভালো ফল করে নতুন ক্লাসে উঠবে, পরবর্তী সময়ে ভালো কলেজে, ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাবে, জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে- সন্তানের কাছ থেকে মা-বাবার এটাই তো চাওয়া। সরকারি স্কুলের বাইরেও রাজধানীতে বর্তমানে বেশ কিছু নামিদামি বেসরকারি স্কুল গড়ে উঠেছে। বেশির ভাগ মা-বাবা, অভিভাবক তাদের সন্তানকে এসব স্কুলে ভর্তি করতে আগ্রহী। ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য প্রাইভেট টিউটর, কোচিং সেন্টারের অভাব নেই রাজধানী শহরে। বাড়ির সীমানা দেয়ালে, লাইটপোস্টের গায়ে প্রাইভেট টিউটর, কোচিং সেন্টারের প্রচারপত্র সাঁটা থাকে। মনভোলানো সব সেøাগান দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সেল নম্বর লেখা থাকে এসব প্রচারপত্রে। নার্সারি, প্লে-গ্রুপ থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য রয়েছে কোচিংয়ের ব্যবস্থা। কোনো কোনো প্রচারপত্রে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা পর্যন্ত থাকে। এসব দেখে শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবকরা প্রলুব্ধ না হয়ে পারেন! ভালো স্কুলে ভর্তির প্রবল আগ্রহকে পুঁজি করে দেশব্যাপী চলছে কোচিং নামের জমজমাট ব্যবসা। শিশু ঠিকমতো হাঁটতে, কথা বলতে শেখার আগেই তাকে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে। আর এ সুযোগে কোচিং সেন্টারগুলো শিশুদের স্কুলে ভর্তির নিশ্চয়তা দিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এমনকি রাজধানীর কিছু নামিদামি বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে রয়েছে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ। তারপরও এসব স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য অনেক আগে থেকে ভিড় লেগে যায়। শিক্ষার্থীদের রীতিমতো নেমে পড়তে হয় ভর্তিযুদ্ধে। আজকাল কোচিং সেন্টার দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটা বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। খোদ রাজধানীতে রয়েছে কয়েক হাজার কোচিং সেন্টার। সরকারি, বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জড়িত রয়েছেন এসব কোচিং সেন্টারের সঙ্গে। বিত্তশীল অভিভাবকরা সন্তানের লেখাপড়ার পেছনে টাকা ঢালতে কাপণ্য বোধ করেন না। টাকার বিনিময়ে সন্তানকে ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে দ্বিধাবোধ করেন না অনেক অভিভাবক। বেশির ভাগ কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা তো নির্দিষ্ট স্কুলেরও শিক্ষক। কোচিং সেন্টারের পেছনে টাকা বিনিয়োগের বিনিময়ে যদি সন্তান ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের আগাম আভাস পায় তবে তো সোনায় সোহাগা। অথচ তারা জানেন না যে এ কাজটি করে তারা নিজ সন্তানের শিক্ষার গোড়ায় কুঠারাঘাত করছেন! অভিভাবকদের ধারণা রাজধানীর তথাকথিত ‘এলিট’ স্কুলে একবার ভর্তির সুযোগ করিয়ে দিতে পারলে এসএসসি পর্যন্ত সন্তানের লেখাপড়ার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যাবে। কাজেই সন্তানের শিক্ষার কারণে প্রধানত মানুষ হচ্ছে রাজধানীমুখী। রাজধানীর সব নামকরা স্কুলেই যে দক্ষ শিক্ষক ও সঠিক পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে এমনটি নিশ্চিত বলা যাবে না। অথচ এ দুয়ের সমন্বয় ছাড়া একটা ভালো মানসম্পন্ন স্কুল গড়ে উঠতে পারে না। বাংলাদেশে কোনো বয়সের শিশু কোন ক্লাসে ভর্তি হবে তা নির্ধারণ করেন শিশুর মা-বাবা অথবা অভিভাবক, যা কাম্য নয়। বিভিন্ন বয়সের শিশু একই শ্রেণিতে পড়ায় শিক্ষার্থীদের একটি অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। স্কুলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ঢাকার বাইরের সরকারি স্কুলে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ব্যতীত ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর শিক্ষার্থীর চাপ কমানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের বয়স ও ধারণক্ষমতার ওপর নির্ভর করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে শ্রেণিকক্ষে যোগ্য শিক্ষকের দ্বারা পাঠদান নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষাক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন সূচিত হতে পারে।

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ : লেখক ও গল্পকার।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়