প্রতিবন্ধী তরুণদেরও রাজনীতিতে অংশ নেয়া প্রয়োজন : প্যানেল আলোচনায় ছাত্রনেতারা

আগের সংবাদ

অবস্থান স্পষ্ট করল আওয়ামী লীগ : বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করার কোনো সুযোগ নেই

পরের সংবাদ

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব : সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এর আগে ২০১৮ সালে সর্বশেষ পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। মূল্যস্ফীতি, শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় সিপিডি ৯ হাজার ৫৬৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন এই ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে।
সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ আয়োজনে গতকাল রবিবার ‘গার্মেন্টস খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হয়। এতে এ মজুরির প্রস্তাব করেন সংস্থাটির সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ক্রিশ্চিয়ান এইডের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা, বিজিএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বিকেএমইএ-এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এ মুহূর্তে পোশাক খাতে মজুরি পুনর্নির্ধারণের একটা প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে দেখছি শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনাগুলো হাজির করছেন। আবার অন্যদিকে মালিকপক্ষের দিক থেকে সরাসরি কোনো প্রস্তাবনা না থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এগুলোর আলোকে আগামীতে নতুন মজুরি পুনর্নির্ধারিত হবে, যেটা ২০১৮ সালে সর্বশেষ হয়েছিল। বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গার্মেন্টস খাতের মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগতভাবে এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জায়গা থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে কারণ সামনে যেহেতু নির্বাচন।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২৭ শতাংশ কারখানা মালিক মনে করেন ১২ হাজার টাকার ওপরে প্রায় ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন। শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা চেয়েছেন। আবার শ্রমিক সংগঠনগুলো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব করেছে। পোশাক খাতে জড়িত শ্রমিকের পরিবার ছোট হয়ে আসছে। আমরা গ্রেড সেভেনের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। আমরা মনে করি, গ্রেড সেভেনে একজন পোশাক শ্রমিকের এতটুকু পাওয়া প্রয়োজন।
এর আগে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তামিম আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যখন মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, সে সময় এসে এ মজুরি নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৬ শতাংশ পোশাক কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ করে এই গবেষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই খাতের ৬ জন স্টেক হোল্ডারের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশের চেয়ে পোশাক শ্রমিকদের আমরা কম বেতন দিচ্ছি। ২০১৮ সালের যে মজুরির কথা বলা হলো সেটা গত ৫ বছরে কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা যদি দেখি, তাহলে দেখবো সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়নের জায়গায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। ৫ বছরে এটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ৪২.১ শতাংশ ফ্যাক্টরিতে গ্রেডিং সিস্টেমই নেই।
২৮ শতাংশ শ্রমিক গ্রেডিং সিস্টেম সম্পর্কে জানে না উল্লেখ করে তামিম বলেন, ৩১ শতাংশ শ্রমিক জানে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে। অর্থাৎ একদিকে কারখানা গ্রেড সিস্টেম ফলো করছে না, অন্যদিকে শ্রমিকরা জানছে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে।
তবে, সিপিডির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে শ্রমিক নেতারা বলেন, দেশে বর্তমান খাদ্য মূল্যস্ফীতি অসহনীয়। এতে, পরিবার নিয়ে বিপাকে শ্রমিকরা। এ সময় পোশাক কারখানার মালিকরা জানান, দিন দিন শ্রমিকদের সুবিধা বাড়লেও মালিকদের সীমাবদ্ধতা থেকে যাওয়ায় মজুরি বাড়ানো যাচ্ছে না।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, কীভাবে চালু রাখা যায়। এ মুহূর্তে আমরা নতুন কর্মসংস্থান তো দূরের কথা, পুরাতনদের কর্মসংস্থান ধরে রাখাই কষ্টকর। নি¤œতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করেই মজুরি নির্ধারণ করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের আগস্টে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে। যা গত এক যুগে সর্বোচ্চ। এ অবস্থায়, মৌলিক চাহিদা পূরণ ও জীবনমানের উন্নয়নে ২৩ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবি জানান পোশাক শ্রমিকরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়