প্রতিবন্ধী তরুণদেরও রাজনীতিতে অংশ নেয়া প্রয়োজন : প্যানেল আলোচনায় ছাত্রনেতারা

আগের সংবাদ

অবস্থান স্পষ্ট করল আওয়ামী লীগ : বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করার কোনো সুযোগ নেই

পরের সংবাদ

ভিসানীতি বাক-স্বাধীনতার খড়গ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত ২২ সেপ্টেম্বর ভিসানীতি কার্যকরের ঘোষণা দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বরাবরের মতো বিস্তারিত তুলে ধরেন দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। তা নিয়েও বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব ডালপালা মেলে। ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস গণমাধ্যমকেও এ নীতির আওতায় নিয়ে আসার কথা বলেন একটি অনুষ্ঠানে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশি মিডিয়াকেও মার্কিন ভিসানীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপরই তা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। খোদ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এবং রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বক্তব্যে মিল-অমিল নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি টকশোগুলোতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। কেননা তার বক্তব্যের সঙ্গে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের বক্তব্যের বেশ অমিল পরিলক্ষিত হয় এবং মার্কিন দূতও তার বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা তখন পর্যন্ত সবার সামনে তুলে ধরেননি। যার ফলে অনেকে তার এ বক্তব্যকে গণমাধ্যমের ওপর হুমকি বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও এখন কেন গণমাধ্যমকেও ভিসানীতির আওতায় আনতে হবে তা সবার কাছে স্পষ্ট নয়। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মার্কিন ভিসানীতি গণমাধ্যমের জন্য কেন রক্ষক না হয়ে মতপ্রকাশ সংকোচনের হাতিয়ারে পরিণত হতে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতি এমন মন্তব্যে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি এক ধরনের সেল্ফ সেন্সরশিপ আরোপের বিষয়টিও সবাইকে অবাক করেছে। এ ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি নিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে গণমাধ্যমের প্রতি ভিসানীতি বিষয়ে মুখপাত্র ম্যাথু মিলার নতুন করে কিছু বলেননি। ফলে পিটার হাসের এ বক্তব্য অনেকে একপক্ষীয় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলেও সমালোচনা করছেন। ভিসানীতির ভয়ে যদি বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকোচিত হয় পিটার হাস তাতে লাভবান হবেন? নাকি এর পেছনেও মার্কিন স্বার্থরক্ষার কোনো নীতি আছে?
এশিয়ার অন্য দেশগুলোর গণমাধ্যম কর্মীরা যখন তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত তখন গণমাধ্যমবান্ধব একটি উদীয়মান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় মার্কিন হস্তক্ষেপ সত্যিই ভাবনার বিষয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত খবরে দেখলাম পাকিস্তানে ইমরান রিয়াজ খান চার মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর ঘরে ফিরেছেন। এ টেলিভিশন সাংবাদিক গত ৯ মে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার দুই দিন পর গ্রেপ্তার হন। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মিয়ানমারেও তো গণতন্ত্র বা মতপ্রকাশের কোনো বালাই নেই। অধিকন্তু তাদের জনগণকে বাংলাদেশ মানবতার খাতিরে আশ্রয় দিয়েছে। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী নীতি প্রণয়ন করেছে? কিন্তু এসব বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো তৎপরতা আমাদের চোখে পড়ে না। যাদের গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা, গণমাধ্যম কর্মীরা- ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমিরের শিকার তাদের নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কোনো পদক্ষেপ কেন গ্রহণ করছে না? নাকি গণতন্ত্রের খোলসে জেনারেলতন্ত্র হলেও কোনো সমস্যা নেই যদি মার্কিন স্বার্থ ঠিক থাকে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তো খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলেন তখন প্রমাণিত হলো রাশিয়া নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অবৈধ ব্যবহার করে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তারে সহায়তা করেছিল। নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কারণে আট বিলিয়ন ডলারের এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। যারা মার্কিন ভিসানীতিকে গণতন্ত্র উদ্ধার উল্লাসে ফেটে পড়ছেন তাদের মার্কিন নীতির প্রতি আরো তীক্ষè দৃষ্টি রাখার প্রয়োজনবোধ করছি। মার্কিন এ ভিসানীতি মুক্ত বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতার রক্ষক না খড়গ? তা যেমন বড় প্রশ্ন- সামনে মার্কিন নীতি দেশকে কোথায় নিয়ে যায় তাও আমাদেরই ভাবতে হবে।

তানজিব রহমান : গবেষক ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়