আসন্ন নির্বাচনে ইসির বরাদ্দ ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা : সরঞ্জাম কেনাকাটায় ৮০ শতাংশ অগ্রগতি

আগের সংবাদ

রক্তাক্ত গাজায় ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ : হামাসের রকেট হামলায় নিহত ৪০ ইসরায়েলি, পাল্টা হামলায় নিহত ১৯৮ ফিলিস্তিনি

পরের সংবাদ

শ্রদ্ধা হে মহাকালের পথযাত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই। গত বৃহস্পতিবার কানাডার টরন্টোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। কবির প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত বছরের নভেম্বরে তার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। বোনম্যারো থেকে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হচ্ছিল। বয়সের কারণে তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা সম্ভব হচ্ছিল না। এছাড়া তিনি কিডনি, হার্ট ও বয়সজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কবির এনজিওগ্রাম করে দুটি ব্লকের ৯৯ ও ৮৮ শতাংশ সারানো হয়। ফুসফুস ও হার্ট দুটিরই খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থা ছিল। এই দশকে বাংলা কবিতার উন্নয়ন প্রচেষ্টায় হাতেগোনা যে কয়েকজন কবি তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে কবি আসাদ চৌধুরী অন্যতম মননশীল কাব্যশেরপা। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা। কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার সমর্থন একজন লড়াকু সৈনিকের মতো বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কবি বলেছেন-
তোমাদের যা বলার ছিল,
বলছে কি তা বাংলাদেশ?
শেষ কথাটি সুখের ছিল,
ঘৃণার ছিল, নাকি ক্রোধের, প্রতিশোধের
কোনটা ছিল?
বলছে কি তা বাংলাদেশ?
(শহীদদের প্রতি)
তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি আর টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্যও তিনি পরিচিত। তিনি ভরাট কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেও মানুষের মন জয় করেছেন। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অনুবাদকর্মে তার অবদান প্রণিধানযোগ্য। ১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’। তার কবিতায় আছে নতুন সুর। দেশ, দেশের ঐতিহ্য, লোকায়ত জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রেম, সহজিয়া ভাব তার কবিতার উজ্জ্বলতা। আধুনিকতার নামে অকারণ দুর্বোধ্যতা তিনি এড়িয়ে চলেছেন। নিরন্তর পান চিবাতে পছন্দ করা এ মানুষটির মুখে আঠার মতো এক ঝলক হাসি লেগে থাকত। কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন, পাখির ভাষাকেও এ দেশের মানুষ মূল্যায়ন করতে পারে। উদার আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধতা ছড়াতে পারে বাঙালি। তাই পাখি প্রভাতের গানে মানুষকে মুগ্ধ করে তোলে। আসাদ চৌধুরী যেমন প্রকৃতিপ্রেমিক কবি তেমনই মানবপ্রেমী। তার কবিতায় দুইয়ের সম্মিলন ঘটেছে বিশেষভাবে। আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকরির পর এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন। কবি আসাদ চৌধুরী তার কবিতায় নিত্য স্বপ্ন রচনা করে আমাদের কবিতামগ্ন হতে প্রাণিত করেন। মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু যে বিপুল সৃষ্টি ভাণ্ডার রেখে গেছেন, অনেক বছর তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। অন্তিম শ্রদ্ধা হে মহাকালের পথযাত্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়