প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
ডেঙ্গু এখন সবার মধ্যে একরকম দুশ্চিন্তা ও শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মশক নিধন কার্যক্রম যথাসময়ে আশানুরূপভাবে না হওয়ায় এ শঙ্কা আরো বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণত শুষ্ক ও আর্দ্র উভয় মৌসুমে এডিস মশা সক্রিয় থাকে। তবে বর্ষার সময় এদের আধিপত্য একটু বেশি থাকে এবং এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বৃষ্টিপাত বিবেচনা করে। ভারি বৃষ্টি ডেঙ্গুকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করলেও এই বছর বেশির ভাগ সময়ে হালকা বৃষ্টি ডেঙ্গু বিস্তার অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব নির্ণয়ে একটি মৌসুমি জরিপে দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে লার্ভার উপস্থিতি গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। যার কারণে চলমান বর্ষায় এডিস মশার দংশনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অল্প বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা জন্মাছে। ফলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগাম কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। তাদের উচিত ছিল শুরুতেই এডিস মশার লার্ভার স্থানগুলো শনাক্ত ও নিধন করে দেয়া। এ ছাড়া বর্ষার শুরুতে মশার লার্ভা শনাক্ত ও নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং সাধারণ মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গু বিস্তারের প্রধান কারণ। এমনকি দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের ও পত্র-পত্রিকার সূত্রে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু এখন শহর ছেড়ে জেলা, উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। তাই বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীতে ডেঙ্গু মশার প্রজননের স্পট আর যেন বাড়তে না পারে সেদিকে লক্ষ রেখে এডিস মশার উৎসস্থল শনাক্তকরণে এবার ড্রোন ব্যবহার কার্যক্রম শুরু করলেও তা যথার্থ বলে মনে হচ্ছে না। কারণ জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় একটি জরিপে দেখা গেছে, সাধারণত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক মশার প্রজননস্থল শনাক্ত, পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং করা হয়। এতে ৫ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেলে ওই জায়গা বা পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। কিন্তু পরিমাপ ও ম্যাপিং ছাড়া শুধু উৎসস্থল চিহ্নিত করে বিভিন্ন ভবন মালিক বা সাধারণ জনগণকে জরিমানা করলে হবে না। জরিমানার ক্ষেত্রে ম্যাপিং ও পরিমাপও জরুরি। পাশাপাশি লার্ভার চিহ্নিত প্রজননস্থলকে হটস্পট ধরে মশা নিধনে কীটনাশক ছিটানোর ওপরও জোর দেয়ার এবং এডিসের লার্ভা ও মশা নিধনে ব্যবহৃত ওষুধ কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা উচিত। না হয় এ ধরনের লোক দেখানো কার্যক্রমে কোনো সফলতা কাজে আসবে না। সবার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে কীভাবে মশার সংক্রমণ কমানো যায়। তাহলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও কমে আসবে। প্রয়োজনে কীটনাশক ছিটাতে স্প্রে ম্যান ও টিমের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। তাছাড়া ডেঙ্গুর হটস্পট নির্ধারণ করতে প্রয়োজনে হাসপাতাল থেকে রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে ওই এলাকার মশার হটস্পট শনাক্ত করতে হবে এবং সেই জায়গায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে উড়ন্ত মশাকেও নিধন করতে হবে। আর যেসব জায়গায় রোগী নেই সেখানে লার্ভা শনাক্ত করতে হবে খুবই জোরালোভাবে।
কারণ বর্তমান সময়ে এও দেখা যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন কলকারখানা, অফিস ও বেশ কিছু এলাকায় এডিসের লার্ভা পাওয়ার খবর নতুন করে পাওয়া যাচ্ছে। এসব এলাকাতে দ্রুততার সঙ্গে মশার লার্ভা শনাক্ত ও নিধনের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ডেঙ্গুজ্বরের রোগী আরো বাড়তে শুরু করলে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে মহামারির রূপ নিতে পারে। তাই বাড়ির আশপাশে স্বচ্ছ জমাটবাঁধা পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার যেন আর করতে না পারে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। পাশাপাশি বাসাবাড়ির আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যেমন রাখতে হবে, ঠিক তেমনি কোনো অবস্থাতেই গাড়ির টায়ার, রঙের কোটা, অব্যবহৃত প্লাস্টিক কোটা, মাটির পাত্র, ফুলের টব ও ডাবের খোসায় স্বচ্ছ পানি যেন জমে থাকতে না পারে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। না হয় জমা থাকা পানিতে এই মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার বাড়তে থাকবে। নজর দিতে হবে এডিস মশা লার্ভা যেসব জায়গায় বংশবিস্তার করে সেসব জায়গার দিকে। কারণ আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত ও নিধনের কোনো বিকল্প নেই।
বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবখানে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত ও নিধনে প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদি পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম জোরদার ও নিয়মিত ওষুধ ছিটাতে হবে, যেন এডিস মশার বিস্তার করতে না পারে। অন্যথায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো ব্যাপক আকারে দিন দিন দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।