দুদকের মামলা : সাবেক বিমানবালা শোভার ৩ বছর কারাদণ্ড

আগের সংবাদ

ঐতিহাসিক সম্পর্কে পরমাণু শক্তির বন্ধন : বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ইউরেনিয়ামের চালান গ্রহণ করল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

কিশোর অপরাধ, কাউন্সিলিং ও সামাজিক দায়িত্ব

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কিশোর অপরাধ সমাজে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। তাদের অপরাধ নিয়ে অনেক লেখালেখি পত্রিকায় প্রতিদিন নজরে আসে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত কিশোর অপরাধ এখন ছড়িয়ে পড়ছে। পাড়া-মহল্লায়, অলিগলিতে তাদের উৎপাত চোখে পড়ছে। সাতজন ১১ জন সংখ্যায় এমন ধরনের গ্যাং পার্টি দেখতে পাওয়া যায়। এসব গ্যাংয়ে শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত সামান্য পড়ালেখা জানা যুবকদেরও দেখা যায়। এসব গ্যাংয়ের মধ্যে চারিত্রিকভাবে অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির যুবকের বেশি দেখা যায়। তারা সমাজের নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কারণে চরিত্রবান শান্ত সুশৃঙ্খল যুবকরা সমাজে চলতে ফেরতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এসব গ্যাং পার্টির অত্যাচারে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও মানহানির শিকার হচ্ছে সহজ-সরল শিক্ষার্থীরা।
স্কুলপড়–য়া যুবক-যুবতীরা রাস্তায় চলাচলের সময় যৌন হয়রনির শিকার হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ দেয়ার মতো সাহসও অনেকেই রাখে না। এসব গ্যাংয়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকৃতির যুবকের সমাবেশ। তারা ছোটখাটো চুরি, জমি, বাড়িভিটা দখল কাউকে অপমান অপদস্ত করাসহ নানা কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের সমাজের একশ্রেণির মোড়ল বা রাজনৈতিক নেতারা ব্যবহার করতে দেখা যায়। বাস্তবে তাদের মধ্যে প্রকৃতভাবে রাজনৈতিক কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। তাদেরও কোনো দল রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে গ্রহণ করতে এগিয়ে আসে না। রাজনৈতিক মাঠে তারা শুধু অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে। নেতার পেছনে সেøাগান দেয়া লোকজন একত্রিত করার দায়িত্বে এসব যুবকদের পাওয়া যায়।
এসব গ্যাং পার্টি সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার করছে। তাদের অপরাধের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক লিডারদের ছত্রছায়া দেখা যায়। ফলে তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এগিয়ে আসে না। ভুক্তভোগী কোনো মানুষ আইনের আশ্রয়ের জন্য সাহায্য চাইলেও সময়মতো পাওয়া যায় না। তারা কাউকেই পরোয়া করে না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ঘটিয়ে পরিবারের কাছে তারা উচ্ছৃঙ্খল একজন যুবক। পরিবারের সদস্য মা-বাবা বড় জনদের প্রতি তাদের কোনো আনুগত্য পাওয়া যায় না। সমাজ এবং পরিবারে তারা এক আতঙ্কের নাম। মা-বাবা বড় জনদের সঙ্গে হরহামেশা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে দেখা যায়। কারো কোনো আদেশ নির্দেশ মানার তোয়াক্কা তাদের মধ্যে নেই। তাদের চালচলন বেশভূষা কোনো চরিত্রের মধ্যে পড়ে না। একজন আরেকজনকে সংস্পর্শে নিয়ে ধীরে ধীরে যুবসমাজকে তারা ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে নেশার ব্যবহার, মাদক পাচার বেচা-বিক্রি লক্ষ করা যায়। এ কিশোর অপরাধ পার্টি সমাজ এবং পরিবারকে উচ্ছৃঙ্খলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজের জন্য তারা ক্যান্সার। এসব গ্রুপে যারাই একবার ঢুকে পড়ছে তারা আর বের হওয়ার দরজা খুঁজে পাওয়া কঠিন। একদিনেই এসব গ্রুপের সৃষ্টি হয়নি। নানা কারণে অকারণে সুযোগ বুঝে পরিবারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের তাদের সৃষ্টি। অতি আদর অতি যতœ ভালোবাসার ফসল এসব গ্রুপ। কিশোর অপরাধ থেকে নানা নামের গ্রুপের সৃষ্টি হচ্ছে বাংলার প্রতিটি গাঁ গ্রামে।
সমাজ বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রের সুচিন্তিত বুদ্ধিজীবীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যেভাবে সমাজকে ধীরে ধীরে কলুষিত করছে এটি সমাজ বিজ্ঞানীদের মনোযোগ দিতে হবে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কারো জন্য কল্যাণকর হবে না। সে সময় আসার পূর্বেই দেশের সব ধরনের ক্লাব সমিতি নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। কোন ক্লাব কোন সমিতি কী কী কাজ করছে, যুবসমাজকে নিয়ে কী ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে- তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিনিয়ত তদারকির মধ্যে রাখতে হবে। কিশোর ছাত্র যুবক তাদের গ্রুপিং অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পরিবার সমাজ থেকে কিশোর অপরাধ অপরাপর সব ধরনের অপরাধমূলক সংগঠনগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। কিশোর অপরাধ নিয়ে জরিপ করলে বাংলাদেশে তাদের অপরাধের চিত্র পত্রিকার পাতায় পাতায় আসবে। লেখার উদ্দেশ্য তাদের সামাজিকভাবে হেয় করা নয়। তাদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজের আদর্শিক পথে নিয়ে আসা। সময় থাকতে পরিবার ও সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মাহমুদুল হক আনসারী : লেখক ও সংগঠক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়