প্রস্তুতি ম্যাচ : ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের হার

আগের সংবাদ

রাজনীতিতে সমঝোতার উদ্যোগ! : বৈরিতার পারদ নিম্নমুখী, আ.লীগের ৫ সদস্যের কমিটি, প্রতিনিধি দল গঠন করছে বিএনপি

পরের সংবাদ

ক্ষতবিক্ষত চারণকবি রাধাপদ সরকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে দুর্বৃত্তের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কুড়িগ্রামের চারণকবি রাধাপদ সরকার। সাত দশকের বেশি সময় ধরে যে কবি পথে-প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে কিছু দেশীয় যন্ত্র বাজিয়ে চারণকবিতা বলে বেড়াতেন, সেই ৮০ ঊর্ধ্ব বয়সি মানুষটির কী অপরাধ ছিল তা আমাদের জানা নেই।
তবে তিনি যে কুড়িগ্রামের একজন জাতকবি সেটা আমরা জানি। একজন সৃজনশীল এবং সাহিত্য সৃষ্টির জনককে কারা আক্রমণ করে। তার চলার পথের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সৃজনশীলতার পথও রুদ্ধ করার অপচেষ্টা করতে পারে, সেটা আমরা সবাই কমবেশি আঁচ করতে পারি। এখন প্রশ্ন হলো- এখনো কি আমরা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকব?
চারণকবি রাধাপদ সরকারের ওপর এমন বর্বর হামলার জন্য একটি বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব না, যে আন্দোলন দেখে আক্রমণকারীদের ভয়ে পা কাঁপবে এবং ভবিষ্যতে আর কোনো রাধাপদ সরকারের ওপর হামলার চিন্তা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না। আমরা সবকিছু সরকারের ওপর দায় দিয়ে বসে থাকলে চলবে- এ ধরনের সৃজনশীল ও প্রগতিশীল কবি-সাহিত্যিকদের ওপর যখন হামলা হয় তখন বুঝতে হবে ভেতরে ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী চাইছে না দেশ প্রগতির পথে এগিয়ে যাক এবং দেশের মানুষ সৃজনে-মননে উন্নতি করুক। ফলে তাদের এমন আচরণ শুরু থেকে চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে পরবর্তী সময়ে এর পরিণতি সবার জন্য ভয়ানক হতে সময় লাগে না। মূলত চারণকবি সাহিত্যের একটি অন্যতম অংশ হলেও এটির চর্চা আমরা তেমনভাবে করি না। যারা করে তাদের অনেকের খোঁজ-খবরও আমরা রাখি না।
নড়াইলের বিজয় সরকারের পর এই প্রথম আমি কুড়িগ্রামের রাধাপদ সরকারের কথা পত্রপত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি। তাও এ কবির গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। যে কোনো বিবেকবান মানুষই সোশ্যাল মিডিয়ায় চারণকবি রাধাপদ সরকারের এ ছবি দেখে আঁতকে উঠবেন। মূলত চারণকবিতা আমাদের দেশীয় সাহিত্যের এমন একটি ধারা, যে ধারা কবিরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেই ইতিহাসগুলোই মানুষকে বলেন, যেগুলো অতীতে ছিল এখন সেগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। চারণকবিরা এ কাজ দশকের পর দশক করে আসেন। চারণকবিরা তাদের কবিতাগুলো মুখে মুখে এক ছন্দময়তা সুরে বলে বেড়ান। আর এই ছন্দময় কবিতাই হচ্ছে চারণকবিতা। বাংলাদেশের বেশির ভাগ চারণকবি আর্থিকভাবে অসচ্ছল বিধায় অনেক সময় এসব কবি তাদের কবিতা মুখে মুখে মানুষকে শুনিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সে ধরনের একজন গরিব চারণকবি হচ্ছেন রাধাপদ সরকার। তিনি কুড়িগ্রামের গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষকে তার কবিতা শুনিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এমন ৮০ ঊর্ধ্ব চারণকবি আক্রমণকারীদের কী এমন ক্ষতি করল যে তাকে এভাবে নির্মমভাবে আঘাত করল? আমরা কুড়িগ্রামের চারণকবি রাধাপদ সরকারের ওপর আক্রমণকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার চাই। দেশীয় সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ রাধাপদ যেন সঠিক বিচার পান এবং তার সাহিত্য চর্চার যেন ব্যাঘাত না ঘটে সে দায় স্থানীয় প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা কুড়িগ্রামের চারণকবি রাধাপদ সরকারের সুচিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি এবং সুস্থ হওয়ার পর ওই চারণকবির নিরাপত্তার বিষয়টিও স্থানীয় প্রশাসনকে দেখভাল করার জন্য অনুরোধ করছি। আশা করছি কুড়িগ্রামের চারণকবির ওপর হামলাকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়