মানবতাবিরোধী অপরাধ : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খান রোকনুজ্জামান গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

ঝুঁকি প্রবল, প্রস্তুতি কম > বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা > মৃত্যুকূপ হবে রাজধানী > দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা নিয়ে সংশয়

পরের সংবাদ

পুলিশের সামনে যত চ্যালেঞ্জ : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মোটা দাগে সাতটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, যানজট পরিস্থিতি সহনীয় রাখা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, সাইবার ক্রাইম রোধ করা এবং সর্বোপরি রাজনীতি ও নির্বাচনকেন্দিক দায়িত্ব পালনে পুলিশকে বিতর্কমুক্ত রাখা অন্যতম। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের চেষ্টা ও উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করে জনগণের আস্থা অর্জনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচনে যাতে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ না হয় ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকে সে বিষয়টিকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন নতুন ডিএমপি কমিশনার।
রাজধানীর মিন্টো রোডে গতকাল সোমবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স সেন্টারে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তা নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগের কথা জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা যাতে রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি করতে না পারে- সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার অতীতে দেখা গেছে। আগামী নির্বাচনে কোনো ব্যক্তি বা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর তেমন অপচেষ্টা ঠেকাতে যথেষ্ট সাহস ও শক্তি ডিএমপি সদস্যদের রয়েছে। এটি পুলিশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। অনুমতি ছাড়া রাজধানীতে কোনো দল কোনো কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধেও নির্ভয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপি কমিশনার।
হাবিবুর রহমান আরো বলেন, রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে যা-যা করা প্রয়োজন সবকিছুই করবে ডিএমপি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন হচ্ছে; সবশেষ তেজগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কমিশনার হিসেবে আপনি কী পদ্ধতি নেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, জামিন একটি বিচারিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় একজন অপরাধী আদালত থেকে বিচার পেতে পারে। কিন্তু পুলিশের তখনই কিছু করার থাকে- যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বা অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করে বা অপরাধ সংগঠন করে থাকে। একজন অপরাধী সে ছোটই হোক বা বড়ই হোক- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর ডিএমপি। তাই যারা জামিনে বেরিয়ে আসছে তাদেরকেও কঠোর মনিটরিংয়ে রাখার জন্য পুলিশে সব

ইউনিটে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, অন্যান্য দেশের ট্রেডিশনাল ক্রাইম থেকে আমাদের অপরাধ একটু আলাদা। পুলিশের নৈমিত্তিক কাজ চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ও রাহাজানি প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দেশে আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া আছে। যেসব অপরাধী জেল থেকে বের হচ্ছে তাদের কঠোর নজরদারি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরাধী ছোট হোক বড় হোক, কাউকে ছাড় নয়। কিন্তু ডিএমপি ক্রাইমের যে ধরন- গতানুগতিক ধারা বদলে সেটি নতুন দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হলো দেশে ও সারা বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়ন। সেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ছাপিয়ে আজ আমাদের নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সাইবার ক্রাইম। এই সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কর্মপন্থা নিয়েছে।
জনবল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিএমপির জনবল রয়েছে ৩৪ হাজার। সেটি যদি রাজধানীর ২ কোটি ২৪ লাখ জনগণের জন্য ভাগ করি তবে মাথা অনুযায়ী আমাদের জনবল খুব কম। তারপরও ডিএমপির সদস্যরা যেভাবে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, দক্ষতার সঙ্গে অপরাধ দমন করে যাচ্ছে- এতে আমি মনে করি, অন্যান্য মেট্রোপলিটন পুলিশের থেকে ডিএমপি অনেক দক্ষ ও যোগ্য। এমন কি বিদেশের সঙ্গে তুলনা করলেও ডিএমপি অনেক উন্নত বলে আমি মনে করি। যে কোনো উপায়ে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা শহরে স্পট ধরে ধরে ট্রাফিক (যানজট) সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীর প্রধান সমস্যা নিঃসন্দেহে ট্রাফিক। ক্রমবর্ধমান গাড়ির চাপ, রাস্তার স্বল্পতা এবং জনসংখ্যার চাপে ট্রাফিক কমানো যাচ্ছে না। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা প্রয়োগ করতে চাই। বাসগুলো রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে। এ বিষয়ে সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য চালকদের ট্রেনিং দেয়া হবে, তাদের নিয়ে কর্মশালা করা হবে। যাতে তারা এই কাজ না করেন। তিনি বলেন, পথচারী পারাপারের সময় অনেক গাড়ি স্লো হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক সময় রাস্তার মাঝ দিয়ে নারী-শিশু দৌড়ে পার হয়। তিনি বলেন, আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পর প্রথমেই মিটিং করেছি ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে। ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে সবার সহযোগিতা চাই। বিশ্বের সব উন্নত শহরে ট্রাফিক বাতি রয়েছে জানিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে এবং কোঅর্ডিনেশন কমিটি গঠন হয়েছে। খুব অল্পদিনের ভেতরে আমরা ট্রাফিক বাতি চালু করব। যাতে সিগন্যাল বাতি অনুযায়ী ট্রাফিক কার্যক্রম করা যায়। ঢাকা শহরে যে ট্রাফিক সমস্যা তা ট্রাফিক পুলিশের একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। ঢাকা শহরে কিছু উন্নয়নকাজ চলছে। এই উন্নয়নকাজ শেষ হলে অনেকাংশ ট্রাফিক সমস্যাই কমে যাবে। আগে কেউ চিন্তা করতে পারত না বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট ১০ মিনিটে আসতে পারবে। এখন তা সম্ভব হচ্ছে। হাবিবুর রহমান আরো বলেন, ট্রাফিক পুলিশকে যে পরিমাণ কষ্ট করে রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়, রমজান মাসেও তারা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ইফতার করেন। সেই বাস্তবতাও রয়েছে। খুব অল্পদিনের মধ্যে বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ের যানজটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্পট ধরে ধরে সমাধান করা হবে। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনই ট্রাফিকের এডিশনাল কমিশনারকে বলব জায়গাটার নাম টুকে রাখতে। আজ (সোমবার) বিকেলে ওই জায়গা এডিসি-এসি ভিজিট করবেন এবং রিপোর্ট দেবেন। সেখানে কি কি সমস্যা রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এর সমাধান আমি চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে পুলিশ কোনো চিন্তা করে না বলে জানিয়েছেন কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, একটি দেশের ভিসানীতি কি হবে এটি তাদের বিষয়। এটা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের চিন্তার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমি কোনো দিন… একটি দেশের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, আমি কোনো দিন ওই দেশে যাইনি, আমার যাওয়ার ইচ্ছাও নেই। তিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, আমি যোগদান করে আমার পুলিশের ভেতরে এরকম কোনো চিন্তার বিষয় দেখিনি। এটি একটি পর্যায়ের ব্যবস্থা। সংগঠন পর্যায়ের কোনো ব্যবস্থা নয়। সংগঠন হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময়ই ঢাকাবাসীর জন্য এবং ঢাকার জনগণের জন্য, নিরাপদ ঢাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারা (পুলিশ) এগুলো নিয়ে কোনো চিন্তা করে না।
থানার সেবার মান বাড়াতে ‘মেসেজ টু কমিশনার’ হটলাইন সেবা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন হাবিবুর রহমান। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মেসেজ টু কমিশনারে’ ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে সেবা না পেলে যে কেউ কমিশনার বরাবর মেসেজ দিতে পারবেন। এছাড়া ডিবিতে গিয়েও সেবা না পেলে যে কেউ মেসেজের মাধ্যমে সরাসরি আমাকে জানাতে পারবেন। তিনি বলেন, ট্রাডিশনাল ক্রাইম থেকে ডিএমপির ক্রাইমের ধরন আলাদা। নতুন ক্রাইমের দিকে ধাবিত হচ্ছে ডিএমপি এলাকা। এর বড় কারণ প্রযুক্তি। সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় ডিএমপি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। ডিএমপির দক্ষতা ও যোগ্যতা অনেক বেশি।
এডিসি হারুনকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, যার যতটুকু অপরাধ, ঠিক ততটুকু শাস্তি দেয়া হবে। বাংলাদেশ পুলিশ একটি শৃঙ্খল বাহিনী। বাহিনীর যে নিয়ম কানুন আছে- সেই নিয়ম কানুনের মধ্যে চলে এবং চলবে। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এপিএস আজিজুল হক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার যে ডিপার্টমেন্ট আছে সেটিও সরকারি বিধিবিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। আমি মনে করি জড়িত দুজন সরকারি চাকরি করেন এবং দুজনই ক্যাডার কর্মকর্তা। সেখানে দুজনের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। যার যার দায়িত্ব সেই সেই পালন করবে বলে আমি মনে করি।
সাধারণ মানুষকে তল্লাশীর নামে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়া, মামলা ছাড়া ধরে এনে টাকা-পয়সা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ডিএমপির কোনো সদস্য অপরাধে জড়ালে আপনি কি উদ্যোগ নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, অপরাধী পুলিশ হোক আর পুলিশের বাবা- সে অপরাধী। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার; অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খ. মহিদ উদ্দিন; অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ; যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপকমিশনার ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়