বৈষম্য নিরসনের দাবি : কর্মবিরতিতে যাচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি

আগের সংবাদ

পুলিশের সামনে যত চ্যালেঞ্জ : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পরের সংবাদ

বিশ্ব শিশু দিবস আজ, শিশু অধিকার সপ্তাহ শুরু : শিশু অধিদপ্তরের জন্য আর কত অপেক্ষা?

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শিশুদের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তরের দাবি দীর্ঘদিনের। শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও সরকারকে সুপারিশ করেছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বারবার প্রতিশ্রæতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। বলা যায়, প্রতিশ্রæতিতেই তা আটকে আছে। দেশের ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ৮ কোটি শিশুর জন্য আলাদা কোনো অধিদপ্তর নেই।
২০১৬ সালে ১০টি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার জোট চাইল্ড রাইটস এডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছিলেন, ‘শিশুদের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তর থাকা জরুরি। কারণ, শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। যুব, নারীদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর থাকলে শিশুদের জন্য কেন নয়? শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর চাওয়া কোনো অতিরিক্ত চাওয়া নয়।’ অচিরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি।
২০২২ সালের ১১ আগস্ট বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে যত দ্রুত সম্ভব, শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর করা হবে। অথচ আজো সেই ন্যায্য দাবিটি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
জানা যায়, বাংলাদেশে শিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম শিশু অধিকার আইন প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে (সিআরসি) স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের আইন কাঠামোতে শিশু সুরক্ষার জন্য রয়েছে নানা আইন ও নীতিমালা, যেমন জাতীয় শিশু নীতি-২০১১, শিশু আইন-২০১৩, নারী ও শিশু নির্যাতন ও দমন আইন-২০০০, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫, শ্রম আইন-২০০৬, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ প্রভৃতি। বর্তমানে প্রায় ২৩টি মন্ত্রণালয় শিশু উন্নয়ন ও অধিকারের নিয়ে কাজ করছে। এই মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে নেই সমন্বিত পরিকল্পনা, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ ও এর বাস্তবায়ন। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার ও আদালতের বিভিন্ন সময়ের নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে প্রায়ই সমন্বয়হীনতা এবং এক মন্ত্রণালয়ের অন্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ব্যর্থতার দায়ভার চাপানোর প্রবণতা দেখা যায়। এখানেই শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তরের দাবিটি বারবার ঘুরে

ফিরে আসে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর হওয়া উচিত। আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি। একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল সেখানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনও ছিল। সেটি স্থগিত হয়ে গেছে এবং এখন এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না। আলাদা একটা অধিদপ্তর না হওয়ার কারণে শিশুদের বিষয়গুলো চার-পাঁচটা মন্ত্রণালয়ে ছড়ানো।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, শিশুদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে আলাদা অধিদপ্তর থাকা জরুরি।
এই প্রেক্ষাপটে ‘শিশুর জন্য বিনিয়োগ করি, ভবিষ্যতের বিশ্ব গড়ি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। একই সঙ্গে শিশুর অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো বেশি উদ্যোগী ও সচেতন করতে আজ থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পালিত হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হয়।
বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ে আলাদা বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচি : আজ সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ইউনিসেফ, দেশি ও বিদেশি শিশু সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। শিশুদের কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু সংলাপ, ক্রীড়া, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি ও গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম আয়োজন করছে আলোচনা সভা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘আমার কথা শোনো, ছোটরা বলবে বড়রা শুনবেন’ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন এবং জাতীয় পর্যায়ে পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন শিশু সংগঠনের রয়েছে শিশুদের শিক্ষা, বিকাশ, অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ে পৃথক পৃথক কর্মসূচি। বিশ্ব শিশু দিবসের অনুষ্ঠান ও টকশো বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশে বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হবে। বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ এবং আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া পোস্টার, পিভিসি ও ফেস্টুন-ব্যানার স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভবন ও ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কদ্বীপ সাজানো হয়েছে।
দেশের সব জেলা এবং উপজেলায় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। এই আয়োজনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে রয়েছে ইউনিসেফ, শিশু অধিকার ফোরাম জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, সিনারগোসবাংলাদেশ, এসওএস চিলড্রেন ভিলেজ, সেভ দ্য চিলড্রেন, এডুকো, অপারাজেয় বাংলাদেশ, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামসহ বিভিন্ন শিশু সংগঠন ও সংস্থা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়