ইউরোপীয় কাউন্সিল : জাতিসংঘ ‘অথর্ব ও খোঁড়া’ হয়ে গেছে

আগের সংবাদ

পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম! : বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম আ.লীগের, ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে খালেদার মুক্তি চায় বিএনপি

পরের সংবাদ

আলোকবর্তিকারা কেন এই পথে?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের সমাজে আত্মহত্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় সব শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষই ঝুঁকছে আত্মহত্যার দিকে! যেসব মেধাবী এই অন্ধকারের আলোকবর্তিকা হওয়ার কথা, যারা নেতৃত্ব দেবে আগামীর বাংলাদেশকে, তারাও পা বাড়াচ্ছে এই পথে। স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে জীবন থেকেই ঝরে পড়ছে তারা। একই সঙ্গে স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের পরিবারের স্বজনদের। আত্মহত্যা কেন করছে এই মেধাবী তরুণরা? সে নিজে দায়ী? নাকি সমাজ ও রাষ্ট্র দায়ী? আত্মহত্যার পথ পরিহার করা যায় কীভাবে?
দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেখানেও এর প্রবণতা কম নয়। গত এক মাসের ব্যবধানে আত্মহত্যা করেছেন তিন শিক্ষার্থী। গত তিন বছরে প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা যায়। অথচ এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের টনক নড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। দিবস কেন্দ্রিক দু-একটি প্রোগ্রাম ছাড়া বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দু-একদিন আলোচনা হওয়ার পর সবাই ভুলে যায় এ ঘটনা। কিছুদিন পর আবারো আরেকটি মৃত্যুর সংবাদ। এভাবেই চলছে। কারো যেন কোনো দায় নেই!
স্বপ্নবাজ তরুণরা যখন স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছায়, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে, ঠিক তখনই ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে তারা। কেউ অভিমানে, কেউ প্রেমঘটিত কারণে কিংবা কেউ হতাশায়! আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যা একটি নিতান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিক আচরণ বলে প্রতীয়মান হলেও ফরাসি সমাজতত্ত্ববিদ এমিল ডুর্খেইম এটিকে সামাজিক ঘটনা বলে প্রমাণ করেন। তার মতে, আত্মহত্যা হলো স্বেচ্ছাকৃত আত্মধ্বংস; কিন্তু এই স্বেচ্ছাকৃত কর্মটির কারণ সমাজের তথা সামাজিক সংহতি বা সমাজের নৈতিক বিন্যাসের মধ্যে নিহিত।
আত্মহত্যা একটি মহাপাপ। ইসলাম কিংবা কোনো ধর্মেই আত্মহত্যার মতো কোনো অপরাধকেই সমর্থন করে না। এহেন কর্ম থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব প্রদান করে বাণী প্রচার করেছে সব ধর্ম। এই প্রবণতা মহামারি আকারে ধারণ করার আগেই আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। মৃত্যুর পর হা-হুতাশ করতে পছন্দ করি আমরা; কিন্তু মৃত্যুর আগে একজন মানুষের যতœ নিতে ভুলে যাই। সে অযতেœর কারণে আমরা স্বপ্নের অপমৃত্যুর সাক্ষী হচ্ছি বারবার।
দেখুন যে প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে শেষ করছি, সে কি নিদারুণ বেঁচে থাকে। আমার এই মৃত্যু কি তাহলে অর্থহীন নয়? যে হতাশায় নিজেকে শেষ করছি, সেটি তো পূরণ হচ্ছেই না বরং নিজেকে ধ্বংস করছি। হতাশাকে পরিশ্রম দিয়ে জয় করতে হবে। একবার না পারলে শতবার চেষ্টা করতে হবে। আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে এই রাষ্ট্রকে, এই সমাজকেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিতে হবে। যত বেশি সচেতনতা তৈরি করা যাবে, তত বেশি এই প্রবণতা হ্রাস পাবে।
পৃথিবীতে প্রতিটি সমস্যারই সমাধান আছে, তেমনি আত্মহত্যা না করে এসব সমস্যা থেকে বাঁচারও সমাধান আছে। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। নিজের জন্য বাঁচতে হবে, পরিবারের জন্য বাঁচতে হবে, স্বপ্ন পূরণের জন্য বাঁচতে হবে। পৃথিবীতে কেউ ভালো না বাসলেও নিজেকে নিজে ভালোবাসতে হবে। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এটি একটি সমস্যা- এটি আমাদের বুঝতে হবে এবং বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে।

আমজাদ হোসেন হৃদয় : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়