সার্ভারের রক্ষণাবেক্ষণ : আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত ইসির এনআইডি সেবা বন্ধ

আগের সংবাদ

দাম চড়া, সরবরাহেও টান : কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি, আরো ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি

পরের সংবাদ

তৈরি পোশাকশিল্প : বাড়ছে উৎপাদন অন্যদিকে কমছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশই আসে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে। তৈরি পোশাকশিল্পের অভূতপূর্ব সাফল্য বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে সিংহভাগ ভূমিকা রাখছে। যেটা সর্বত্র পরিদৃশ্যমান। একদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পোশাক উৎপাদন অন্যদিকে তেমনি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। যেটা চোখের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। পোশাক উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণ পানি প্রয়োজন। ওয়েট প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে যেমন- ডাইং, প্রিন্টিং, স্কাওয়ারিং, ডিসাইজিং, ব্লিচিং এবং ফিনিশিং প্রতিটি ক্ষেত্রে পানির দরকার হয়। তবে যে কোনো পানি দিয়েই এই প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হয় না। শুধু বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার দ্বারাই ওয়েট প্রসেসিংয়ের সব প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। যার জন্য আমাদের তৈরি পোশাক খাত সম্পূর্ণই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। এ দেশের পোশাক কারখানায় এক কেজি পোশাক পণ্য ওয়াশে ২৫০ লিটার পানি ব্যবহার করা হয়, অথচ পুরো বিশ্বে এর জন্য ব্যবহার করে মাত্র ৬০-৭০ লিটার। গার্মেন্টস শিল্পে ১টি সুতি টি-শার্ট এবং ১টি ডেনিম জিন্স প্যান্ট তৈরি করতে পানি প্রয়োজন হয় ১০ হাজার লিটারেরও বেশি। গার্মেন্টস শিল্প কতটা পানিগ্রাসী তা ঊষষবহ গধপধৎঃযঁৎ ঋড়ঁহফধঃরড়হ-এর একটা গবেষণা দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। গবেষণা মতে, প্রতি বছর পোশাক উৎপাদনের জন্য প্রায় ৯৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রয়োজন হয়, যা দিয়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ অলিম্পিক সুইমিংপুল ভরা যাবে। আইএফসির গবেষণা মতে, বাংলাদেশের আরএমজি খাতে প্রতিদিন ৪১১ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। প্রতি বছর গার্মেন্টস শিল্পের সুতা ও পোশাকে ডাইং ও ওয়াশিংয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি লিটার পানি, যা ২ কোটি মানুষের ৫-১০ মাসের ব্যবহৃত পানির সমান। শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত পানির সম্পূর্ণ জোগান আসছে ভূগর্ভস্থ থেকে, যার ফলে বাড়তি চাপ পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে। উদ্বেগজনক হারে কমছে পানির স্তর। যেসব এলাকায় ওয়াশিং এবং ডায়িং কারখানা রয়েছে। যেমন- ঢাকার সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহের ভালুকা। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের পরিসংখ্যানে এই অঞ্চলগুলোতে দ্বিগুণের বেশি পরিমাণে কমেছে পানির স্তর। গাজীপুরে যেখানে ২৬ মিটার গভীরে পানির লেয়ার পাওয়া যেত, এখন সেখানে ৫১ মিটার গভীরে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে যে অঞ্চলগুলোতে পোশাক কারখানা নেই, যেমন- ঢাকার ধামরাই, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, গাজীপুরের কাপাসিয়া সেখানে ১ মিটারেরও কম হ্রাস পেয়েছে পানির স্তর।
গড়ে প্রতি বছর ২.৫ মিটারেরও বেশি কমছে পানির স্তর। এভাবে কমতে থাকলে ২০৫০ সালের দিকে এটা ১১০-১১৫ মিটারে নেমে যাবে। এভাবে হ্রাস পেতে থাকলে অচিরেই দেখা দেবে পানির সংকট। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে সরকার মাথা ঘামালেও ভবিতব্য এ সমস্যা নিয়ে ভাবছে না। শিল্প কারখানাকে ভূগর্ভস্থ পানির পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপরও জোর দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা এবং কলম্বোর মতো ভূ-উপরিস্থ বৃষ্টির পানি ব্যবহার করাটাও সময়োপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পে পানি ব্যবহার কমানোর জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উন্নত প্রযুক্তির ওপর বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করা উচিত। পানি পরিশোধন করে এবং পানির অপব্যবহার যাতে না হয় সেদিকটাও লক্ষ রাখতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘পরিবেশ অধিদপ্তর’ সব পোশাক শিল্প কারখানাকে পরিবেশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদানের সময় পানিদূষণ রোধে সেই প্রতিষ্ঠানের কী কী ব্যবস্থাপনা বা পরিকল্পনা রয়েছে তা জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। এই পরিকল্পনাকে ‘৩জ চষধহ’ বলা হয়। ৩জ চষধহ বলতে বোঝায় জবফঁপব, জবঁংব, জবপুপষব অর্থাৎ পানির ব্যবহার কমানো, পানির পুনঃব্যবহার এবং পানি পরিশোধন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এই নিয়ম সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় কল-কারখানাগুলো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সুনির্দিষ্ট পানি ব্যবস্থাপনা ছাড়াই উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান রাখছে। এ বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট, কঠোর এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এই সময়ে সরকারকে পানির ছায়ামূল্য নিয়েও ভাবা উচিত। পোশাকশিল্প থেকে প্রাপ্ত আর্থিক মূল্যের পাশাপাশি অদৃশ্য মূল্যের দিকেও নজর রাখতে হবে। নইলে অচিরেই তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মতো চড়া দামে পানিও কিনে পান করতে হবে। পানি সংকট নিরসনে আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে চাইলেও কিছু করতে পারি। বিলাসিতা করে বাড়তি কাপড় না কেনা। তবে আপনি একা বিরত থাকলে কোনো লাভ হবে না; কিন্তু ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ২-৩ কোটি মানুষও যদি এক জোড়া টি-শার্ট প্যান্ট কম কেনে, তা হলে নিজেই ভেবে দেখুন কী পরিমাণ পানি বেঁচে যেতে পারে!

তাহফিম হাসান মেহেদী : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়