গ্রেপ্তার ৩ : মাদকের টাকা যোগাড় করতে চুরি

আগের সংবাদ

সাহারার সেকাল একাল

পরের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া : বিএনপির ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণার পর দিনই টানা কর্মসূচি দিল আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : টানা কর্মসূচি নিয়ে ফের ‘শক্তি পরীক্ষায়’ নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। সরকার পতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের নতুন পর্যায়ে ১২ দিনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। অন্যদিকে শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথের দখল ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। প্রতিটি সমাবেশেই লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটিয়ে বড় শোডাউনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। কোনো অবস্থায় সরকারবিরোধীদের রাজপথ দখল এবং সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ দিতে চায় না তারা।
এর আগে গত জুলাই ছিল সবচেয়ে রাজনৈতিক উত্তাপের মাস। পৃথক পৃথক কর্মসূচি নিয়ে দুই দলই উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজপথে। দেশব্যাপী শোডাউনের রাজনীতিতে ছাড় দেয়নি কোনো দলই। বড় ধরনের কোনো সহিংসতা না ঘটলেও বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় রক্ত ঝরেছে কোথাও কোথাও। শোকের মাস আগস্টে রাজনৈতিক কর্মসূচি স্তিমিত ছিল। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। গত শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ-বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। আর সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত রাজপথে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। আর আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ওইদিন চট্টগ্রামের মিরসরাইতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। জনমনেও ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
তবে শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলটির নেতারা বলছেন, জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। নৈরাজ্য সৃষ্টি সরকারি দলের কাজ নয়। বরং নৈরাজ্য প্রতিহত করাই উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই সংঘাতের রাজনীতি করে না। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ আওয়ামী লীগ। বিএনপি যখন রাস্তায় নামে তখন আর তাদের বিশ্বাস করা যায় না। সাপকে বিশ্বাস করা যায়; কিন্তু বিএনপিকে নয়। আমরা আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করব। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপিও তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না। কিন্তু নৈরাজ্য করলে শক্তহাতে প্রতিহত করা হবে।
অন্যদিকে বিএনপির দাবি, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে তারা। কোথাও কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়নি। বরং আওয়ামী লীগই বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির

সদস্য ড. মঈন খান ভোরের কাগজকে বলেন, আমি মনে করি না পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এটি। বিএনপি যখন কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ ঠিক তখনই পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। কিন্তু বিএনপি কোনো পাল্টা কর্মসূচি দেয়নি। কাজেই এখানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির প্রশ্নই আসে না। বিএনপি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। বিগত এক বছর যাবত আমরা রাজপথে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছি; কিন্তু কেউ বলতে পারবে না- বিএনপি এক সেকেন্ডের জন্য কোথাও কোনো শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ করেছে। বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো লগি বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ বিগত ১৪ বছর ধরে বিএনপির ওপর মারমুখী আচরণ করে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এভাবে উস্কানি দিয়ে বিএনপিকে সংঘাতের পথে নিয়ে যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ মারাত্মক ভুল করবে।
এদিকে দুই দলকেই সহিষ্ণুতার সঙ্গে কর্মসূচি পালনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সহিংসতার পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে ভোটের মাঠ প্রস্তুত করাই এখন রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো সংঘাত হবে বলে আমার মনে হয় না। দূরত্ব নিয়েই দুই দল কর্মসূচি পালন করবে। আমি বিশ্বাস করি বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে। সহিংসতায় যাবে না। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আগেই সহিংসতা করত। আমি মনে করি না সহিংসতা হবে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারে। এছাড়া সরকারও কখনোই সংঘর্ষে যাবে না। তবে রাজনীতির নামে নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করা হলে সরকার নিশ্চয়ই বসে থাকবে না। তখন সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।
অন্যদিকে বিশৃঙ্খলা করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই দিনে কর্মসূচি দিয়েছে- এমনটা আমরা অনেকবারই দেখেছি। সেগুলোতে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা বিঘœ ঘটেনি। নতুন করে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুদলই টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আশা করি। আমাদের কথা স্পষ্ট, কোথাও কোনো দল বা ব্যক্তি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
নতুন কর্মসূচি : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এর আগে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম গেটের সামনে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এছাড়াও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার নামে মিথ্যাচার করে জনগণকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। নির্বাচন বানচাল করার জন্য অশুভ কার্মসূচিও দিচ্ছে তারা। আশা করছি বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বাধা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে কোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর সেটা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এ নেতা আরো বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সুস্থ আছেন। বিদেশে চেকআপ শেষে ফিরে আসবেন। হয়তো সমাবেশেও যোগ দেবেন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : আগামী শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম গেটের সামনে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটায় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ উত্তরায় এবং মহানগর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করবে। ২৬ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জে সমাবেশ হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে সমাবেশ করবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। একই দিনে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ঢাকার কাফরুলে সমাবেশ করবে। ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিনে একই দিনে ঈদে মিলাদুন্নবী দোয়া মাহফিল বাদ আসর। একই সময়ে সারাদেশে একই কর্মসূচি পালিত হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর আড়াইটায় কৃষক লীগের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগামী ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়