ডেমরায় পুলিশের অভিযান, গুলিতে যুবক আহত

আগের সংবাদ

ডিমের বাজারে মুনাফার থাবা : ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন, আমদানি করা ডিমে চাহিদা মেটাবে মাত্র একদিনের

পরের সংবাদ

শিক্ষা ব্যবসায়িক পণ্য নয়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর ৮-এ বলা আছে, ‘বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সবার জন্য শিক্ষার নিরবচ্ছিন্ন এবং সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা। শিক্ষানীতির ২৫-এ বলা আছে, শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাব্যয় অতি উঁচু। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেই লক্ষাধিক টাকা ভর্তি ফি নেয়া হয়। মাসিক বেতন নেয়া হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা, ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষের পক্ষে ছেলেমেয়ে পড়ানো দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।
সমাজের উচ্চবিত্তরাই নামি-দামি এসব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সুযোগ পান। বিভিন্ন ধরনের সুবিধা সংবলিত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ সীমিতসংখ্যক সুবিধাভোগী ভোগ করে থাকেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সেশন ফি ছাড়াও বিভিন্ন নামে বড় অঙ্কের ফি নেয়ার কথা শোনা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মেডিকেল কলেজ বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তারা নামমাত্র ব্যয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান। অথচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বেসরকারি মেডিকেল বা অন্য কলেজে শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে একই পর্যায়ে ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন স্রেফ একটি পণ্য। বর্তমানে শিক্ষার সঙ্গে অর্থের বিষয় মুখ্য হয়ে উঠছে। এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা অর্জন একেবারে ফ্রি। শিক্ষিত মানুষের মৌলিক অধিকার বিবেচনায় রাষ্ট্র শিক্ষার সব খরচ বহন করে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রাষ্ট্র যখন শিক্ষা খরচ পুরোটা বহন করতে পারছে না, তখন সমাজে ভিন্ন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। অনেক শিক্ষা ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা ক্রেতাদের নানাভাবে ফাঁকি দিচ্ছেন। সেখানে শিক্ষা পণ্যের গুণগত মান বজায় না রেখে ক্যাশ খামে দেয়া হচ্ছে, যাকে সার্টিফিকেট বাণিজ্য বলা যেতে পারে। এমন কাজে লিপ্তরা অসাধু ব্যবসায়ী। শিক্ষাকে সর্বত্র বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে; ফলে শিক্ষা আজ অনেক ব্যয়বহুল।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ, এমবিবিএস কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের খরচ আকাশছোঁয়া। টাকা দিয়ে শিক্ষা কিনলে আর কেউ শিক্ষার্থী থাকবে না, তাদের ক্রেতা নামে চিহ্নিত করা উচিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ালেখা করে, তারা শিক্ষার্থী না ক্রেতা। আর এক দেশে তো দুই নিয়ম চলতে পারে না। শিক্ষার দাম বাড়িয়ে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মানহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনেকে পণ্য হিসেবে ভাবতে চান। অন্যদিকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচও প্রচুর। শুধু চড়া টাকার অভাবে মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্তদের পড়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বদলে বাজারের প্রতিযোগিতা, বেসরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারিকরণের পক্ষে শিক্ষার প্রসার ঘটলেও মানের ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে না।
টেকসই উন্নয়ন-লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্যপূরণ করতে হলে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ অবশ্যই বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে এবং শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শিক্ষা কোনো পণ্য নয়। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে শিক্ষাকে সর্বজনীন করা এখন সময়ের দাবি।

অমল বড়ুয়া : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়