ডেঙ্গু পরিস্থিতি : ১৫ দিনে মৃত্যু হয়েছে ১৯৭ জনের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার নামে লোক ঠকানো : অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান আজ থেকে > অব্যাহত রাখলে জনগণ উপকৃত হবে

পরের সংবাদ

যুক্তরাজ্যের দলীয় গণতন্ত্র এবং নির্বাচন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের (পার্লামেন্ট) তারিখ এখনো ঘোষণা করা না হলেও ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যেই পার্লামেন্ট স্থগিত ঘোষণা করা হবে এবং ২৮ জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচনও করতে হবে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আরো জনবান্ধব হতে দলগুলোতেও বিশেষত লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টিতে কৌশলগত কিছু পরিবর্তন আসছে।
ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির মাঝে যে হতাশা ছিল, অর্থাৎ গত দুই বছরের মধ্যে বারবার দলটির লিডার পরিবর্তন এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী বদলেও গোটা দেশের রাজনীতিতে একটা অস্থিরতা ছিল। পার্টির লিডার নির্বাচিত হওয়ায় গত বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির নেতৃত্ব নেন ঋষি সুনাক। এখন পর্যন্ত কিছুটা হলেও তিনি দেশটির মৌলিক সমস্যা নিয়ে উদ্ভূত অস্থিরতা ঠেকাতে পেরেছেন। বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষত পরিবহন কর্মকতা-কর্মচারী (ট্রেন সার্ভিস), চিকিৎসা ক্ষেত্রে নার্স এবং চিকিৎসক, শিক্ষায় স্কুলশিক্ষকদের ধর্মঘট ঠেকাতে যদিও তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু এরপরও সরাসরি জনসম্পৃক্ত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা কস্ট অব লিভিং ইস্যুটি কিছুটা হলেও লাঘব করতে পেরেছেন। বিশাল অস্বস্থির মাঝে পার্টির জন্য এ এক ভালো সংবাদ। প্রথম এশিয়ান বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ক্ষমতায় তার স্থায়িত্ব নিয়েও। সত্য কথা হলো, করোনাকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন যেভাবে সে সময়টা দক্ষতার সঙ্গেই হ্যান্ডেল করেছেন, অনেকটা সেভাবেই বর্তমান সময়টুকুও তিনি তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইদানীং কিছুটা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারলেও সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, ব্রিটেনের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ চায় এ সরকারের পরিবর্তন হোক। ‘মোর ইন কমন’ নামের ওই জরিপ সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী গত ১৩ বছরের কনজারভেটিভের শাসন ইতিবাচক নয়। কারণ ওই দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ মনে করছে এনএইচএসের (জাতীয় স্বাস্থ্য খাত) রোগী অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সেবা দিতে সরকার শুধু ব্যর্থই হয়নি, এমনকি রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলোর জন্য লম্বা সময় পর্যন্ত অপেক্ষার তারা কোনো সুরাহা করতে পারেনি। অন্যদিকে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ব্রেক্সিট, করোনা কস্ট অব লিভিং প্রভৃতি সমস্যার সমাধানে বারবার ব্যর্থ হওয়া নেতৃত্বের প্রতি ক্রমেই জনক্ষোভ বেড়েছে। আর এ কারণেই তেরেসা মে, পরে বরিস জনসন তারপর লিজ ট্রাস্ট অর্থাৎ ঘন ঘন লিডার পরিবর্তন যেমন সরকারে ছিল অস্থিরতা তেমনি দেশটার মানুষও ক্রমেই এদের ওপর আস্থা হারিয়েছে। এ রকম রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশে লেবার পার্টি এবারে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে। কনজারভেটিভ পার্টি যেমন তাদের দলে অর্থাৎ ঋষি সুনাক তার প্রয়োজনে মন্ত্রিসভায় বিভিন্ন সময় পরিবর্তন আনছেন, সেভাবে লেবার পার্টিও এনেছে পরিবর্তন। যদিও কনজারভেটিভ দলের অস্থির সময়টাতেও লেবার দলও খুব একটা নির্দেশনা নিয়ে আসতে পারেনি। নেতৃত্বেও ছিল না কোনো চমক। বরং লেবার দলের নেতৃত্বে থাকা স্যার কিয়ার স্টারমার আর কর্মজীবী (ওয়ার্কিং ক্লাস) মানুষের প্রতিনিধি লেবার দলের ডেপুটি লিডারের মাঝে দ্ব›দ্বটাও বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যেই এসেছে, যা গণমাধ্যমেও মাঝে মাঝে এসে যেত। এমনকি প্রচারণা আছে তারা দুজন চোখাচোখি কথা পর্যন্ত বলেন না। অর্থাৎ লেবার দলও যতটুকু নির্ভরতা দেয়ার কথা ততটুকু দিতে পারেনি এ সময়ে। কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছে এ সময়টাতে ব্রিটেনের জনগণ কোনো না কোনোভাবে একটা পরিবর্তন চাইছে।
সম্প্রতি স্টারমার তার ছায়া মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন এনেছেন। এখানে ডেপুটি লিডার ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে দূরে থাকতে পারেন, এ ছিল এক সম্ভাবনা। কিন্তু দেখা গেছে, ছায়া মন্ত্রিসভায় তাকে দেয়া হয়েছে আবাসন মন্ত্রণালয়ের ছায়া মন্ত্রী। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই পদটিতে এমনকি অ্যাঞ্জেলাও সন্তুষ্টচিত্তেই গ্রহণ করেছেন এবং লিডার এবং ডেপুটি লিডার দুজনের ঐকমত্যেই এটা হয়েছে।
ব্রিটেনে আবাসন সমস্যা প্রকট। বিশেষত সরকারি আবাসন নিয়ে আছে অনেকের অনেক প্রশ্ন। অ্যাঞ্জেলা বলেছেন, এই পদটাই তার জন্য প্রয়োজন। কারণ তিনি জানেন স্থানীয় প্রশাসনের (কাউন্সিল) বরাদ্দকৃত আবাসন নিয়ে নাগরিকদের কী সমস্যায় পড়তে হয়। সুবিধাবঞ্চিত কাউন্সিলের পল্লীতে বেড়ে ওঠা ওই নেত্রী সাধারণ নাগরিকের ভেতর-বাইরে খুব ভালোই চিনেন। এমনকি ওই পার্লামেন্টারিয়ান সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করেন। কোনো রকম গণ্ডি পেরিয়েছেন স্কুলের। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মা হয়েছিলেন তিনি। এ সূত্র ধরেই তিনি বলেছিলেন সুবিধাবঞ্চিত হয়েও রাষ্ট্র তখন তাকে কীভাবে সহযোগিতা করেছিল, কী রকমের ঘাটতি ছিল এ রকম সহযোগিতায়। তিনি খুব ভালো করেই জানেন, কেন-ই বা সাধারণ মানুষের এই আবাসন সমস্যার দ্রুত সমাধানটা মৌলিক একটা ইস্যু। অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে গণমানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি পার্লামেন্টর ভেতরে-বাইরে কাজ করে যাচ্ছেন।
রেনারের অতীত বলে দেয়, তিনি প্রতিনিয়তই কাউন্সিল এবং সামাজিক আবাসন ভাড়াটেদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন, ভোট দিয়েছেন। নিরাপদে থাকা আজীবন ভাড়াটেদের পর্যায়ক্রমে আবাসন থেকে বের করে দেয়ার প্রশাসনের পাঁয়তারার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, সেই সঙ্গে সামাজিক আবাসনে বসবাসকারী উচ্চ আয়ের লোকদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মতো ভাড়া প্রদানের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। এ জায়গাটাতেও লিডার স্টারমারের সঙ্গে দ্ব›দ্ব থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। শ্রেণিগত অবস্থানের কারণেই হয়তো দুজন দুভাবে তাদের রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বিশ্লেষণ করে থাকেন। একজন খ্যাতিমান আইনজীবী হিসেবে স্টারমার বলতে গেলে একজন মিলিয়নার। যদিও তার অতীতও সোনার চামচে ছোঁয়া নয়, তিনিও জন্মেছিলেন এক শ্রমজীবী পরিবারে, যার মা ছিলেন একজন নার্স এবং বাবা টুল মেকার হিসেবে কাজ করতেন। একটা শ্রেণিগত দ্ব›দ্ব লেবার পার্টির অভ্যন্তরে কাজ করলেও দলীয় গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর এ সময়ে লেবার লিডার এ ঝুঁকি হয়তো নেয়ার সাহসও করবেন না। যেহেতু একটা ভালো অবস্থান এখন দেশজুড়ে। মানুষ সরকার পরিবর্তনই চাইছে। এ অবস্থায় দলীয় অন্তর্দ্ব›দ্ব জনপ্রত্যাশার সঙ্গে প্রতারণাই হবে।
শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোই নয়, পৃথিবীর এমনকি উন্নত দেশ যেমন যুক্তরাজ্যের মতো দেশের জনগণও একটা দলের শাসনে স্বৈরতান্ত্রিকতার গন্ধ পায়। যা আমরা দেখছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আগের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ছিলেন সে রকমেরই একজন। তার ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে তিনি নিজেকে ছাড়া কাউকে যেন বিশ্বাস করতে চাইতেন না। জনগণ কিংবা গণমাধ্যমের সমালোচনাকে যেন পাত্তাই দিতেন না। এমনকি নিজস্ব দলের একান্ত বিশ্বস্ত মানুষকেও একে একে তিনি সরিয়ে দেন সময়ে সময়ে। কিন্তু শুধু গণতান্ত্রিক সুব্যবস্থার কারণেই দলের অভ্যন্তরেও তিনি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি। আর যে কারণে শেষ পর্যায়ে এসে তার পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি দলের পরাজয়টা এখন যেন অনিবার্যতায় পৌঁছেছে শুধু তার একগুঁয়েমির কারণেই।
ইউরোপ-আমেরিকায় দীর্ঘদিন এক দল ক্ষমতায় থাকলেও দলীয় সমর্থকরা দুর্বৃত্ত হয়ে উঠে না কিংবা দলের নামে বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না। সরকারের আশকারায় কোনো সুবিধাভোগী শ্রেণিও সৃষ্টি হয় না। সরকার জনমুখী না হলে মানুষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করে। একটা নির্বাচনেই মানুষ তাদের সরকার নির্বাচন করে। আর সেজন্য যে কোনো দেশের কাঠামো-অবকাঠামগত উন্নয়নে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনই হয়ে উঠে প্রধান সিঁড়ি। পৃথিবীর দেশে দেশে যেখানেই নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে, জনপ্রতিনিধি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হচ্ছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় কাঠামো আরো দৃঢ় হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়