ডেঙ্গু পরিস্থিতি : ১৫ দিনে মৃত্যু হয়েছে ১৯৭ জনের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার নামে লোক ঠকানো : অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান আজ থেকে > অব্যাহত রাখলে জনগণ উপকৃত হবে

পরের সংবাদ

আত্মহত্যার মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকছে আত্মহত্যার দিকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মহাবিদ্যাপীঠে অধ্যয়ন করেও নিজেই নিজের প্রাণনাশের ভয়াবহ কাজ করতে সংকল্পবদ্ধ হয়ে উঠেছে দিন দিন। যেন শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার মিছিলে নেমেছে। বেসরকারি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যাদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়েও শিক্ষার্থীরা এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না? কেন আত্মহত্যাকে সহজে বেছে নিচ্ছে? অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, প্রেম-সংক্রান্ত জটিলতা, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্ব গ্রহণের চাপ, চাকরির অনিশ্চয়তা, উচ্চ প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার হিসাব না মেলা। তারা নিজেদের বেঁচে থাকার দায়ভার না নিতে পারা, সর্বোপরি নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করা।
একজন শিক্ষার্থী একটা পরিবারের স্বপ্ন- তাই তার আত্মহত্যা সমাধান না হয়ে পরিবারগুলো পঙ্গু হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জীবন সুখ-দুঃখের একটি চক্রাকারে আবদ্ধ কখনোবা ভালো সময় আসবে আবার কখনোবা প্রতিকূল পরিস্থিতি আসবে। তাই আমাদের ধৈর্যশীল হয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। এক সারণীতে চলতে, চলতে ক্লান্ত হলে অন্য সারণীতে পথ চলতে হবে। এ ছাড়াও সহপাঠীদের এগিয়ে আসতে হবে সমাজের এহেন ক্রান্তিলগ্নে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জীবনমুখী শিক্ষার সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে কীভাবে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কিংবা কীভাবে অর্থের সুষম ব্যবস্থাপনা করতে পারি, ছাত্রজীবনে কীভাবে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা রাখতে পারি। ক্যাপিটালিজম অর্থনীতিতে আমাদের শুধু খরচ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তাই এই ক্যাপিটালিজম অর্থনীতিতে নিজেদের কীভাবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় থেকে বিরত রাখা যায় সেই জীবনমুখী আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়াও আমাদের শিক্ষার্থীদের উচ্চ প্রত্যাশার দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে আমাদের। চাকরিকেই জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে চিন্তা না করে জীবিকা নির্বাহের জন্য সময়ের সঙ্গে অন্য পেশার সঙ্গেও যেন আমরা খাপ খাইয়ে নিতে পারি সেই মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
আমরা যদি উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, এমআইটির মতো বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অবলীলায় হীনম্মন্যতাহীনভাবে নিজের জীবিকার প্রয়োজনে যে কোনো পেশার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেন। সেখানে সমাজ তাদের নিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করেন না। যে পরিবেশ আমাদের দেশে নেই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়লেই সবাইকেই অফিসিয়াল জব করতে হবে, বিসিএস ক্যাডার হতে হবে, উচ্চ করপোরেট অফিসার হতেই হবে। তথাকথিত এমন অসম নিয়মের বাইরে গিয়ে কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলেই সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্নতার শিকার হতে হয়। তাই ছেলেমেয়েদের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে আমাদের, অন্যথায় এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার লাগাম টানা সম্ভব হয়ে উঠবে না। আত্মহত্যাবিষয়ক পরিসংখ্যানগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় আমাদের এখনই উদ্যোগী হতে হবে, কেননা আজকের তরুণ আগামীর দেশ গড়ার কারিগর। নতুবা সামনে আরো ঘোর ক্রান্তিকাল অপেক্ষা করছে।

অপু দেবনাথ : ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়