উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিতে ২ জন নিহত

আগের সংবাদ

সতর্ক থেকেই ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কার কাছে শিক্ষণীয় আছে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলঙ্কা যখন মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করছিল তখনো করোনা মহামারির ভয়ংকর সময় পার করছিল গোটা বিশ্ব। তারা তাদের অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা চেয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তখন। বিদেশি ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ তখন তার রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। এই অর্থ শ্রীলঙ্কাকে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করেছিল। দেশটির বড় ধরনের ঋণ সংকট কাটিয়ে উঠতে তা কাজে লেগেছিল। বাংলাদেশ ডলার ঋণ সহায়তা দিয়ে বেশ সাড়া তুলেছিল। ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা উন্নীত হওয়ায় আমরা পুলক অনুভব করেছিলাম বৈকি। সাম্প্রতিক সময়ে সংকট মোকাবিলা করে দেশটি একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ শুরু করেছে। এর মধ্যে অনেকটাই তারা পরিশোধ করেও ফেলেছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে কিংবা যাচ্ছে- মাঝখানে খুব শোনা যাচ্ছিল। তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে নানা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হতে দেখেছি আমরা। সবার মধ্যে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছিল এ নিয়ে। সত্যি সত্যি কি বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে? শেষ পর্যন্ত যদিও তেমন পরিণতি হয়নি। বাংলাদেশ বিভিন্ন বাধা বিপত্তি, সমস্যা সংকট অতিক্রম করে মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয় কিছুটা ঠেকাতে পেরেছে বটে। কিন্তু পুরোটা কী পেরেছে? আজ এ প্রশ্ন অনেকেরই মুখে আলোচিত হচ্ছে। চরম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিপর্যয়ে দিশাহারা, অস্থির একটি দেশের উদাহরণ হয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কা কী অদ্ভুত জাদুবলে এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে চোখের সামনে। সে তুলনায় আমরা এখন কোথায় রয়েছি এবং কোন দিকে এগোচ্ছি? আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতি এখনো সাধারণ মানুষের জীবনে চরম অস্বস্তি, দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা সৃষ্টিকারী দৈত্যের মতো চেপে বসে আছে। তা থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না বেশিরভাগ মানুষ। আমাদের রিজার্ভ ক্রমেই নিম্নগামী। রেমিট্যান্সও কমছে। রপ্তানি আয়েও আশাব্যঞ্জক কিছুই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নতুন বিনিয়োগও আসছে না। বিদ্যুৎ, গ্যাস, সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় কলকারখানার উৎপাদনও সন্তোষজনক নয়। সব মিলিয়ে আমাদের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল নয়। সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগে এক ধরনের অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে- এখনো ঠিকঠাক মতো বলতে পারছেন না কেউ। আগামী কয়েকটি মাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। তারপর বোঝা যাবে অবস্থা। এই হলো আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। দেশটির বিদেশি মুদ্রা আয়ের মূল খাত পর্যটন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে দেশটির সরকার ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো ও সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২২ সালের এই সময়ে দেশটির যে অবস্থা ছিল, পরিস্থিতি এখন তার চেয়ে অনেক ভালো বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত বছর চরম বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবশ্য বলছে, এ বছরও দেশটির জিডিপি সংকুচিত হবে, তবে সংকোচনের হার কমে আসবে। আর আগামী বছর প্রবৃদ্ধি হবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঠিক পথেই আছে, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে।
অনেকেই এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তুলনা করেন। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে শ্রীলঙ্কা অনেক ভালো করছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যকার মূল পার্থক্য হলো, শ্রীলঙ্কার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পাকিস্তানের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। এক বছর আগে অর্থনৈতিক সংকটে রীতিমতো অচল হয়ে পড়েছিল। শ্রীলঙ্কা প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশ ছুঁয়ে যায়, জ্বালানি সংকট চরমে পৌঁছায়, আর পেট্রোলপাম্পগুলোতে অপেক্ষমাণ যানবাহনের সারি কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। জন-অসন্তোষ চরমে ওঠে। গণরোষের মুখে পড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। এরপর দায়িত্ব নেন রানিল বিক্রমাসিংহে। এখন গত বছরের সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। রানিল বিক্রমাসিংহে এখন পর্যন্ত দেশকে ঠিক পথেই নিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতিগত পদক্ষেপের কারণে দেশটিতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রবাসী আয় ও পর্যটনের মতো কিছু খাত একরকম ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে উন্নতি ঘটেছে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির। গত বছর জ্বালানি ও রান্নার তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে স্বল্পতা ছিল, সেটা এখন নেই। মূল্যস্ফীতির হার অনেকটাই কমেছে। এই সবকিছুই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের অংশ। বাস্তবতা হলো, পরিস্থিতি গত বছর যতটা খারাপ ছিল, এ বছর ততটা নয়। শ্রীলঙ্কা সরকার ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়িয়েছে আর সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে করজাল বিস্তৃত করেছে- মূলত এই দুটি নীতি পদক্ষেপের কারণে ঘুরতে শুরু করেছে দেশটির অর্থনীতির চাকা। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশটিকে এখনো লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। নতুন গভর্নর আসার পর সরকার তাকে স্বাধীনভাবে দুটি কাজ করার সুযোগ দেয়। মূলত যে দুটি খাতে তিনি হাত দেন তা হলো নীতি সুদহার বৃদ্ধি ও মুদ্রার একক বিনিময় হার নিশ্চিত করা। অন্যান্য দেশের মতো শ্রীলঙ্কায়ও মুদ্রার অনানুষ্ঠানিক বাজার আছে, সেখানকার কারসাজির কারণেও মুদ্রার বিনিময় হারে প্রভাব পড়ে, মূল্যস্ফীতি বাড়ে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলঙ্কায় কী করা হয়েছে? মূল্যস্ফীতির একটি কারণ ছিল দেশ থেকে অর্থ বেরিয়ে যাওয়া। সেটা হতো মূলত আমদানির মাধ্যমে, যার মূল্য পরিশোধ করতে হতো ডলারে। ডলার বেরিয়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় মূল্য কমে যায়, যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০২২ সালে দেশটির ৩ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ কাজের জন্য বিদেশে গেছেন, যাদের মধ্যে চিকিৎসক, প্যারামেডিকেল, তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মতো অনেক উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী আছেন। নতুন গভর্নর আসার পর সরকার তাকে স্বাধীনভাবে দুটি কাজ করার সুযোগ দেয়। মূলত যে দুটি খাতে তিনি হাত দেন তা হলো নীতি সুদহার বৃদ্ধি ও মুদ্রার একক বিনিময় হার নিশ্চিত করা। অন্যান্য দেশের মতো শ্রীলঙ্কায়ও মুদ্রার অনানুষ্ঠানিক বাজার আছে, সেখানকার কারসাজির কারণেও মুদ্রার বিনিময় হারে প্রভাব পড়ে, মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তবে মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামা করলেও নীতি সুদহার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা গেছে। শ্রীলঙ্কার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সংকটের চূড়ান্ত সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪৯ শতাংশের বেশি। আরেকটি খাতে শ্রীলঙ্কা গত এক বছরে অনেক ভালো করেছে। সেটা হলো শ্রমশক্তি রপ্তানি। বস্তুত গত বছর বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে দেশটি। ২০২২ সালে দেশটির ৩ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ কাজের জন্য বিদেশে গেছেন, যাদের মধ্যে চিকিৎসক, প্যারামেডিকেল, তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মতো অনেক উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী আছেন। এরা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর কারণে গত এক বছরে দেশটির প্রবাসী আয় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে আইএমএফের ঋণের সঙ্গে নানা ধরনের শর্ত থাকে। এসব শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষেই ঋণ দেয়া হয়। এতে অনেক দেশ উপকৃত হয়, আবার অনেক দেশ বিপদে পড়ে। তবে শ্রীলঙ্কা এবার আইএমএফের ঋণের বেশির ভাগ শর্ত ভালোভাবেই পূরণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
যখন কোনো দেশ ভুল নীতি, অব্যবস্থাপনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অন্য বাজার যখন তাকে ঋণ দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, তখনই তারা সাধারণত আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। এসব ক্ষেত্রে আইএমএফ স্বল্প সুদে ও স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়। আইএমএফ কোনো বিপদগ্রস্ত দেশকে ঋণ দিয়েছে এটা জানলে সেই দেশ সম্পর্কে বাজারও আশ্বস্ত হয়। তখন অন্যরাও এগিয়ে আসে। তবে আইএমএফের ঋণের সঙ্গে নানা ধরনের শর্ত থাকে। এসব শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষেই ঋণ দেয়া হয়। এতে অনেক দেশ উপকৃত হয়, আবার অনেক দেশ বিপদে পড়ে। তবে শ্রীলঙ্কা এবার আইএমএফের ঋণের বেশির ভাগ শর্ত ভালোভাবেই পূরণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আইএমএফের পরিমাণগত কর্মক্ষমতা মানদণ্ড (কিউপিসি) পূরণে দেশটি যথেষ্ট ভালো করেছে। এটা সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা হয়। এই মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হলে ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ থেকে আবারো অনুমোদন নিতে হয়। তখন নির্বাহী পর্ষদ যদি মনে করে যে ঋণ কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া যাবে, তা হলে বাকি অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেয়া হতে পারে। আইএমএফের শর্ত মেনে শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে রাজস্ব খাত সংহত করেছে। কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি কমিয়ে এনেছে এবং করহার ও করের জাল বাড়িয়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনের দিকে বেশ এগিয়েছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের অবস্থা তুলনীয় নয়, তবে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় কিছু তো আছে। তারা যেভাবে বড় সমস্যা মোকাবিলা করে এখন স্থিতিশীল হচ্ছে, সেটাই শিক্ষণীয় বিষয়। এ ক্ষেত্রে কী শেখা যেতে পারে? বাংলাদেশে এখনো বিদেশি মুদ্রার সংকট আছে, যার প্রভাব অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও পড়েছে। সে কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তাদের গভর্নর যেভাবে এই সংকট মোকাবিলায় নায়ক হিসেবে বেরিয়ে এসেছেন, তা খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয়। তারা আগের নীতি থেকে সরে আসছে। কৃষি খাতে আগের ভুল নীতি থেকে সরে এসেছে। পর্যটন খাত চাঙ্গা করা, প্রবাসী আয় বাড়ানো ও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার মাধ্যমে তারা রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। রাতারাতি কিছু হচ্ছে না, ধীরে ধীরে হচ্ছে, সেটাই নিয়ম। তবে তারা ঠিক পথেই আছে। শ্রীলঙ্কার সব সংকট এখনো শেষ হয়নি। তাদের ঘাড়ে এখনো বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা আছে। সেই ঋণ পরিশোধ করতে অর্থনীতির চাকা আরো সচল করতে হবে। সেটা করতে গেলে আবার অর্থনীতিতে অর্থের সঞ্চার করা প্রয়োজন। তবে দেশটি এখন সবার আগে পূর্বের ভুল শোধরানোর চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে তাদের অগ্রাধিকার অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। ফলে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে খানিকটা সময় লাগবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির একটা যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু যখন বিশ্ববাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম কমতির দিকে, তখন দেশীয় বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, কিংবা বিশ্ববাজারের কাছাকাছি হারেও না কমা শুধু অস্বাভাবিক নয়, উদ্বেগজনকও বটে। দুর্ভাগ্য হলো আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা বাজার- কোনোটিই যুক্তির ধার ধারে না। সবখানে জোর-জবরদস্তি চলছে। যে যখন যেখান থেকে পারে ফাও মুনাফা কামিয়ে নিচ্ছে। আর পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। সব দোষ যুদ্ধের ওপর চাপানোর সময়টা পার হয়ে গেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে শুধু বাংলাদেশই অসুবিধায় পড়েনি। অন্যান্য দেশে এখন মূল্যস্ফীতি কমছে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পারছে না। এ জন্য সমস্যার মূল কারণগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে দ্রুত সেগুলো সমাধান করতে হবে। যুদ্ধের ওপর দায় চাপানোর কৌশল থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

রেজাউল করিম খোকন : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়