ফেসবুকে প্রেম করে ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

আগের সংবাদ

দাম নির্ধারণের তোয়াক্কা নেই : সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না তিন পণ্য. ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা

পরের সংবাদ

মাল্টা চাষে সফলতার স্বপ্ন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালের বাবুগঞ্জে মাল্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন সিঙ্গাপুর ফেরত যুবক তারিকুল ইসলাম মাসুম। তবে পরিচর্যায় ঘাটতি থাকায় গত বছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়নি তার। তবুও চলতি মৌসুমে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। মাল্টা চাষ শুরু করার পর সফল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের পরিকল্পনা করলেও উঁচু জমির অভাবে পিছিয়ে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মকবুল হোসেন হাওলাদারের ছেলে তারিকুল। এজন্য তিনি সরকারি সহযোগিতা চাইছেন। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমের মতোই মাল্টা সংগ্রহের দিনক্ষণ ঘোষণা এবং অন্য চাষিদের আগাম ফল সংগ্রহ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি। এদিকে তারিকুলের দেখাদেখি অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তারা তারিকুলসহ অন্য উদ্যোক্তাদেরও মাল্টা বাগানের নিয়মিত খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন।
সরজমিন জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামে তারিকুলের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ শতাংশ জমির উপর (বারি-১) মাল্টা গাছের সঙ্গে ঝুলছে অসংখ্য ফল। পাশাপাশি ভিয়েতনামী (১২ মাস) মাল্টা, চাইনিজ কমলা ও থাই জাম্বুরাও রয়েছে। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় সময়মতো পর্যাপ্ত পরিচর্যা করতে না পারায় এবার ফলন অনেক কম হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেক কম হলেও তারিকুল বলেন, দেশের বাজারে প্রায় সব ধরনের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও তিনি গত বছরের মতো এবারো প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি করছেন ১০০ টাকা দরে। তার বাগানে উৎপাদিত মাল্টা রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয়রাই তার ক্রেতা। তবে অধিকাংশ মাল্টা কিনে নেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। তবে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ ও বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
তারিকুল জানান, ২০১০ সালের শুরুতে কাজের সন্ধানে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। সেখানে দীর্ঘ ৮ বছর থেকে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। তবে দেশে ফিরে তিনি বসে থাকেননি, ইউটিউবে মাল্টা চাষ ও ফলন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে নিজেই উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন শখের মাল্টা চাষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজস্ব ১৪ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে স্বরূপকাঠী থেকে (বারি-১) মাল্টা চারা সংগ্রহ করেন। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে প্রস্তুতকৃত জমিতে সংগৃহীত বারি-১ জাতের মাল্টা চারা রোপণ করেন। শখের বশে করা মাল্টা বাগান থেকে গত ৩ বছর ধরে ৩০-৪০ মণ মাল্টা বিক্রি করে আসছেন। প্রতি বছর এই বাগান থেকে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করে থাকেন।
সরজমিন তারিকুলের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা গেছে তার সফলতার চিত্র। চলতি বছর তিনি কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দরে ৭ মণেরও বেশি মাল্টা বিক্রি করেছেন। ৩২টি মাল্টা গাছ থেকে আরো ২০-২৫ মণ মাল্টা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। এ ব্যাপারে তারিকুল ইসলাম মাসুম ভোরের কাগজকে বলেন, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ প্রতি বছর তার মোট ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চলতি বছর যদি তিনি ৩০ মণ মাল্টা বিক্রি করতে পারেন তবে সব মিটিয়ে ১ লাখ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন। তারিকুল বলেন, তার বাগান ও ফলন দেখে এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বাগানটি দেখতে মানুষ আসছেন। অনেকেই বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমিও তাদের উৎসাহিত করছি। ভালোভাবে বাগান করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
শখের বশে বাগান করতে গিয়ে তারিকুল এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষের চিন্তা করছেন। তিনি মাল্টা বাগান স¤প্রসারণের জন্য পার্শ্ববর্তী আরো ৩৫ শতক জমি মাটি ভরাট করে মাল্টা চাষের আওতায় আনার জন্য পরিকল্পনা করলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা আর করা হয়নি। তবে তিনি এখনো এ ব্যাপারে আশাবাদী। অবশ্য এক্ষেত্রে তিনি সরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার শাহ মো. আরিফুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, নিচু জমি ভরাট করার জন্য কৃষি অফিসের কোনো প্রকল্প নেই। তবে মাল্টা গাছের পরিচর্যাসহ অন্যান্য বিষয়ে মাল্টা চাষিদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাগান থেকে মাল্টা সংগ্রহের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। কিন্তু অনেকেই অতিরিক্ত মুনাফা আয়ের জন্য আগেভাগে ফল সংগ্রহ করছেন। এতে করে মাল্টা পরিপক্ব ও সুস্বাদু হয় না। ক্রেতারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে মাল্টা চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এজন্য সব মাল্টা চাষিকেই তাদের অফিস থেকে সচেতন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বাবুগঞ্জসহ বরিশালের মাটি বারি-১ মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তারিকুলের দেখাদেখি এ এলাকায় অন্তত আরো ১০ থেকে ১২ জন উদ্যোক্তা স্বল্প পরিসরে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তবে তারিকুলের মাল্টা বাগানটির ফল অনেক সুস্বাদু। আমরা ওখান থেকে পরিবারের জন্য মাল্টা সংগ্রহ করে থাকি। তারিকুলের আগ্রহ ও প্রচেষ্টা এবং আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি- সবকিছুর সমন্বয়ে তিনি শতভাগ সফলতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া আমাদের দপ্তর থেকে সব উদ্যোক্তার মাল্টা বাগানের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়