ফেসবুকে প্রেম করে ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

আগের সংবাদ

দাম নির্ধারণের তোয়াক্কা নেই : সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না তিন পণ্য. ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা

পরের সংবাদ

জনবান্ধব সরকার ও তার রূপরেখা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জনবান্ধব সরকার। যে সরকার জনগণের বান্ধব হতে পারে, সেই সরকারই জনবান্ধব সরকার। অথবা জনগণের সঙ্গে যে সরকারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পর্ক রয়েছে তাকে জনবান্ধব সরকার বলা যেতে পারে। অথবা যে সরকার জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাদের জীবনযাত্রাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবন সমস্যা সমাধানে হাত বাড়িয়ে দেয় সেই সরকারকে জনবান্ধব সরকার বলা যেতে পারে।
কোনো একটি দেশের সরকার জনবান্ধব হতে পারে তখন, যখন সঠিকভাবে একটি দেশকে পরিচালনা করতে পারে। যাতে দেশের জনগণের কোনো কষ্ট না হয়, ক্ষতি না হয়। তারা ঝামেলামুক্তভাবে দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহ অতিক্রম করতে পারে। তাদের জান-মাল, সহায়-সম্পদ নিয়ে, জীবনের লক্ষ্য নিয়ে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে, উন্নত জীবন-যাপনের পরিকল্পনা নিয়ে, সুন্দর, সুখময় জীবন-যাপনের মধ্য দিয়ে কোনো দুর্ঘটনা, কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা, বাধা-বিঘœহীন জীবন নিয়ে, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকতে পারে।
একটি দেশের সরকার সেই উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা নিয়ে দেশের জনগণকে পরিচালনা করে। বৈরী আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, দুর্ভিক্ষ বহিঃশত্রæর আক্রমণ ইত্যাদি সব বিষয়কে মোকাবিলা করে একটি সরকার তার দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে। শুধু তাই নয়, দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানসহ আঠারটি মৌলিক অধিকারের প্রতি নজর রেখে সরকার দেশ পরিচালনা করে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থা, জলপথ, স্থলপথ, আকাশ পথ, কৃষিব্যবস্থা, সব ধরনের অফিস, আদালত, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ জনগণের কল্যাণের জন্য যে সরকার কাজ করে তাকে জনবান্ধব সরকার বলা যেতে পারে।
বিগত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের উন্নয়নে কোন সরকার সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। দেশকে একটি প্রগতিশীল, উন্নয়নমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সেটা দেশের প্রেক্ষাপটের দিকে নজর দিলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাব। জনগণের অভিমত অনুসারে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে এবং দেশকে একটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে তৈরি করেছে। যে সরকারের রূপরেখায়, কার্যক্রমে জনগণের উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ নিহিত আছে, সেই সরকারকে আমরা জনবান্ধব সরকার বলতে পারি। যে দেশের সরকার নিজের দেশের জনগণকে নিজের পরিবার মনে করে, যে সরকার নিজের দেশের জনগণকে প্রতিবেশী মনে করে, জনগণকে আত্মার আত্মীয় সম জ্ঞান করে জনহিতকর, কল্যাণকর কাজে ব্রতী হয় তাকে আমরা জনবান্ধব সরকার বলতে পারি।
সফলতা-ব্যর্থতা দুটি শব্দ নিয়েই আমাদের জীবন। সব কাজে মানুষ সফল হতে পারে না। দশটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে কাজ করলে, কখনো কখনো দশটি উদ্দেশ্য থেকে চারটি উদ্দেশ্য বিচ্যুত হতে পারে। সব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। কারণ আমাদের চারদিকে প্রতিবন্ধক সৃষ্টিকারী, ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তি, গোষ্ঠীর কারণে একশভাগ উদ্দেশ্যকে সফল করা কখনো সম্ভব হয় না। তেমনিভাবে কোনো দেশের সরকারের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা থাকাও স্বাভাবিক। সরকারের বিপক্ষে রয়েছে ততোধিক প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল। যারা সরকারের ভালো কাজের ক্রেডিট নষ্ট করার জন্য সর্বদা সক্রিয় থাকে। কারণ জনগণের কাছে যেন সরকার কোনো শুভকর বিষয়কে প্রদর্শন করতে না পারে। তাহলে সেই সরকার জনগণের কাছে বেশি ক্রেডিট পাবে। তাহলে সে সরকার নির্বাচনেও ম্যান্ডেট পাবে। জনবান্ধব সরকার হয়ে উঠবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা এমন প্রতিবন্ধকতার শিকার হই। সরকারও এর বাইরে নয়।
তবে সব প্রতিবন্ধকতা, অশুভ শক্তির মোকাবিলা ও ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে দেশকে উন্নয়নমুখী, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন, দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় বিষয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। সে সরকারকে জনবান্ধব সরকার বলা যেতে পারে। এমন সরকার প্রয়োজন হলে একশ বছর ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।
কোনো দেশের সরকার দেশের সব জনগণকে খেতে বা পরতে দেয় না এটা ঠিক। কিন্তু দেশের জনগণ শান্তিতে থাকতে চায়। তারা কোনো অস্থিতিশীলতা পছন্দ করে না। এমন কোনো রাজনৈতিক দল, জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় যদি দেশে কোনো অস্থিরতা, হানাহানি, জাতাজাতি, ধর্মীয় বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সংঘাত, হত্যা, রাহাজানির মতো কোনো গর্হিত কাজ করে জনগণের সুষ্ঠু, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে, জনগণকে সর্বদা শঙ্কিত করে তোলে- শান্তি বিনষ্টকারী সেই রাজনৈতিক দল বা জাতিগোষ্ঠীকে দেশের জনগণ কখনো সাপোর্ট করে না। এমন কোনো রাজনৈতিক দল কখনো জনবান্ধবও হতে পারে না। নির্বাচনে জনগণ তাদের ম্যান্ডেটও দিতে চায় না।
একটি দেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। দেশের সাংবিধানিক অবকাঠামো এবং গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জন্মসূত্রে দেশের মধ্যে বসবাসকারী সব মানুষ দেশের নাগরিক। কোনো নাগরিককে সংখ্যার ভিত্তিতে পার্থক্যের চোখে দেখার কোনো অধিকার নেই। যে সব সম্প্রদায়, জাতি বা গোষ্ঠী সমর্থিত রাজনৈতিক দল এমন চেতনা লালন করে এবং জনগণের নাগরিক অধিকার খর্ব করে ভিন্নতার চোখে দেখে, এমন রাজনৈতিক দলকে জনগণ ম্যান্ডেট দেয় না। কারণ তারা জনবান্ধব দল নয়।
একটি দেশে বহু মত-পথের রাজনৈতিক দল থাকে এবং তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সব দলের দেশ পরিচালনা করার যোগ্যতা, দক্ষতা আর জনসমর্থন থাকে না। যাদের থাকে তারাই দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেয়। তবে সেটা গায়ের জোরে নয়। দুইবা ততোধিক দলের অংশগ্রহণে; দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে; নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে। তবে গায়ের জোরে, লাঠির জোরে, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে, দেশের জনগণের জান-মালের ক্ষতিসাধন করে, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে, গাড়ি-বাড়ি ভাঙচুর করে, ক্ষমতায় আসার জন্য যারা চেষ্টা করে তারা জনগণের কাছে কখনো জনবান্ধব দল হিসেবে পরিগণিত হয় না। এ ধরনের রাজনৈতিক দল বা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশের নাগরিকের কাছে অবজ্ঞার পাত্র হয়।
সুতরাং সাধু সাবধান! ‘গরমযঃ রং ৎরমযঃ’- জোর যার মুল্লুক তার। এ ধরনের চেতনা আর মানসিকতার দিন এখন আর নেই। ‘ঞযড়ংব ফধুং ধৎব মঁহনু’- সে দিন চলে গিয়েছে। পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে। লাঠিসোটা আর বাহুবলের দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন এই নেট দুনিয়ায় কোনো মানুষ বোকা নেই। সবার ভালো-মন্দ, বোধ-বুদ্ধির সঞ্চার হয়েছে। কোন দল দেশের জনগণের জন্য উপযুক্ত- সেটা জনগণ বোঝে। সুতরাং দেশের জনগণ দেশের সরকারের কাছে ভাত-কাপড় চায় না। তারা চায় একটু নিরাপদ জীবন-যাপন। এটা যারা বিপর্যস্ত করে, তারা কখনো জনবান্ধব হয় না। জনসমর্থনও পায় না।
একটি দেশের জনবান্ধব সরকারের উচিত, দেশের সব ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। এখানে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর কোনো প্রশ্ন নয়। তারা সবাই দেশের নাগরিক। তাদের ভিন্নতার চোখে না দেখে, তাদের প্রয়োজনীয় দাবি বা ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীর ন্যায্য চাওয়া-পাওয়াগুলোকে পূরণ করে; তাদের সমঅধিকারে অধিষ্ঠিত করা। তাহলে সে দেশের ক্ষমতাসীন সরকার চিরদিন তাদের কাছে জনবান্ধব হিসেবে অভিনন্দিত হবে।
‘একটি জনবান্ধব সরকারের রূপরেখা হবে এমন যে, দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী সব ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো বজায় রেখে, দেশের অভ্যন্তরে যে যেখানে অবস্থান করছে, সেখানে যাতে নিরাপদে, নির্বিঘেœ অবস্থান করে তাদের মানবিক অধিকার ও মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করতে পারে। ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পালনপূর্বক রাষ্ট্রীয় সব অধিকার ভোগ করতে পারে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুসারে তাদের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধনের জন্য যে সরকারের রূপরেখা থাকে, তাকে জনবান্ধব সরকার বা সেই সরকারের রূপরেখাকে জনবান্ধব সরকারের রূপরেখা বলা যেতে পারে।’

অসিত কুমার মন্ডল : কবি ও সংস্কৃতি গবেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়