নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী : ব্রডকাস্ট জার্নালিজম গণমাধ্যমের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়েছে

আগের সংবাদ

বাংলাদেশের পাশে থাকবে ফ্রান্স : শেখ হাসিনা-ম্যাক্রোঁ বৈঠক, দুই চুক্তি স্বাক্ষর , মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ফ্রান্স

পরের সংবাদ

মরক্কোতে ভূমিকম্প : আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরক্কোতে ভূমিকম্পে প্রাণহানি দুই হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে দুই হাজার। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বশেষ রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে। ভূমিকম্পে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের প্রাণহানিতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মরক্কো এর আগেও বেশ কয়েকবার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে। ২০০৪ সালে দেশটির উত্তর-পূর্বের আল হোসেইমা অঞ্চলে ভূমিকম্পে ৬২৮ জন আর ১৯৬০ সালে আগাদির অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ১২ হাজার মানুষ মারা যান। এবারের ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়েছে জাতিসংঘের ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ হাজারো আবাসিক ঘরবাড়ি। ভবনের নিচে প্রাণের সন্ধান না মিললেও বেরিয়ে আসছে লাশের পর লাশ। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বলেছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারো ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। মরক্কোর শুক্রবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আটলাস পর্বতমালার মধ্যে। ওই অঞ্চলে এমন অনেক দুর্গম গ্রাম রয়েছে যেখানে পৌঁছানো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য অশনিসংকেত। জাতিসংঘ দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ঢাকার নাম। যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা অমূলক নয়। কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত, সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। বাংলাদেশের দুদিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে উত্তর-পূর্বকোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটি হচ্ছে পূর্বে চিটাগং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানে দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট, এখানে সংকোচনের হার হচ্ছে প্রতি ১০০ বছরে এক মিটার। গত ৫০০-৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে এটা ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। আর এখান থেকে ঢাকা শহর হচ্ছে দেড়শ কিলোমিটার। যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর। ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকাও। ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ৪ লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি, যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ- প্রশ্ন সামনে আসছে। ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়