নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী : ব্রডকাস্ট জার্নালিজম গণমাধ্যমের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়েছে

আগের সংবাদ

বাংলাদেশের পাশে থাকবে ফ্রান্স : শেখ হাসিনা-ম্যাক্রোঁ বৈঠক, দুই চুক্তি স্বাক্ষর , মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ফ্রান্স

পরের সংবাদ

চারদিকে এত উন্নয়নের শব্দ!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অবিশ্বাস্য বলে যে শব্দটি আছে আমাদের অভিধানে তা এখন কেবল বিশ্বাসযোগ্যই হয়ে ওঠেনি আমাদের জীবনে, তাকে এখন অভিধান থেকে তুলে এনে ঢাকার মহানগরের দৈনন্দিন জীবনের পাশে বসিয়ে দিলে কেউ তা অস্বীকার করবে না। কারণ তাদের কানে তালা লাগিয়ে দেয়ার মতো যথেষ্ট শব্দতরঙ্গ উৎপাদন করছে। আপনার বাড়ির পাশে নির্মিতব্য নতুন স্থাপনার শব্দ, পাড়া-মহল্লার রিকশা-টেম্পো, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা এবং তাদের বেল-ভেপুর শব্দ আমরা ভোগ করতে করতে বধির হওয়ার জোগাড়, তার ওপর রাস্তার কাটাকাটির হাইড্রোলিক মেশিনের শব্দ, ক্রেন ও তার সহযোগী যান্ত্রিক শব্দ আমাদের জানান দেয়- মহানগরে চলছে উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। ফলে মহানগরবাসীর মনে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়। তারা কিন্তু নিজের কানের বারোটা যে বেজে যাচ্ছে সে ব্যাপারে মোটেই সজাগ-সচেতন নয়। তাদের চোখ যে মিহি ধুলোবালি আর দূষণযুক্ত বাতাসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদানে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাতেও তাদের তেমন কোনো খেয়াল নেই। তাদের অনেকেরই চোখে ছানি পড়ছে, কিন্তু বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। সেই ছানি পড়া লোক যখন বাস থেকে নামার সময় পড়ে আহত হন, তখন বুঝতে পারেন তার বাম চোখে তিনি দেখছেন না। ওয়াসার পানি এতটাই ময়লাযুক্ত যে তা সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন না কেউ। এ কারণেই কিনা জানি না ওয়াসার এমডি ৬ বার হলো একই পদে নিয়োগ পেয়েছেন। পানি শোধনের ছোট ছোট মেশিনের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি বিক্রি বাণিজ্যও। ওয়াসার সঙ্গে ওই পানি বিশুদ্ধকারী মেশিনের মালিকদের সখ্য মনে প্রশ্ন জাগাচ্ছে। মশা মারার ওষুধ যে কোনো কাজ দেয় না, সেটা প্রমাণ করে চলেছেন দুই সিটির দুই মেয়র। সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাই কেবল বেশি নয়, মহানগরীর পাদদেশের এলাকা, যাকে আমরা বলি শহরতলি বা প্রান্তিক নগরীর এলাকা। এখানে এতটাই অগোছাল ও উন্নয়নবঞ্চিত, তার রূপ তো আমরা এবারের বর্ষা মৌসুমে দেখলামই এবং দেখেই চলেছি বর্ষা-উত্তরকালে। তার ওপর অকাল বা সকাল বন্যা দেশের বহু এলাকার মানুষকে মানবেতর জীবনের গর্তে ফেলে দিয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন যাত্রা কেবল প্রচারনির্ভরই নয়, এক মিথ্যার স্বপ্ন জারি করে মানুষকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে মিথ্যার স্বপ্নের ভেতরে, যার লম্বা রাস্তার দৈর্ঘ্য ২০৫০ সাল পর্যন্ত।

দুই.
ঢাকার চারপাশে ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ বৃত্তাকার একটি রেলপথ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মূল উদ্দেশ্য রাজধানীতে গণপরিবহন হিসেবে ট্রেনের অংশ বৃদ্ধি এবং যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখা। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে এরই মধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে রেলওয়ে। রেলপথটির সিংহভাগ অংশ উড়ালপথে ও কিছু অংশ পাতালপথে নির্মাণ করতে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন না হলেও ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, প্রকল্পটির কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে এখন পর্যন্ত সরকারের যে পরিকল্পনা, তাতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলতে থাকবে। যদিও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সঠিকভাবে সমীক্ষা না হওয়া, নকশা ও পরিকল্পনার দুর্বলতা, রাজধানীতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত জমির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে এর চেয়েও বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
ঢাকায় সড়ক কম, গাড়ি বেশি। স্বাভাবিকভাবে চলতে-ফিরতেই মানুষের অনেক দুর্ভোগ হয়। এর মধ্যে ঢাকায় বর্তমানে দুটি মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে, একটির কাজ শুরু হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। চলমান রয়েছে দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। রামপুরা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত আরেকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরুর অপেক্ষায়। বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। চলমান এসব উন্নয়নকাজ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে স্বাভাবিকভাবে চলতে-ফিরতেই মানুষের অনেক দুর্ভোগ হয়। এর মধ্যে একসঙ্গে অনেক সড়কের ওপর উন্নয়নকাজ চলার কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। আমাদের উচিত ছিল বিক্ষিপ্তভাবে প্রকল্প না নিয়ে সমন্বিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। একটা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আরেকটির কাজ শুরু করা। তা না করে আমরা একসঙ্গে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।’
ঢাকা মহানগরে সড়ক কম, এই সত্য দলকানা মানুষরা মানবেন না। বলবেন কোথায় কম? চারদিকে এত সড়ক, প্রতিদিনই নতুন সড়ক তৈরি হচ্ছে, ওরা কি কানা নাকি যে তা দেখতে পায় না? এই যে উড়ালসড়ক সৃষ্টি করে চলেছেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সরকার, উন্নয়নের সেই ধারা তো চলতেই থাকবে এবং তা মহানগরকে এক সুপার-ডুপার মহানগরে পরিণত করবে, এটা কি বিশেষভাবে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারবেন না? দলকানারা এটা বুঝতে নারাজ যে এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই- এই মার্কা উন্নয়ন ঢাকার গতিকেই কেবল স্থবির করছে না, জনগণের সুবিধার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা জলে ফেলছেন। এই চিন্তারই ধারা যেন বইয়ে দিয়েছে সরকার। দুই কোটিরও বেশি মানুষ যে মহানগরের বিভিন্ন সুদৃশ্য নগরে ও বস্তিতে বাস করছে, তাদের চলাচলের জন্য যে পরিমাণ সড়ক দরকার তার ১০ শতাংশও নেই। নেই মানে, জনবসতির তুলনায় সড়কের পরিমাণ বাড়েনি। বাড়াতে পারেনি নগরের ও মহানগরের সড়ক নির্মাণ কর্তৃপক্ষও।
একটি মহানগরের জনবসতির অনুপাত বিবেচনা করেই সড়কের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে নেয় পরিকল্পনা, যাতে বসতিদের চলাচলে বিঘœ না ঘটে। অর্থাৎ সড়কগুলো যেন মসৃণ যোগাযোগকে ব্যাহত না করে। মহানগরের ধনী বসতিদের গাড়ির সংখ্যা এতটাই বেড়েছে, সেই সঙ্গে উঠতি ধনবানদের স্ফূর্তির গাড়ি কেনার প্রতিযোগিতায় এক বিরামহীন অনৈতিক চর্চার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সড়কে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরামহীন দীর্ঘযাত্রা। উন্নয়ন কে না চায়? কিন্তু বিআরটি প্রজেক্ট যেমন দশ-বারো বছর ধরে মহানগরের বুকের ওপরে খাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তেমনি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ যেন একটির ঘাড়ের ওপরে আরেকটির নিঃশ্বাস নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কোন প্রজেক্ট কতকাল নির্মাণাধীন থাকবে এবং সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে নির্বাচনের আগে আগে তার সামান্য অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী, সেই দৃশ্য আমরা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। মহানগরের গাড়িওয়ালা কেবল সরকারকে নানা কটুকাটব্যই করে না, যখন তারা ৩০ মিনিটের রাস্তা যেতে ব্যয় করতে বাধ্য হয় দুই ঘণ্টা বা আড়াই ঘণ্টা তখন তাদের হিসাবের কর্মঘণ্টা ক্ষতির বিষয়টি প্রধান হয়ে ওঠে। কর্মঘণ্টার আয় ও ব্যয় হিসাব কষে তারা দেখেন যে কত ক্ষতির স্রোতের ব্যবস্থা হয়েছে ওই সব উন্নয়নের জগাখিচুরির প্রকল্প ঘিরে। এই সুদূরপরাহত উন্নয়ন যে পরিণামে চরম দুর্ভোগেরই নামান্তর, তা কি সরকার ও রাজনীতিকরা বুঝতে পারেন? আমার বা আমাদের তা মনে হয় না। বুঝলে এই ধরনের প্রকল্পের সূচনা তারা করতে যেতেন না। তারা তো মহানগরের সমন্বিত উন্নয়ন চাইছেন না, তারা জনগণকে দেখতে চাইছেন যে তারা উন্নয়নের রূপ দেখাচ্ছেন। তারা ক্ষমতায় এলেই উন্নয়ন লাফিয়ে লাফিয়ে এসে মহানগরের বাসিন্দাদের গলা পেঁচিয়ে ধরে।
আর এর দ্বিতীয় রূপটি হচ্ছে ঋণ করে সেই উন্নয়নের খরচ বাড়িয়ে দেয়া। এর কারণ দুটি। এক. লুটের সুযোগ সৃষ্টি করা। অন্যটি হচ্ছে উচ্চ হারের টাকা ঋণ নেয়ার মাসুল যাতে জাতি বহন করতে বাধ্য হয়, সেই দুয়ার উন্মুক্ত করা। মানুষের দুর্ভোগ হবেই যে কোনো উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়নে, এই সত্য কি অস্বীকার করতে পারবেন? তাই উন্নয়নের সঙ্গে জনদুর্ভোগ এক অঙ্গাঙ্গী বিষয়। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে, প্রকল্পগুলো একবারে না নিয়ে যদি একটার পর একটা বাস্তবায়নে আসত তাহলে গতিটা মনে হতো ধীরলয়ের, আসলে তা হতো সুপরিকল্পনার একটি উদাহরণ। সমন্বিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নই তো একটি সরকারের চেতনার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয়। শেখ হাসিনার সরকার সেটা দেখাতে পারেনি। ফলে একটা এলোমেলো ডেভেলপমেন্ট যজ্ঞ চলছে। তা বোঝা যায় যখন মহানগরের যান্ত্রিক যান চলাচলের গতি কমে আসে।
আর এটা মনে রাখা জরুরি যে, এই মহানগরের বস্তি-সুউচ্চ অট্টালিকার সুশিক্ষিত জনেরাই এই দেশের নাগরিক নয়, গ্রামের মানুষও নাগরিক। তাই সব নাগরিকের জন্যই উন্নয়ন যদি সমন্বিত হয় বা হতো তাহলে বিষয়টি সুবিবেচনাপ্রসূত হতো বলে দাবি করতে পারতাম আমরা। হাজার হাজার বা লাখ লাখ কোটি টাকা ভিন্ন দেশের কাছ থেকে বা বিশ্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এনে, তা ঢাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় করা একচোখা উন্নয়নের শামিল হচ্ছে। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি বলে যে সংগীত তারা গাইছেন, তা যে মিথ্যারই আরেক নাম, সেটা গ্রামে না থাকলে বোঝার উপায় নেই।
ঢাকায় যোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে আরেকটি বড় সমস্যা হলো জমির স্বল্পতা। এ কারণে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছিল জটিলতা। স্টেশনে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পথ নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ সময় লেগেছে। বিমানবন্দর-কমলাপুর মেট্রোরেলেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় পরিকল্পনাধীন অন্য প্রকল্পগুলোও জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা। ঢাকার জন্য একটি সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) রয়েছে সরকারের। এ পরিকল্পনার আলোকেই ঢাকায় মেট্রোরেল, বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রিং রোডের মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু আরএসটিপির বাইরে গিয়ে ঢাকায় বৃত্তাকার রেলপথ, সাবওয়ের মতো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কতটা বাস্তবনির্ভর হবে, সেই ব্যাপারে সমীক্ষা চালানো জরুরি। আমাদের দ্বারা যেসব সমীক্ষা করা হয়েছে সেগুলো অধিকাংশই দুর্বল। প্রায়ই সংবাদপত্রগুলো রিপোর্ট করছে যে, সমীক্ষার দুর্বলতার জন্য সংশোধন করা হচ্ছে নির্মাণাধীন প্রকল্প।
সামগ্রিকভাবে ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো রাজধানীবাসীর কতটা কাজে লাগবে, জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বলেন, ‘বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে চলমান ও পরিকল্পনাধীন প্রকল্পগুলো আদতে ঢাকার যানজট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। ঢাকার যানজট নিরসনে বাস ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যাপ্ত ফুটপাতের সংস্থান করা সবচেয়ে জরুরি। কারণ ঢাকার সিংহভাগ মানুষ হয় বাসে চড়ে, না হয় হেঁটে যাতায়াত করে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কথা চিন্তা করে এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন শুধু উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহী করে তুলবে। মেট্রোরেল, বিআরটির মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ঢাকায় প্রতিদিন যত মানুষ চলাচল করে তার সামান্য অংশই এসব গণপরিবহন কভার করবে। ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়টি ভুল নীতিতে চলছে।’
ধরা যাক এই মহানগরের দুই কোটি বসতির মধ্যে দেড় কোটিই নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এবং দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। এসব মানুষ কি বাস র‌্যাপিড ট্রান্সজিটের সুযোগ ভোগ করতে পারবে? প্রথমত এদের ইনকাম এতই সামান্য যে তা দিয়ে উচ্চমূল্যের ভাড়া মেটানো সম্ভব নয়। আমার অভিজ্ঞতা হলো বিআরটির উন্মুক্ত করা অংশ দিয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত আসার। ওপরের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। কিন্তু ওই অংশটুকু আসতে আমাদের ব্যয় করতে হয়েছে ৮০ টাকা। এই পরিমাণ টাকা কতজন ব্যয় করতে পারবেন? আর বাসগুলোর ভাড়া যদি গরিবের সহনীয় না হয় তাহলে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যই মার খাবে। এসব উন্নয়নের শব্দ তখনই আনন্দের হবে যখন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষও তা বহনের ক্ষমতা রাখবে এবং সেই আনন্দধারা বইয়ে যাবে গণমানুষের সবার মধ্যে।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়