সন্তান জন্ম দিলেন ভারসাম্যহীন ভবঘুরে নারী

আগের সংবাদ

নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন

পরের সংবাদ

বিমান ছিনতাই ডামাডোলে অভ্যুত্থানের উদ্যোগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাপানি উড়োজাহাজ ছিনতাই ঘটনা সামাল দেয়ার কেন্দ্রে একদিকে যেমন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদের অবস্থান অন্যদিকে আকস্মিক অভ্যুত্থানের উদ্যোগে সাময়িকভাবে হলেও তিনি নিষ্ক্রিয় এবং বন্দি। তার চোখের সামনে বিমানবাহিনীর শ্রেষ্ঠ কয়েকজন অফিসার নিহত। তার আত্মজীবনী মাই ডেসটিনি থেকে এই পর্বটি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো। এই অধ্যায়টি বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লিখেছেন:
বিমান ছিনতাইকারীদের সঙ্গে আমাদের এই শর্তে সমঝোতা হলো যে, প্রতি ১০ লাখ (১ মিলিয়ন) ডলারের বদলে তারা ১০ জন করে জিম্মি যাত্রী মুক্তি দেবে। এভাবে ৬০ লাখ (৬ মিলিয়ন) ডলারের বিনিময়ে তারা ৬০ যাত্রীকে মুক্তি দিল। ছিনতাইকারীদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা চলার সময় আমি লক্ষ করেছি তারা তাদের একজন কারাবন্দি কমরেড ওকুদারিয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমি তাদের আশ্বস্ত করলাম ওকুদারিয়াকে সবার শেষে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাহের কুদ্দুসকে বললাম ওকুদারিয়াকে যেন নিচতলার একটি অফিস কক্ষে আনা হয়। ওকুদারিয়া এলে আমি তাকে এক কাপ চা সাধলাম। আমি বললাম, এত যাত্রী নিয়ে আমরা হাইজ্যাকারদের ঢাকা ছেড়ে যেতে দিতে পারি না। যেহেতু তারা মুক্তিপণও পেয়েছে, কমরেডদেরও পেয়েছে- সব যাত্রীকে এখানে মুক্তি দিয়ে যেতে হবে। আমি তাকে আরো জানাই যদি তারা অমান্য করে তা হলে কঠোর পরিণতি ঘটবে, তাদের ঢাকা ত্যাগ করতেই দেয়া হবে না। ওকুদারিয়া আমাকে বলে যত বেশিসংখ্যক সম্ভব যাত্রীদের এখানে ছেড়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেবে।
আমার প্রচেষ্টা কাজে লাগল। কেবল ২৬ জন যাত্রী রেখে বাকিদের ছেড়ে দিল। ভোর ৫টার দিকে পুরো বিনিময় প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলো। যখন একদিকে হাইজ্যাক পরিস্থিতির সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বাহিনীর ভেতরে ভয়ংকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে চলেছে।
২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে একটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। সৈনিকরা লেফটেন্যান্ট হাসান নামের একজন অফিসারকে হত্যা করে। আমাকে বলা হয়েছে বিদ্রোহীদের একটি অংশ ঢাকার দিকে রওনা হয়েছে। আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে সমস্যা সামলে নেয়া হয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর ১৯৭৭ পর্যন্ত দুটি কেবিনেট বৈঠকে অংশগ্রহণ করা ছাড়া আমি কন্ট্রোল টাওয়ারেই ছিলাম। ১ অক্টোবর ১৯৭৭ আর্মি সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা বিদ্রোহ করল। এই সিগন্যাল ব্যাটালিয়নটি কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটির কাছেই। বিদ্রোহীরা সীমানা দেয়াল ডিঙ্গিয়ে বিপ্লবী সেøাগান দিতে দিতে আকাশে গুলি ছুড়ছে। বিমানসেনারা তাদের ব্যারাকে ঘুমোচ্ছিল। বিদ্রোহীরা তাদের ঘেরাও করে ফেলল এবং অস্ত্রাগারের দিকে গেল। তারা অস্ত্র পেল কিন্তু গোলাবারুদ পেল না। একদল বিদ্রোহী রেডিওর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল। ভোরবেলায় সার্জেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে বিমানসেনাদের একটি দল এয়ারপোর্টে ঢুকে নির্বিচারে অফিসারদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করল। আমি তখন সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালকের দপ্তরে ছিলাম। একদল বিমানসেনা আমাকে নিচতলায় নিয়ে গেল। ঢাকা ঘাঁটির কমান্ডার গ্রুপ ক্যাপ্টেন আনসার চৌধুরী আমার সঙ্গে ছিলেন। অটোমেটিক গান হাতে একজন সার্জেন্ট আমাদের দুজনকে হলের মাঝখানে এনে গুলি করল। গ্রুপ ক্যাপ্টেন আনসার চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়ে তৎক্ষণাৎ মারা গেলেন আর আমি চড়া গলার আওয়াজ শুনলাম, কেউ বলছে ‘চিফকে নয়’। তারপরও সার্জেন্ট আমাকে গুলি করলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। আমি দৃঢ়ভাবে এগিয়ে তার কাছে গেলাম এবং শারীরিকভাবে তাকে ধরে ঠাণ্ডা করলাম। সে বেশ শক্তিশালী, শূকরছানার মতো ঘামছিল। আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সে চলে গেল। আর একদল বিমানসেনা আমাকে ঘিরে ধরে অপর একটি কক্ষে নিয়ে এলো এবং একটি স্টিলের আলমারির পেছনে আড়াল করে রাখল। তারা আমাকে একটি লুঙ্গি এনে দিল এবং আমার পোশাক বদলে নিতে বলল। আমি তাই করলাম। এ পর্যায়ে এই দলের বিমানসেনারা চলে গেল এবং নতুন একদল এলো। তাদের মনে হলো আরো বৈরী। তারা আমার সঙ্গে না, কিংবা নিজেদের মধ্যেও কিছু বলাবলি করল না। তারা প্রথম যে কাজটা করল তা হচ্ছে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। ততক্ষণে ভোর হয়ে আসছে। জানালা দিয়ে আমি কিছুসংখ্যক সৈন্যের চলাচল লক্ষ করলাম। হঠাৎ দরজা খুলে গেল এবং আমার সামনে দেখি সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন উপস্থিত। ক্যাপ্টেন ও তার লোকজন আমাকে সেই রুম থেকে বের করে রানওয়ে ধরে দৌড়াতে শুরু করল। আমি এতটাই ক্লান্ত যে তাদের সঙ্গে পেরে উঠছিলাম না। গতিটা ধরে রাখতে সৈন্যরা আমাকে সাহায্য করছিল। আমার চোখে পড়ল কয়েকজন বিমানসেনা অস্ত্রহাতে ঘোরাঘুরি করছে। আমাকে নবম ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মীর শওকত আলীর কাছে নেয়া হলো। সেখানে কর্নেল ইমতিয়াজ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাহেরের সঙ্গেও দেখা হলো।
যে ক্যাপ্টেন আমাকে উদ্ধার করেছিলেন তার নাম সাদেক হোসেন রুমী, তিনি পরে জেনারেল হন এবং অবসরগ্রহণ করেন। সশস্ত্র বিমানসেনারা যে ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে আমি তা শুনতে পাই। বহুসংখ্যক অফিসারের মৃত্যুর সংবাদ আমি পেয়েছি। আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের সঙ্গে কথা বলি। বিমানসেনারা তাকে ধরে কুর্মিটোলা নিয়ে গিয়েছিল। আমার ভাই নবম ডিভিশনের সদর দপ্তরে এলো, আমি তার সঙ্গে আমার উদ্বিগ্ন ও বৃদ্ধ বাবাকে দেখতে যাই। অন্যদিকে আমাকে স্বীকার করতে হবে, আমার বোধোদয় হলো, তৎক্ষণাৎ বাবাকে দেখতে না গিয়ে আমার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি বুঝে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা উচিত ছিল।
বগুড়ার বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। এয়ারপোর্টে দায়িত্বরত বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের ২ অক্টোবর ১৯৭৭ ভোরের আগেই গুলি করে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা সদর দপ্তরের চারদিন লেগে যায়। আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে : এই সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে কেন ব্যর্থ হয়? বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরী এবং বিচারপতি মাসুদের সমন্বয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনকে দেয়া জেনারেল শওকত আলীর বিবৃতি থেকে সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া যায়। (জওয়ানদের বিদ্রোহের সম্ভাব্য ৭টি কারণ তিনি উল্লেখ করেন, এর মধ্যে রাজনৈতিক উসকানি ও স্বার্থান্বেষী বিদেশি শক্তির প্ররোচনার কথাও বলেন।)
আমি আবার হাইজ্যাকার প্রসঙ্গে ফিরে আসছি। আমি উল্লেখ করেছি যে ওকুদারিয়াকে বলেছিলাম যে, যদি সব যাত্রী ছেড়ে দেয়া না হয় তাদের ঢাকা ত্যাগ করতে দেয়া হবে না। এই বৈঠকটি কাজে লেগেছে। এর আগে ছিনতাইকারীদের পরবর্তী গন্তব্য কোনটা হতে পারে এ নিয়ে আমি জাপানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি বললেন, আলজেরিয়ান সরকার ছিনতাইকারীদের অস্থায়ী স্বল্পকালীন আশ্রয় দিতে সম্মত হয়েছে। আলজেরিয়া যাওয়ার জন্য আমরা তাদের ফ্লাইটে ব্যবহার্য ম্যাপ ও চার্ট সরবরাহ করলাম। জিম্মি সংকটের একটি সমাপ্তি ঘটিয়ে ২৬ জন যাত্রী নিয়ে তারা ঢাকা ত্যাগ করল। তাদের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় আমি এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলাম না। আমি এয়ারপোর্ট ছেড়ে যাওয়ার পর স্বাচ্ছন্দ্যে জাপানি ভাষা বলতে পারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শেখ জালালই জাপানি প্রতিনিধি দল সামলে নিলেন।
৩ অক্টোবর ১৯৭৭ সকালে এয়ার কমোডর ওয়াহিদুল্লাহ ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম এবং নবম ডিভিশনের একটি সেনা ট্রুপ নিয়ে বিদ্রোহী বিমানসেনাদের নিরস্ত্র করতে কুর্মিটোলা গেলাম। সবাই বেরিয়ে এলো এবং সুশৃঙ্খলভাবে জমায়েত হলো। আমি তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে নির্দেশ দিলাম। তারা আমার সামনে একে একে সবাই তাদের অস্ত্র জমা রাখল। আমি অফিসে ফিরে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করলাম। অফিসারদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতা বিরাজ করছে। বিদ্রোহীরা ১১ জন অফিসারকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন : গ্রুপ ক্যাপ্টেন আনসার আহমেদ চৌধুরী, গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাস মাসুদ, উইং কমান্ডার আনোয়ার আলী শেখ, স্কোয়াড্রন লিডার মো. আবদুল মতিন, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মেসবাহুল করিম, শওকত জামান চৌধুরী, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সালাহউদ্দিন আহমেদ খান, ফ্লাইং অফিসার এবিএম আখতারুজ্জামান খন্দকার, ফ্লাইং অফিসার মাহবুবুল আলম, ফ্লাইং অফিসার শরিফুল ইসলাম, ফ্লাইং অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন আনসার এবং পাইলট অফিসার নজরুল ইসলাম তালুকদার। নিহতদের মধ্যে গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাস মাসুদ ছিলেন আমার বোনের স্বামী। আমার পরিবার মনে করে থাকে আমার বোনের স্বামীকে বাঁচাতে আমি পর্যাপ্ত দায়িত্ব পালন করিনি। এটা পরিবারের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছে, এখনো তার অবসান ঘটেনি।
হাইজ্যাকাররা চলে যাওয়ার কয়েক দিন পর আমি জানতে পারি তারা আলজেরিয়া পৌঁছে বাকি যাত্রীদের মুক্তি দিয়েছে। তারা তাদের বন্দি সব কমরেড ও ৬০ লাখ ডলার নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছে। আমি জেনেছি ওকুদারিয়া ছাড়া বিমান ছিনতাইকারী ও তাদের সঙ্গীদের সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। মিস্টার হায়াকাওয়া এমপি এবং বিশেষ করে মিসেস ইয়ামাগাতাসহ জাপানের একটি পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এল বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে। নিজেদের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশের নাগরিকরা জাপানিদের জীবন রক্ষা করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এতদিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক টুলুকে ডেকে জাপানি প্রতিনিধি দলের কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানায়। ফলে ঘটনাটি যতটা আলোচিত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। আমি আমার অফিসারদের মৃত্যুতে ব্যথিত ছিলাম। এ সফরকেন্দ্রিক সবকিছু থেকে আমি নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আমার পরামর্শেই মিস্টার হায়াকাওয়া একটি বোয়িং ৭০৭ উড়োজাহাজ কেনার জন্য বাংলাদেশকে ৬ বিলিয়ন ডলার নগদ প্রদান করেন।
একদিকে আমার অফিসারদের মৃত্যু, অন্যদিকে সামরিক আইন ট্রাইব্যুনালে আমার বাহিনীর সদস্যদের বিচার আমার কমান্ড দুর্বল করে দেয়। সুতরাং আমি অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যখন প্রেসিডেন্ট জিয়ার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করলাম, তিনি বিস্মিত হলেন না। তিনি জানতে চাইলেন আমার জায়গায় কাকে বিমানবাহিনী প্রধান করলে ভালো হবে। আমি এয়ার কমোডর সদরুদ্দীনের নাম বললাম, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। নতুন কেবিনেট গঠন না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমাকে তার মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বললেন। এটা আমি চাইনি, তবুও আমি সম্মত হলাম কারণ আমি তাকে বিব্রত করতে চাইনি। আমি শুধু নিশ্চিত করতে চেয়েছি সামরিক আইন ট্রাইব্যুনালে আমার লোকদের বিচার নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করি প্রচলিত এয়ার ফোর্স ল’ অনুযায়ী তাদের বিচার করা যেত, এই আইনই পর্যাপ্ত। এতে আমাদের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ আরো শক্তিশালী হতো। শেষ পর্যন্ত আমি ৭ ডিসেম্বর ১৯৭৭ অবসরগ্রহণ করি। আমি তখনো বিশ্বাস করতাম জিয়াকে এগিয়ে যেতে দেয়া উচিত যাতে অচলাবস্থা থেকে দেশকে টেনে তুলতে পারেন।
আমি যখন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ছিলাম, যখন তিনি চাইতেন- সততার সঙ্গে পরামর্শ দিয়ে আমি জেনারেল জিয়াকে সমর্থন দিতে চেষ্টা করতাম। জিয়া প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডিজিএফআই একদিন আমার অফিসে এসে জানান একটি চিন্তা বিরাজমান রয়েছে যে, জনগণের চাহিদা মেটাতে এবং সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রত্যাশা পূরণ করতে আমাদের সংবিধান যথার্থ নয়। সংবিধান প্রণয়নকারীরা এটা বিবেচনায় আনেননি যে, একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তাই সেনাবাহিনী মূল অবস্থান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে- প্রান্তবর্তী করে ফেলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি রক্ষীবাহিনী সৃষ্টির কথা বললেন। আমি বুঝতে পারলাম সেনাবাহিনী তুরস্কের মতো রাষ্ট্রীয় বিষয়ে একটি ভূমিকা পালন করতে চায়। আমি মনে করলাম দেশ তো এখন নির্বাচিত বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংবিধান বাতিল করা সন্দেহ ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করবে। সুতরাং আমি তাকে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধেই পরামর্শই দিলাম। অন্য এক অনুষ্ঠানে আমাকে বলা হলো, প্রেসিডেন্ট কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় উপদেষ্টা হিসেবে নিতে চাচ্ছেন। এখানে আমি আবারো বললাম, বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার যাত্রায় এই উদ্যোগ বাধার কারণ হবে এবং ভুল বার্তা দেবে।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে,
নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়