শেখ পরশ : নোবেলজয়ীর জন্য কি আইন হবে অন্যরকম?

আগের সংবাদ

ছাত্র সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী : স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাণ্ডারি হবে ছাত্রলীগ > বিএনপির উদ্দেশ্য ভোট নয়

পরের সংবাদ

আর কত প্রাণ গেলে নালার পাশে বেষ্টনী ও স্ল্যাব বসবে?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরীর জন্য এক অভিশাপ। বছরের পর বছর এই অভিশাপ মাথায় নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ জীবনযাপন করছে। দীর্ঘদিন এই জলাবদ্ধতার সঙ্গে বসবাস করতে করতে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে এটা নতুন কিছু মনে হয় না। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান প্রধান সড়ক জলাবদ্ধতায় রূপ নেবে এটা একদম মুখস্থ বিষয়। এটাকে সঙ্গে নিয়েই এই অঞ্চলের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার চেয়েও বড় ভয়ংকর হয়ে উঠছে ড্রেন অর্থাৎ নালা। ছোট-বড় এসব নালা অনেক সময় জলাবদ্ধতার কারণে দেখা যায় না, আবার অনেক সময় অসাবধানতার কারণেও এই ড্রেনগুলোতে সাধারণ মানুষ পড়ে যায়। আর তখনই সৃষ্টি হয় দুর্ঘটনা। নিভে যায় জীবনের প্রদীপ। জলাবদ্ধতার কারণে এখন রাস্তার পাশে খাল-নালাগুলোই হয়ে উঠে একমাত্র মৃত্যুফাঁদ। আমরা যেভাবেই রাস্তা দিয়ে যাই না কেন অন্যান্য দুর্ঘটনার পাশাপাশি এখন এই ড্রেনে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বিরাট ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে।
গত ২৭ আগস্ট এটার অন্যতম উদাহরণ সারাদেশের মানুষ দেখেছে। শিশু আরাফাতের মৃত্যু কাঁদিয়েছে সবাইকে। একটা ছোট্ট শিশুও বাঁচতে পারেনি। এই মৃত্যু থেকে শিশু, বৃদ্ধ, পুরুষ-নারী, কর্মজীবী, শিক্ষার্থী কারো রেহাই নেই। সবাই এই ভয়ংকর মৃত্যুকূপে আটকে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে নালায় পড়ে শিক্ষার্থীসহ কয়েকটি মৃত্যুর পরও টনক নড়েনি সেবা সংস্থাগুলোর। দেয়া হয়নি সø্যাব কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনী। তাদের অব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছেন নগরবাসী। চট্টগ্রাম শহরটাকে অনিরাপদ হিসেবে বারবার প্রমাণিত করছে দায়িত্বশীলরা। প্রকৃতপক্ষে এর দায় সিটি করপোরেশন কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেউই এড়াতে পারে না। অথচ এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায় চাপিয়ে দিব্যি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে প্রতি বছর। এভাবে আসলে একটা শহর পরিচালনা হয় না। অথচ ৫ বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। এই একটা বিষয়ে যেন সবাই এসে আটকে যায়। মেয়র পরিবর্তন হয়, সিডিএ চেয়ারম্যানও পরিবর্তন হয়, শুধু পরিবর্তন হয় না এই জলাবদ্ধতা, আর নালায় পড়ে মৃত্যুর করুণ দৃশ্য। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বোতল কুড়াতে গিয়ে নালায় নিখোঁজ হয় কামাল নামে ১২ বছরের এক শিশু। তলিয়ে যাওয়ার ৩ দিন পর মির্জা খালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট জলাবদ্ধতার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে মুরাদপুর এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদ নামে একজন সবজি বিক্রেতা। এখন পর্যন্ত তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি। এর কয়েক দিন পর ৩০ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে মারা যান কলেজশিক্ষার্থী সেহরীন মাহমুদ সাদিয়া। ৯ জুন নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় নালায় পড়ে মারা যায় আল আমীন নামে এক শিশু। একই বছরের ৩০ জুন ষোলোশহর চশমা হিল এলাকায় খালে রিকশা থেকে পড়ে মারা যান চালক সুলতান ও যাত্রী খাদিজা বেগম।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে নালা-নর্দমায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে ৫ হাজারের বেশি। যার সর্বশেষ বলি হয়েছে শিশু আরাফাত। তবে নিয়মিত এসব নালায় পড়ে আহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এত এত প্রাণহানি ও আহত হওয়ার পরও এই বিষয়টা নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উন্মুক্ত নালাগুলো এখনো অরক্ষিত। কোনো ধরনের সø্যাব কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হয়নি। নেই কোনো পরিকল্পনা। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ এতে ক্ষুব্ধ। এ অঞ্চলের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে আছে এই সমস্যাটি। অথচ বছরের পর বছর এই একটা সমস্যার সমাধান করে দেবে বলে চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে ছলনা করে যাচ্ছে প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এটা শুধু বর্ষার সময় একটা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে মাত্র। বাকি সারা বছর এই বিষয়টা নিয়ে আর কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। বর্ষা এলেই শুধু এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, টকশো হয়, মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আর কতদিন শব্দটাও আসলে ভুল, আর কতকাল বলতে হয়। এত এত বছর ধরে এই এক সমস্যা নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ বসবাস করছে কী পরিমাণ যন্ত্রণা নিয়ে একবার ভেবে দেখুন। সীমাহীন এই কষ্ট থেকে চট্টগ্রামের মানুষ বাঁচতে চায়, মুক্তি চায়। তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, কবে মিলবে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি?

আজহার মাহমুদ : খুলশী-১, চট্টগ্রাম ৪২০২।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়