খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে যান চলাচল ব্যাহত

আগের সংবাদ

ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার চিন্তা ছিল না, চেষ্টাও করিনি : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

রাজনীতিতে অজ্ঞতা ও চাতুর্যপনা : আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট-ফ্যাসিস্টবাদী সাজিয়ে উগ্রতা ছড়ানো

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে গত দেড়-দুই বছর ধরে কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতার মুখে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বা ফ্যাসিবাদী দল বলে আখ্যায়িত করে চিৎকার করে বক্তৃতা করতে শোনা যায়। মূলত যারা একসময় তথাকথিত বাম বিপ্লবী রাজনীতি করে এখন ডানে অবস্থান কিংবা জোট পাতিয়েছেন তারাই এই শব্দগুলো ঘন ঘন ব্যবহার করছেন। তাদের যারা শুনছে সম্ভবত তরুণদের সেই বড় অংশই এই শব্দের অর্থ কিংবা ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা কী, তা জানেও না। না জানা এসব তরুণের কাছে এর অর্থ যার যার মতো করে দাঁড় করানো হয়। কেউ এটিকে একটি গালি মনে করে থাকেন। কেউ খুনিও মনে করে থাকতে পারেন। তবে আমি নিশ্চিত বেশির ভাগ শ্রোতাই রাজনীতির এমন পরিভাষার রাজনৈতিক ভাবাদর্শগত সংজ্ঞা কিংবা অর্থ খুব একটা জানেনও না। যেসব নেতা উচ্চারণ করেন তারা হয় নিজেরা এই সম্পর্কে ছাত্রজীবনে কারো কারো কাছে শুনে শুনে বড় নেতা হয়েছেন কিংবা যৎসামান্য জ্ঞান নিয়ে এখনকার তরুণদের ভাবাবেগকে চাতুর্যের সঙ্গে ব্যবহার করার কৌশল অবলম্বন করছেন। এমনটি বলার কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে যারা ফ্যাসিস্ট কিংবা ফ্যাসিবাদী দল বলেন, তারা কোনো অর্থেই রাজনৈতিক সংজ্ঞায়নে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী দল বলে প্রমাণ করতে পারবেন না। তাদের ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক পড়াশোনা থাকলে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এই দলকে অন্তত ফ্যাসিবাদের ধারেকাছেও দেখাতে পারা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। সেই রাজনৈতিক জ্ঞান তাদের নেই। ছাত্রজীবনে বিপ্লবী ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদ-নাৎসিবাদের কথা বড়দের কাছে শুনেছেন মাত্র, মুসোলিনি-হিটলারের নাম ও আদর্শের কথা শুনে তাদের অত্যাচার-নির্যাতনকে তারা ফ্যাসিবাদ হিসেবে বুঝেছেন হয়তো। যদি তারা ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান রাখতেন, তাহলে সাম্প্রতিককালের জঙ্গিবাদকে সেই ধারার উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মতাদর্শের সঙ্গে মেলালে কিছুটা তাদের ‘পাণ্ডিত্য ও জ্ঞানগর্ভের’ প্রমাণ মেলানো যেত। কিন্তু তারা নিজেরাই এখন জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী উগ্র ধর্মান্ধ অনেক ছোট-বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করছেন এবং তাদেরই ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আরোহণের পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছেন। এর চেয়ে কম কোনোভাবেই তাদের রাজনীতির পরিণতি ভবিষ্যতে প্রত্যক্ষ করা যাবে না। ফ্যাসিজম শব্দটি লাতিন ‘ফ্যাসিও’ শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ গুচ্ছ। যা বাংলায় আমরা ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ এর সঙ্গে তুলনা করতে পারি। ইতালিতে এটি একসময় একতা হিসেবেও ভাবা হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইতালির মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত এবং বেকার তরুণরা অনেকটাই দিশাহারা ছিল। ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুসোলিনি ইতালির এই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য একজন দৃঢ়চেতা নেতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিন মাস পরে বলোনায় অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি নিজেকেই সেই নেতারূপে ঘোষণা করেন। ১৯১৯ সালে মিলানে তিনি তার রাজনৈতিক ইচ্ছার বাস্তবায়নের জন্য একটি দলের নিউক্লিয়াস প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ইতালির রাজনৈতিক নানা শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি আলোচনা শুরু করেন। যেসব শক্তি তার সঙ্গে হাত মেলান তারা হলো রিপাবলিকান, নৈরাজ্যবাদী, সিন্ডিকালিস্ট, অসন্তুষ্ট সমাজতন্ত্রী, অস্থির বিপ্লবী এবং বাহিনীচ্যুত সেনাকর্মকর্তারা। প্রাচীন রোমান ক্ষমতার মতো তিনি এদের নিয়ে গঠন করলেন ঃযব ভধংপর ফর পড়সনধঃঃরসবহঃড় (‘ভরমযঃরহম নধহফং’)। ১৯১৯ সাল থেকে বাহিনী হিসেবে এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আক্রমণ চালিয়ে ধ্বংস করত। ১৯২০ সালের শেষের দিকে এই কালো শার্ট পরিহিত বাহিনীর হাতে শত শত কমিউনিস্ট, প্রজাতন্ত্রী, রোমান ক্যাথলিক, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, সমাজতন্ত্রী নিহত হন। ১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে এসব বাহিনীকে নিয়েই তিনি গঠন করেন ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টি। ১৯২১ সালের নির্বাচনে মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট বাহিনী ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করেছিল, কিন্তু জয়লাভ করতে পারেনি। এরপর ১৯২২ সালে রোমে হাজার হাজার ফ্যাসিস্ট মার্চ করে প্রবেশ করে। সম্রাট ইমানুয়েল বাধ্য হয়ে নির্বাচিত সরকারকে বাদ দিয়ে মুসোলিনির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরপরের ইতিহাস কেবলই হত্যা, ভয়ভীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচার-প্রচারণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী দল শুধু ক্ষমতায়ই ছিল না, জার্মান নাৎসিবাদ, জাপানের সমরবাদ এবং স্প্যানিশ ফ্যাসিস্টদের অন্যতম মিত্রশক্তি হিসেবেও ভূমিকা রেখেছিল। ইতালির ফ্যাসিবাদ থেকে জার্মান নাৎসিবাদ মতাদর্শগত ধারণা গ্রহণ করেছিল। হিটলারের ন্যাশনাল সোশালিস্ট পার্টি এবং তার লেখা গবরহ কধসঢ়ভ গ্রন্থই ছিল নাৎসিবাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইবেল। যেখানে বিশুদ্ধ জার্মান জাতি ছাড়া আর কোনো জাতির অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হতো না। মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের গøানি সম্পূর্ণরূপে মুছে দিতে ঋঁযৎবৎ (একমাত্র নেতা) হিটলার জার্মান জাতিকে উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সহিংস যুদ্ধের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ক্ষমতায়ও অধিষ্ঠিত হলেন। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব আয়োজনই সম্পন্ন করেছিলেন। বিশ্ব তখন এক মহাযুদ্ধ থেকে আরেক ভয়াবহ মহাযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে জার্মানি, জাপান ও ইতালির সমরজোটের বিপক্ষে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের জোট গঠনও কিছুতেই যেন শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি করতে সক্ষম ছিল না। কারণ হিটলারের নানা কৌশল, বিভাজন এবং নাৎসিবাদী প্রচার-প্রচারণা এতটাই শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছিল, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র অনেকটাই দিশাহারা ছিল। ফ্যাসিবাদের এমন উত্থানের পরিণতি যে মানবসভ্যতার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে যাচ্ছে। সেটি দেশত্যাগী আলবার্ট আইনস্টাইনসহ অনেক লেখক, বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী সতর্ক করেছিলেন। ১৯৩৫ সালের ২৫ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের ৭ম কংগ্রেস মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে যোগদান করেছিলেন বিভিন্ন দেশের ৬৫টি রাজনৈতিক দলের ৫১৩ জন ডেলিগেট। তারা ফ্যাসিবাদের উত্থান ও বিপর্যয় নিয়ে এই ২০ দিন চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছিলেন। ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদের সংজ্ঞায়ন নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ব্রেইনস্ট্ররমিং করেন। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাটি দিয়েছিলেন তৎকালীন বুলগেরীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা গিওর্গি দিমিত্রেভ (১৮৮২-১৯৪৯)। তিনি বলেছেন, ‘ঋধংপরংস রং ঃযব ঢ়ড়বিৎ ড়ভ ভরহধহপব পধঢ়রঃধষ রঃংবষভ. ওঃ রং ঃযব ড়ৎমধহরুধঃরড়হ ড়ভ ঃবৎৎড়ৎরংঃ াবহমবধহপব ধমধরহংঃ ঃযব ড়িৎশরহম পষধংং ধহফ ঃযব ৎবাড়ষঁঃরড়হধৎু ংবপঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঢ়বধংধহঃৎু ধহফ রহঃবষষরমবহঃংরধ. ওহ ভড়ৎবরমহ ঢ়ড়ষরপু, ভধংপরংস রং লরহমড়রংস (অতিউগ্র দেশপ্রেম) রহ রঃং সড়ংঃ নৎঁঃধষ ভড়ৎস, ভড়সবহঃরহম নবংঃরধষ যধঃৎবফ ড়ভ ড়ঃযবৎ হধঃরড়হং…. ঞযব ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ভধংপরংস, ধহফ ঃযব ভধংপরংঃ ফরপঃধঃড়ৎংযরঢ় রঃংবষভ, ধংংঁসব ফরভভবৎবহঃ ভড়ৎসং রহ ফরভভবৎবহঃ পড়ঁহঃৎরবং, ধপপড়ৎফরহম ঃড় যরংঃড়ৎরপধষ, ংড়পরধষ ধহফ বপড়হড়সরপ পড়হফরঃরড়হং ধহফ ঃড় ঃযব হধঃরড়হধষ ঢ়বপঁষরধৎরঃরবং, ধহফ ঃযব রহঃবৎহধঃরড়হধষ ঢ়ড়ংরঃরড়হ ড়ভ ঃযব মরাবহ পড়ঁহঃৎু.’
এই সংজ্ঞার কোন শব্দ দ্বারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জোনায়েদ সাকিসহ আরো যারা আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বা ফ্যাসিবাদী দল বলে নিজেদের দলীয় নেতাকর্মীদের সম্মুখে বিদ্যা জাহির করছেন, তারা একটু দয়া করে ব্যাখ্যা দেবেন কী? ফ্যাসিজম হচ্ছে লগ্নি পুঁজির নিজস্ব ক্ষমতা। এটি শ্রমিক শ্রেণি এবং কৃষক ও বুদ্ধিজীবীদের বিপ্লবী অংশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী প্রতিহিংসার সংগঠন। বৈদেশিক নীতিতে, ফ্যাসিবাদ তার সবচেয়ে নৃশংস রূপে জিঙ্গোবাদ (অতিউগ্র দেশপ্রেমবাদ), যা অন্যান্য জাতির প্রতি সর্বোত্তম ঘৃণাকে উসকে দেয়। ফ্যাসিবাদের বিকাশ এবং ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র নিজেই ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় বিশেষত্ব ও প্রদত্ত দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান অনুসারে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। এটি এমনই একটি উগ্র মতাদর্শ, যা বিপুল অর্থ দ্বারা নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করার জোগানদাতা পায় এবং অতিউগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী দল এবং শক্তি সশস্ত্র পন্থায় প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মানসিকতা রাখে। সেই মানসিকতাটি রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা যুবক, তরুণ তথা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে উন্মাদনা তৈরি করে তাতে সাধারণ মানুষ, ভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় বেঁচে থাকার অধিকার হারায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার এবং মুসোলিনির বাহিনী সেভাবেই অন্য জাতি এবং সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গ্যাস চেম্বার, নির্যাতন ক্যাম্প, গণহত্যা, ইহুদি হত্যা, দখলিকৃত অঞ্চলে নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সবাইকে হত্যা এবং তাদের সহায়ক শক্তিরূপে কাজ করতে বাধ্য করেছিল। এরপর এদের হত্যাও করা হতো। নারী ধর্ষণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই জার্মানিতে হিটলার ইহুদি নিধনের যাত্রা শুরু করেছিল। জ্ঞানবিজ্ঞানের বইপুস্তক ও লাইব্রেরি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। গবরহ কধসঢ়ভ ই একমাত্র শিক্ষার বই হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। জার্মান জাতি ছাড়া হিটলারের কাছে আর কোনো জাতির অস্তিত্ব স্বীকৃত ছিল না। এই অপশক্তিকে পরাজিত করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ফ্রন্ট এবং পশ্চিম ফ্রন্টের দেশ ও জাতিসমূহের কোটি মানুষের প্রাণের বিনিময়ে হিটলার, মুসোলিনি এবং জাপানের সমরবাদকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। বিশের দশকের প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ফ্যাসিবাদের তেমন কোনো রাজনৈতিক প্রপঞ্চও দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু বিশের দশকেই এর ছোবল একের পর এক ইতালিতে হানতে শুরু করে। নাৎসিবাদ হয়ে ফ্যাসিবাদ ত্রিশের দশকে সবার জন্য মহাদৈত্যের শক্তিতে আসীন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দুই-তিন বছর বিশ্ব ছিল বিপন্ন এক সংকটের মুখে। কিন্তু মানবতার শক্তি নিজেদের দেশপ্রেম দ্বারা এই দানবীয় শক্তির অগ্রযাত্রাকে একে একে চারদিক থেকে রুখে দিতে থাকে। অবশেষে ’৪৫ সালে এই দানবের মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এখনো ইউরোপের কোনো কোনো দেশে নব্য নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো শক্তিধর রাষ্ট্র এই বিষধর সাপ নিয়ে আবার খেলা করছে। কিন্তু এর ছোবল যে কোনো মুহূর্তে হানা দিতে পারে। এখন যারা বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিবাদের জুজুর ভয় দেখাচ্ছে, তারা আসলে তরুণদের একটি অংশের মনোজগতে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বিদ্বেষ, ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করছে। এটি অবশ্য নতুন করে নয়, ’৭৫-এর পর থেকেই ঘটানো হচ্ছে। ২০০১-০৬ সালে এর ভয়ংকর পরিণতি দেখতে হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ ঘটাতে ওই সব তরুণ যা করবে তা এককথায় সন্ত্রাসবাদী আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়। বামদের কাণ্ডজ্ঞান রাজনীতিতে যদি এমনই বিভ্রান্ত্রিকর হয়, তাহলে তাদের অস্তিত্ব তারাই যে বিপন্ন করছে সেটি তাদের খণ্ড-বিখণ্ডিত হওয়া এবং ডান ও উগ্রডানে মিশে যাওয়ার মধ্যেই তাদের দেখা ছাড়া আর কোনো স্থান তারা রাখেননি। আওয়ামী লীগের সীমাবদ্ধতা আছে, ভুলত্রæটি আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তার অনেক কিছুই আওয়ামী লীগের হাত ধরে বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু যারা আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বলেন তারা একবার নিজেদের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখুন তো তারা কারা? তাদের চারপাশে কারা? অবশ্য জনগণ, মাটি ও মানুষের রাজনীতি যারা কোনোদিন করেননি, বোঝেনওনি, কেবল বুলি কঁপচিয়েছেন তাদের কাছ থেকে দেশীয় ও বিশ্বরাজনীতির অনেক কিছুই বিকৃতভাবেই উপস্থাপিত হয়।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়