ভূমি আইন ভঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা : নাটোরে ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নারী আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন

আগের সংবাদ

ফের আলোচনায় ড. ইউনূস : হতে চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান > জাতীয় দুর্যোগে নেই জাতির পাশে

পরের সংবাদ

ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার চিন্তা ছিল না, চেষ্টাও করিনি : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে ** বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভোট **

কাগজ প্রতিবেদক : ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের কোনো চিন্তা ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ কারণে সেরকম চেষ্টাও আমরা করিনি। কারো কাছে বলিওনি। হ্যাঁ, নিলে খুশি হতাম। কিন্তু প্রথমবারেই গিয়েই সদস্যপদ পাব, সেই চিন্তা আমাদের ছিলও না। আর বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, এটা ঠিক নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের সে মর্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকায় পঞ্চদশ ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকসের সদস্যপদ আমরা চাইলে পাব না, সে অবস্থাটা নেই। প্রত্যেক কাজেরই একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি। আমার সঙ্গে যখন সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হলো। তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। বললেন, ব্রিকস সম্প্রসারণ করা হবে। আমাকে আসতে বললেন। এও জানালেন তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেন। আমার মতামত জানতে চাইলেন। আমি বললাম, এটা খুবই ভালো হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে আমরা যখন লাঞ্চে বসি; তখন ব্রিকসের প্রেসিডেন্ট আমার পাশেই ছিলেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। নিউ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলও ছিলেন। ওই সময় আলোচনা হয়- বলল আমরা এই কয়জন নেব। এরপর আমরা ধাপে ধাপে আরো সদস্য সংখ্যা বাড়াব। কাজেই বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, এটা ঠিক নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে মর্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে।
বিএনপির আমলে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ এ নিয়ে বিএনপি নানা কথা বলতেই পারে। কিন্তু তাদের আমলে বিশ্বে বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না। বাংলাদেশ মানেই ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, বন্যার দেশ, হাত পেতে চলার দেশ, ভিক্ষা চাওয়ার দেশ। এখন অন্তত বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়। এটা সবাই জানে।
ব্রিকস নেতাদের সঙ্গে নিজের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিকস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শুরু থেকেই এই ৫টা দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার ভাল যোগাযোগ সবসময় ছিল, আছে। ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাঝে ছিলেন না। এখন আবার নতুন করে এসেছেন। যখন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হলো, সেটির ওপরই আমাদের আগ্রহটা ছিল। সেখানে আমরা যুক্ত হতে চেয়েছিলাম, হয়েছি। ব্রিকসের সদস্যপদ নিয়ে প্রেসিডেন্ট তখনই বলেছিলেন- তারা ধাপে ধাপে সদস্য নেবেন। ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় তাদের নেবেন। পর্যায়ক্রমে সদস্য সংখ্যা তারা বাড়াবেন। হ্যাঁ, নিলে আমরা খুব খুশি হতাম। কিন্তু প্রথমবারেই গিয়েই সদস্যপদ পাব, সেই চিন্তা আমাদের ছিলও না। আর সেরকম চেষ্টাও আমরা করিনি। কারো কাছে বলিওনি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনতা মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসকে নিয়ে ১৬০ বিশ্ব নেতার বিবৃতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিবৃতি না দিয়ে যদি এতই দরদ থাকে তারা ল-ইয়ার (আইনজীবী) পাঠাক। মামলার সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুক। তারাই দেখে বিচার করে যাক- এখানে কোনো অপরাধ আছে কিনা।

আমি মনে করি, এটা একবার পাঠালে অনেক কিছুই বের হবে। নয়তো আমাদের দেশের আইন আছে আদালত আছ। ‘ল উইল টেক ইটস ওন কোর্স’। এটা সাফ কথা।
বিবৃতিদাতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলেছেন, কিন্তু দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলে আবার এগুলো নিয়ে কথা আসছে। কেন? তিনি বলেন, মামলা তো আমরা করিনি। এনবিআর থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লেবাররা মামলা করেছেন। নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে না- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, পরবর্তী সময় তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন।
বিবৃতির ফলে আদালত প্রভাবিত হবে কিনা, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কিনা- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পারবে না কেন? আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। ভয় পেলে চলবে না। শ্রমিকদের পাওনা তাদের দিতে হবে। এখন যদি জিজ্ঞেস করি, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি। তাহলে সরকারি বেতনভুক্ত একজন কীভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন? কীভাবে তিনি এগুলো করেন?
নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি, বাজার সিন্ডিকেট ও বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাবে না, এটা কোনো কথা নয়। যখনই পণ্যের দাম বাড়ায়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না- বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন? বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরব তো। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউস ব্যবসা করে। যখনই তারা দাম বাড়ায় আমরা আমদানি করি, বিকল্প ব্যবস্থা করি। যাতে তারা বাধ্য হয় দাম কমাতে। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। কাজেই সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাবে না, এটা কোনো কথা নয়। কত শক্তিশালী সিন্ডিকেট আমি জানি না, আমি দেখব কী ব্যবস্থা করা যায়।
নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অংশগ্রহণটা কার অংশগ্রহণ? আমার কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ। জনগণ ভোট দেবে। সেই ভোটে যারা নির্বাচিত হবে, তারা সরকারে আসবে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা অংশগ্রহণ বলতে কি বোঝান? ভোট চোরদের? ভোট ডাকাতদের? দুর্নীতবাজ, মানিলন্ডারিং, খুনি, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, জাতির পিতার হত্যাকারী, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী- তাদের অংশগ্রহণ? এটা কি জনগন চায়? তারা অংশ নিলেই বৈধ হবে; আর অন্য কেউ করলে হবে না- এটা তো হতে পারে না। বরং তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা। এটা মাথায় রাখতে হবে।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তো ২০০৮ সালের পর থেকে নির্বাচনে অংশ নেয় না। তারা শুধু বাণিজ্য করে নমিনেশন বেঁচে। হয়তো তারা আসবে। নমিনেশন বেঁচবে। বাণিজ্য করবে। কিছু টাকা নয়া পল্টন অফিস পাবে, কিছু টাকা গুলশান অফিস পাবে। আর মোটা অঙ্ক যাবে লল্ডনে। এই তো তাদের অংশগ্রহণ। এরপর তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে। নিজেরাই হইচই বাঁধাবে প্রত্যেকটা বুথে। এরপর বলবে, এই তো আমার ইলেকশন করতে পারলাম না। উইথড্র করলাম। তিনি বলেন, অংশগ্রহণ অংশগ্রহণ করে যারা প্রশ্ন তুলছে তাদের কাছে আমার এটাই প্রশ্ন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত উন্নয়নের পর জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। যা কিছু করেছি, সব তো জনগণের কাজে লাগছে। সবই তো জনগণ ভোগ করছে। মেট্রোরেল করতে গিয়ে আমাদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। সব জায়গায় কথা শুনতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন করে সবার প্রশংসা পাব, এটা আশা করিও না। আশা করাও ঠিক হবে না। যাদের এক সময় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা তো এখন সমালোচনা করবেই। তিনি বলেন, জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণের জন্য আছি, ১৫ বছরের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি, সেটাও দেখতে হবে। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের দ্রুত একটি পরিবর্তন আনা সহজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করে রাখে। যখনই ক্ষমতায় আসি সেগুলো নিয়ে কাজ করি। ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে গরিব মানুষ একটাও থাকবে না।
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে চলা অপপ্রচার নিয়েও প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পায় কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী বা সাধারণ মানুষ পেনশন পায় না। তাদের কথা চিন্তা করেই এটা করা হয়েছে। পেনশন স্কিমে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই স্কিমে এখন যে টাকা রাখবে পরবর্তী সময় নির্দিষ্ট বয়সসীমার পর সে টাকা পাবে। অথবা মাঝখানে কেউ তুলে নিতে চাইলে সেটাও নিতে পারবে। এটা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলার সুযোগ নেই। যারা এখন নেতিবাচক কথা বলছে তারা এক সময় এই পেনশন স্কিমে আসবে, এটা বলে রাখলাম। জনগণকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, এই টাকা অন্য কোথাও নেয়ার সুযোগ নেই। নয়-ছয় করা যাবে না। নেতিবাচক প্রচারণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশ তো ছয় ঋতুর দেশ। সবাই সবকিছু সহজে ভুলে যায়। পেনশন স্কিমটি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, এখন সেটি বাস্তবায়ন করছি। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমুখী কাজ। এটা নিয়েও সমালোচনা, নেতিবাচক প্রচারণা করছে। যারা পরশ্রীকাতর, সবসময় অন্যের দোষ খোঁজে, হতাশায় ভোগে, তারাই ভালো কাজের নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।

নিয়ে বাণিজ্য করে

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়