সংবাদ সম্মেলনে ছেলের দাবি : হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসানো হয়েছে

আগের সংবাদ

কুরবানি ঘিরে চাঙা অর্থনীতি : ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা, রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড

পরের সংবাদ

পণ্যের দাম ও বাজার সিন্ডিকেট : সংসদে তোপের মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : লাগামহীন দ্রব্যমূল্য ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কোনো কোনো সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী হওয়ার কারণেই কি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় আখ্যা দিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে সংসদে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে গেলে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতটাই ব্যর্থ। এটিকে মানুষ সিন্ডিকেটবান্ধব মন্ত্রণালয় বলে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জড়িত অভিযোগ করে মোকাব্বির বলেন, অনেকে সংসদে বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত, কিন্তু তিনি এভাবে বলতে চান না। মোকাব্বির খান বলেন, এত কিছুর পরও কেন আপনি পদত্যাগ করেন না? তিনি প্রশ্ন রাখেন, সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসেবে কি বাণিজ্যমন্ত্রীকে সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ে বসিয়েছে? তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন, কোনো পণ্যের দাম কমবে, তার পরদিনই ওই পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, পণ্যমূল্যে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছেন। যারা এই সুযোগ নিচ্ছেন, আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী তাদের ধরেন না কেন, যারা সিন্ডিকেট করে মূল্য বাড়ায়। তিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি তো জানেন, কোনো ব্যবসায়ীরা এটা করছেন। তাহলে এই ব্যবসায়ীরা কী তার ঘনিষ্ঠজন? যে কারণে তিনি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ধরতে পারছেন না?
তিনি আরো বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে, তার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট। মানুষও এটি বোঝে। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর দ্রব্যমূল্য বাড়ার দায় চাপালে হবে না। ডিমের বাজারে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে সিন্ডিকেট। হাঁস-মুরগির ডিম ইউক্রেন থেকে আসে না।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গত কয়েক মাসে সারা বিশ্বে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়ছে না। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ছিল, এখন এটা মনে হয় ১০ শতাংশ। এটা বেড়েই চলছে। মূল্যস্ফীতি মানুষের আয়টা খেয়ে ফেলছে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাবান, রুটি, মদ, কটকটি- সব ছোট হয়ে আসছে। সরকারের বাজেট বাড়ছে, মানুষের বাজেট ছোট হয়ে আসছে। মূল্যস্ফীতির একটি দুষ্টুচক্রে আবদ্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এর থেকে উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। সিন্ডিকেট আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সিন্ডিকেট শক্তিশালী। কিন্তু তারা কী সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? শামীম হায়দার বলেন, সরকারের ভেতরে যদি সিন্ডিকেট থাকে, সেটা চিহ্নিত করতে হবে।
জাপার সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কী কাজ করে? এত বড় একটি মন্ত্রণালয়। এর মন্ত্রীর যদি ডায়নামিজম না থাকে, তাহলে দাম তো বাড়বেই।
বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বারবার একটা কথা উঠে আসছে যে আমি ব্যবসায়ী, ব্যাবসায়ীরা আমার জন্য সুবিধা পাচ্ছেন। যারা এই কথাগুলো বলেছেন, তাদের উদ্দেশে একটা কথা বলি, তাদের রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা কত বছরের আমি জানি না। আমি কিন্তু রাজনীতি করি ৫৬ বছর ধরে, ৪০/৪২ বছর ধরে ব্যবসা করি। তারা বলছেন, আপনি ব্যবসায়ী, আপনি ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিচ্ছেন। একজন তো বললেন আমাকে পদত্যাগ করতে। খুব ভালো কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, তিনি দায়িত্ব নিতে চাইলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দায়িত্বটা তাকে দিতে পারেন। দাম বেড়েছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বলেছেন মানুষ কষ্টে আছে। একটা বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমাদের উপর প্রভাব ফেলেছে। সেটাও কিন্তু আমাদের হিসাবের মধ্যে আনতে হবে। সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, এ কথা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলোই এক সঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমরা চেষ্টা করি, একটা জিনিস মনে রাখা দরকার জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম সেটা হয় তো করা সম্ভব, তাতে যে সংকটটা হঠাৎ করে তৈরি হবে, আমাদের তো সেটা সইতে কষ্ট হয়। অতএব আমরা চেষ্টা করি আলোচনার মাধ্যমে, নিয়মের মাধ্যমে থেকে কাজ করতে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়