কাগজ প্রতিবেদক, রাজশাহী : আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার দুই পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কালুহাটি এলাকার মৃত হাবিল উদ্দিনের ছেলে মফিজ উদ্দিন (৭৫) ও একই এলাকার মৃত মকসেদ আলী খোরার ছেলে খেতাব আলী ঘরামি (৮০)। গতকাল শনিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন এই তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, গত শুক্রবার গভীর
রাতে নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় চারঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসআই মো. সোহাইল আহমেদের নেতৃত্বে চারঘাট থানা পুলিশের টিম ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে চারঘাট মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি মফিজ উদ্দিন ও খেতাবকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। মামলা রুজুর পর থেকে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তারা আত্মগোপনে ছিলেন।
এসপি আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে খেতাব এলাকায় কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে পরিচিত এবং ১৯৭১ সালে চারঘাট থানা ও সংলগ্ন এলাকায় গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চারঘাট থানা ও এর আশেপাশের এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে মুক্তিকামী মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই মামলার বাদী চারঘাট থানার কালুহাটি গ্রামের গোলাম হোসেনের বাবা শহীদ রওশন আলী সরকার এবং পার্শ্ববর্তী রোস্তমপুর গ্রামের কলিম উদ্দিনকে এদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আটক করে গাড়ির পেছনে বেঁধে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এর পাশাপাশি বাদী ও তাদের প্রতিবেশি অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৭টি মামলায় মোট ১৩২ জন আসামির মধ্যে ৫৩ জন মারা গেছেন। এই আসামিদের মধ্যে চারজন ছিলেন পলাতক। তাদেরই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। পলাতক বাকি দুজনের একজন মারা গেছেন। মোট ১৩২ আসামির মধ্যে বাকিরা জামিনে রয়েছেন বলেও জানান পুলিশ সুপার।