রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

আগের সংবাদ

সিসিক মেয়রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : মেয়র নয়, সেবক হিসেবে কাজ কর

পরের সংবাদ

বিতর্কিত বক্তা এবং শিরোনাম বাংলাদেশ

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ব্রিটেনে এবার সংবাদের শিরোনাম হলেন বাংলাদেশের একজন বিতর্কিত বক্তা এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী। যিনি ব্রিটেনের মূলধারার কিছু নীতিনির্ধারণী নিয়ে ইতোপূর্বে বিভিন্ন জায়গায় উগ্র বক্তব্য রেখেছেন। বাংলাদেশে ইসলামিক একটা গ্রুপের ধর্মীয় বক্তা হিসেবে তিনি পরিচিত। যিনি বলেছিলেন নবী মোহাম্মদের (স.) সমালোচকদের ‘মাথা কাটা’ উচিত। ধর্মীয় বক্তা হিসেবে অডিয়েন্স উত্তপ্ত করে তোলার তার একটা লক্ষ্য থাকতেই পারে, কিন্তু ইসলাম ধর্ম তো উগ্রতায় বিশ্বাস করে না। ইসলাম শান্তির পথেই মানুষকে আহ্বান করে। এই শান্তিময় আহ্বানেই এখন এ ধর্ম পৃথিবীতে একটা দ্রুত অগ্রসরমান ধর্ম। যেখানে শান্তির আহ্বানটা মানুষ গ্রহণ করছে, সেখানে উগ্রতা ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কি কোনো প্রয়োজন আছে? এবং এই জায়গাটায়ই তারা ইসলাম ধর্মের পক্ষে কথা বলছেন না। তিনি বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্যের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্য জনসভায়।
এই গণমাধ্যমটিই উল্লেখ করেছে, যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে শিক্ষা পাঠ্যক্রমে শিশু-কিশোরদের জন্য সংযুক্ত পদ্ধতির সমালোচনা করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি রানী এলিজাবেথের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। অথচ আব্বাসী সাহেবরা আসলে ভুলে যান, তারা যেখানে এসে বক্তৃতাবাজি করেন, এখানকার সমাজব্যবস্থায় একটা ভিন্নতা আছেই। মুসলিম কমিউনিটি এই সমাজ-সভ্যতাকে ধারণ করেই এখানে আবাস গেড়েছে। আব্বাসী সাহেবরা কি জানেন না, এই সরকারের ছায়ায়ই এখানে বইছে ইসলামেরও সুশীতল প্রবাহ। এখানে মিলিয়ন-বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে তৈরি করা হচ্ছে মসজিদ কিংবা ইসলামিক শত শত প্রতিষ্ঠান। তিনি কি জানেন না, এই যুক্তরাজ্যে এদেশের শিক্ষা কারিকুলাম মেনেই এখানকার ইসলামী স্কুলগুলোও ভালো এবং মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি করছে।
এই দেশের মুসলিম কমিউনিটি তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ইস্যু জনসম্মুখে নিয়ে আসে, সরকারের গোচরীভূত করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের দাবি-দাওয়া এই গণতান্ত্রিক সমাজে সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্বও দিয়ে থাকে। যে শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনি ব্রিটেনের মতো দেশের সমালোচনা করলেন, তিনি কিং বার্মিংহাম কিংবা লন্ডনে এসে এই উষ্ণ আবহাওয়ায় রাস্তায় চোখ বন্ধ করে হাঁটছিলেন, না-কি দাবি তুলেছিলেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম মেয়েদের বোরকা পরে যাতায়াত বাধ্যতামূলক করতে হবে? আর তিনি বা কে- এসব প্রশ্ন তুলে যুক্তরাজ্যের বাঙালি কিংবা গোটা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার। আব্বাসী সাহেবের অনুসারীদের প্রায় সবারই ছেলে-মেয়ে সরকারের প্রণিত শিক্ষাব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে এবং এটা এখন এদেশ কিংবা তাদের সমাজের জন্য অপরিহার্যও বটে।
যে নাইন ইলেভেনকে সারা পৃথিবীর অগণিত মানুষ ধিক্কার দিচ্ছে, মানবতাবাদী মানুষ এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে মানবিক প্রতিবাদ করেছে, সেখানে আব্বাসী সাহেব টুইন টাওয়ারসহ আমেরিকায় বোমা হামলাকারী সন্ত্রাসীদের প্রশংসা করে ‘সাহসী সিংহ’ বলে সম্বোধন করেছেন। এরকম উগ্র ধ্যান-ধারণা ছড়ানোর জন্যই হয়তো ব্রিটেনের একটা গণমাধ্যম (জিবিনিউজ) তাকে একজন অসুস্থ (সিক) মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই এরকম বক্তাদের ব্রিটেনে কোনোভাবেই তাদের সমাজব্যবস্থায় ওয়েলকাম করতে পারে না। আর সে জন্যই প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এই স্বঘোষিত উগ্র মানুষ এদেশে আসার অনুমতি পান। এ প্রশ্ন গণমাধ্যম তুলেছে, তুলেছেন ব্রিটেনের আরেক সাবেক নেতা নাইজেল ফারাজ, যিনি ব্রেক্সিটের সময় ছিলেন খুবই আলোচিত। আর তাই এর একটা সমাধান হয়তো হয়েই যাবে। এছাড়া কমিউনিটিতেও এ নিয়ে আছে এক রকমের অস্থিরতা। সে কারণেই বার্মিংহামের যে অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন, সে অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে শুরু হয় পুলিশি উপস্থিতির কারণে। সেজন্য অনেক শ্রোতাই হল ত্যাগ করেন। অন্যদিকে ২২ জুন লন্ডনের অনুষ্ঠানটিতে স্থানীয় প্রশাসন (নিউহাম কাউন্সিল) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ইতোপূর্বে ইসলামী বক্তা হিসেবে সারা বিশ্বেই পরিচিত ভারতীয় নাগরিক জাকির নায়েককে ২০১০ সালে ব্রিটেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে এ আদেশ দিয়েছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশি বক্তা (যদিও তিনি বাংলাদেশে থাকেন না) মিজানুর রহমান আজহারীকেও গত দুই বছর আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু আব্বাসী সাহেব যে চিহ্নটা আমাদের জন্য রেখে যাচ্ছেন, তা আদৌ আমাদের জন্য কোনো ভালো দিক নয়। এমনিতেই উগ্রতা নিয়ে মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনাম হয় মুসলিম কমিউনিটি, এর মাঝে অযাচিত এ ব্যাপারটা সামনে এসেছে। তা-ও এ বিষয়টা নিয়ে এসেছে বাংলা একটা গণমাধ্যম। আইঅন টিভির একটা অনুষ্ঠানে আব্বাসী সাহেব এসেছেন এবং এ কারণেই এ বিষয়টা হয়তো জনসম্মুখে এসেছে এবং এ খবরটা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। একটা টিভি চ্যানেল কিংবা গণমাধ্যমে কিংবা গণমাধ্যম আয়োজিত সভায় ইসলামি মূল্যবোধ নিয়ে কথা বলা কোনো অসঙ্গতির ব্যাপার নয়। কিন্তু যখন উগ্র হিসেবে চিহ্নিত কেউ এই গণমাধ্যমের হয়ে কথা বলেন তখন কিন্তু গণমাধ্যমটাও চিহ্নিত হয়ে যায়।
গণমাধ্যম এই ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এখনো একটা প্রজন্মের মুখপত্র হিসেবে এই গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো যে কোনোভাবেই হোক উগ্রতায় স্পর্শ করলে এটা আর জনগণের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিতও নয়। এমনিতেই ব্রিটেনের টিভি চ্যানেলগুলো নিয়ে মানুষের কিছু সমালোচনা আছে। এই টিভি চ্যানেলগুলোকে মানুষ বলে অনুদান তোলার বাক্স। এখন যদি উগ্র মানুষগুলোর উর্বর জায়গা হয়ে উঠে এই গণমাধ্যম, অর্থাৎ এই মাধ্যমগুলোর এক দুটো যদি বিভ্রান্তিমূলক ওয়াজ কিংবা বক্তৃতা দিয়ে বাঙালি কমিউনিটিতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যম হতে থাকে, তাহলে এ প্রশ্ন তখন আর শুধু বাংলাদেশি মানুষের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, রাষ্ট্র তখন হয়তো এই গণমাধ্যমগুলোকে চিহ্নিত করতে থাকবে। যা বাঙালি কমিউনিটির জন্য একটা সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতেই পারে।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়